মিডিয়ার ব্যবহার এবং শিশুর ঘুম

ছবি  উৎসঃ JAMA Pediatrics December 2016

ছবি উৎসঃ JAMA Pediatrics December 2016

 

মনে পড়ে কি আজিকার শিশু কবিতায় বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছিলেন,

                      আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা

                    তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা

                    আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি

                   তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।

                      উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা

             আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।

 

আমাদের আজকালকার বাচ্চারা খুব স্মার্ট। অল্প বয়সেই তাদের পরিচয় ঘটে যায় টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্ট ফোন ইত্যাদির সাথে। ওরা বোধহয় আমাদের সময়কার ওই বয়সটাতে আমাদের  চেয়েও অনেক বেশী এগিয়ে আছে। আর প্রায় চব্বিশটা ঘন্টা ওরা এগুলোর সংস্পর্শে থাকে। সমস্যা সেখানে নয়, সমস্যা স্মার্টনেসে নয়। সমস্যা অন্যখানে; ঘুমের।
ক্রমে ক্রমে এই মিডিয়ার ব্যবহার শিশুদের ঘুমের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করছে। ঘুমানোর পূর্বে যদি ট্যাব কিংবা স্মার্ট/মোবাইল ফোন শিশু ব্যবহার করে তাহলে তাদের ঘুমাতে দেরী হয়; ঘুম থেকে জাগে দেরীতে; ঘুম ঘুম রেশ কাটতে চায়না। দিনের ঘুমের বরাদ্দ সময়েও দেখা দেয় ঘাটতি। নিশি জাগরণের ফল গিয়ে দাঁড়ায় দিবা নিদ্রায়। ফলাফল স্কুলের পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি আর পরিণতি খারাপ রেজাল্ট। নিয়মিত আর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা গেলে দেখা গিয়েছে যে  শিশুর মনোযোগ, আচরণ, স্মৃতিশক্তি, জীবনযাত্রার মান, মানসিক ও শারীরিক সুস্থ্যতা সুনিশ্চিত থাকে। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশু-কিশোরদের জন্য দিনে গড়ে ৯ থেকে ১২ ঘন্টা আর ১৩ থেকে ১৮ বছরের টিনেজারদের প্রয়োজন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টার ঘুম।  ১,২৫,১৯৮ জন শিশু-কিশোর এর উপর চালানো ২০ টি গবেষণার উপর পর্যালোচনা করে মিডিয়ার ব্যবহারের সাথে ঘুমের সম্পর্কের বেশ কিছু দিক উঠে এসেছে।

যে সকল বিষয় এই গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে তা হলোঃ

 

 ঘুমের জন্য বরাদ্দ সময় হ্রাস

ঘুমের শুরুর সময়ে মিডিয়ার ব্যবহারের সাথে ঘুমের সময় হ্রাসের একটা অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। যত বেশী সময় মিডিয়ার পিছনে ব্যয় হচ্ছে তত কমে আসছে ঘুমানোর সময়। দেখা গিয়েছে যে, যারা ঘুমানোর পূর্বে মিডিয়া ব্যবহার করছে তাদের তুলনায় যারা ব্যবহার করছে না তাদের চেয়ে ঘুমানোর সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

 

ঘুমের মানের অবনমন

ঘুমানোর পূর্বে মিডিয়ার ব্যবহারের ফলে ঘুমের গুণগত মানও হ্রাস পায়; অর্থ্যাৎ যাকে বলে Sound Sleep, সেটার ঘাটতি হয়।

 

অতিরিক্ত মাত্রায় দিবানিদ্রালুতা

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ঘুমানোর পূর্বে মিডিয়ার ব্যবহার এমনকি তা ব্যবহারের সুযোগ থাকাটাও দিবানিদ্রালুতার অন্যতম কারণ। এ সকল শিশু-কিশোররা দিনের বেশীরবাগ সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স এই গবেষণার ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ করেছে।

 

  • ঘুমানোর সময় বেডরুমে কোন প্রকার মিডিয়া ডিভাইস যথা টিভি, কম্পিউটার, ট্যাবলেট কিংবা স্মার্ট ফোন ইত্যাদি না রাখা।
  • ঘুমানোর অন্ততঃ একঘন্টা আগে থেকেই মিডিয়ার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
  • পরিবারের জন্য অন্ততঃ টিভি দেখা, কম্পিউটার ব্যবহার কিংবা স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে রুটিন তৈরি করে নেওয়া। পাশাপাশি শিশুদের হোমওয়ার্কের জন্য, শারীরিক কসরত/খেলাধুলার জন্য সময় বরাদ্দ করা ও উৎসাহিত করা যেতে পারে।
  • খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার শিশুটি যেন আপনার কাছ থেকে যথাযথ আদর পায়, যোগাযোগ বজায় রাখে; যন্ত্রতে যেন আসক্ত না হয়ে পড়ে। ওদেরকে ট্যাব কিনে ঘরে বসিয়ে না রেখে বরং সাথে করে পার্ক থেকে ঘুরিয়ে আনুন, মাঠে খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন।

 


স্ক্রিপ্ট তৈরিঃ শুভ্র প্রকাশ পাল 

উৎসঃ JAMA Pediatrics December 2016

 

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিএম-২৯ শিক্ষার্থীদের তৈরি নাটক "নৈঋত"

Wed Feb 22 , 2017
      আমাদের চারপাশে মূল দিকগুলো হচ্ছে চারটি। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম। কিন্তু বেহেশতের দিক দশটি। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, অগ্নি, বায়ু, ঈশান, নৈঋত, উদ্ধ ও অধ। তন্মধ্যে নৈঋত সবথেকে শক্তিশালী।   মানুষের জীবনের লক্ষ্য অর্থাৎ দিক যদি শক্তিশালী হয় তাহলে সেই লক্ষ্য অবশ্যই অর্জন হবে। বাংলাদেশ মেডিকেলের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo