ব্রেস্ট ক্যান্সার ও আমাদের করণীয়

ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক বেড়েছে। আগে ৪০ এর কমবয়সি রোগী বিরল ছিলেন, আর আজ ১৭ বছরের বালিকাও এই রোগের করুণ শিকার হয়। ২০-৩০ বছর বয়সের মাঝে আমরা ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগী অনেক পাই।

কেন বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার?

১. সম্ভবত প্রথমেই দায়ী করা যায় জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল, ইনজেকশন, চামড়ার পিল ইত্যাদি কে। এগুলোর মাঝে থাকে ইষ্ট্রোজেন হরমোন যা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তবে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। 

২. দেশে পাশ্চাত্যের খাবারের প্রচলন হওয়া
ফাস্টফুড, জাংক ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, বাইরের ভাজা-পোড়া(এগুলোতে খারাপ চর্বি প্রচুর পরিমাণে থাকে), অতিরিক্ত রেডমিট (খাসী ও গরুর মাংস), পাঙ্গাস মাছ, তেলাপিয়া মাছ, তৈলাক্ত-চর্বি জাতীয় খাবার, রান্নাতে বেশি তেল, সাদা চিনি, ময়দা জাতীয় খাবার ইত্যাদি। 

৩. মোটা মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। শরীরের মেদে ইষ্ট্রোজেন হরমোন এসট্রাডিওল নামে লুকিয়ে থাকে এবং সময়মত ছোবল মারে।

৪. বইপত্র অনুযায়ী, মাসিক অল্প বয়সে আরম্ভ হয়ে অনেক বয়স পর্যন্ত চললে, ১ম সন্তান বেশি বয়সে জন্মালে, সন্তান না থাকলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চান্স বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ রোগীই অনেক ছেলে-মেয়ের মা, অল্প বয়সে বিয়ে ও সন্তান হয়েছে।কাজেই এই থিওরি এখানে মেলেনা। তবে নিঃসন্তান, যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান নি, তারা একটু বাড়তি সচেতন থাকবেন।

৫. মা-খালা-নানী-দাদী-ফুপু-কাজিনদের ব্রেস্ট বা ওভারির ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে রিস্ক একটু বেড়ে যায়।

৬. বিড়ি/সিগারেট খাওয়া

৭. মদ্যপান 

৮. স্ট্রেসফুল লাইফ

৯. কিশোরীবেলায় কোন কারণে রেডিওথেরাপি পেলে, যেমন হজকিন্স লিম্ফোমার চিকিৎসার জন্য।

বিঃদ্রঃ রোগ প্রতিহত করতে চাইলে কারণ জানতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ: 
১. সবচেয়ে বড় সমস্যা এই যে, সবাই ব্যথাকে গুরুত্ব দেন, ব্যথা হলে ছুটে আসেন। ব্যথা ছাড়া কোন চাকা থাকলে তা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা হয়না। অথচ ৯৫% মানুষের কাছে এই ক্যান্সার আসে ব্যথাবিহীন অবস্হায়।

২. ব্রেস্টে চাকা অনুভূত হলে, তাতে ব্যথা থাকুক আর না থাকুক।

৩. বগলে কোন চাকা অনুভূত হলে, ব্যথা থাক বা না থাক।

৪. নিপল(বোঁটা) থেকে আপনা আপনি কিছু বের হলে।

৫. নিপল ভিতরে ঢুকতে শুরু করলে।

৬. নিপল ও তার চারিপাশের কালো স্হানে ঘা দেখা দিলে।

এগুলো প্রাথমিক সিম্পটম,আরো অনেক সিম্পটমস আছে।

এগুলোর ১ টি লক্ষণ ও যদি দেখেন, সাথে সাথে ভাল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করবেন। তবে এই লক্ষণগুলো আরও অনেক কারণে হতে পারে। চিকিৎসক মূল কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা দিবেন। 
প্রাথমিক অবস্হায় চিকিৎসা করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্হ হয়ে যান।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয় সমূহ:

১. সপ্তাহে ১ দিন নিজের ব্রেস্ট ও বগল পরীক্ষা করুন।

২. পিরিওড শুরু হওয়ার ৭ দিন পরে একবার ব্রেস্ট ও বগল চেক করুন।

৩. ৬ মাসে ১ বার বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চেক আপ করুন।

৪. ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা বছরে ১ বার ম্যামোগ্রাম, ৪০ এর নিচে বয়স হলে বছরে ১ বার আলট্রাসনোগ্রাম করুন।

৫. ক্ষতিকর খাবার বাদ দিয়ে ভাত, রুটি, শাকসবজি, ফল, দুধ, ডিম, অন্যান্য স্বাস্হ্যসম্মত খাবার পরিমাণ মতো খান। লাল চালের ভাত,লাল আটার রুটি, দানাদার শস্যফল যেমন ভুট্টা, ওটস্, আপেল, পেয়ারা, ডালিম, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, বিভিন্ন মাছ বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ, যেমন আইড়, শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, দুধ পরিমাণমতো খান।

৬. ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড, কোল্ড ড্রিংকস (কোক,পেপসি জাতীয় পানীয়), আর্টিফিসিয়াল জ্যুস (প্রাণ, সেজান,ফ্রুটিকা,ড্যানিশ ইত্যাদি), বাইরের তেলেভাজা, চিপস, চানাচুর,বেশি গরুর মাংস (তেল-চর্বি ছাড়া, মাসে খুব বেশি হলে ৩/৪ বার খাবেন), খাসীর মাংস, শূকরের মাংস, তেলাপিয়া, পাঙাস, বড় চিংড়ি, ময়লা পানিতে চাষ করা মাছ, সাদা চিনি পারতপক্ষে খাবেন না। লবণ ও তেল পরিমিত খাবেন।একদিনের ব্যবহার করা তেল পরের দিন খাবেন না।

৭. জন্মনিয়ন্ত্রনের জন্য স্বামী পদ্ধতি গ্রহণ করলে ভাল হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য পিল, বড়ি, চামড়ার সুঁই, চামড়ার পিল, কপার টি ব্যবহার না করাটাই উচিৎ। স্বামী কনডম ব্যবহার করবেন এবং পরিবার কমপ্লিট হয়ে গেলে স্বামী বা স্ত্রী স্হায়ী বন্ধ্যাত্বকরণ করতে পারেন নতুবা স্বামী কনডম ব্যবহার করতে পারেন।

৮. মেদমুক্ত থাকুন, নিয়মিত হাঁটাচলা করুন, যে যত শুয়ে বসে সময় পার করে, হাঁটাচলা কম করে, তার ক্যান্সারের চান্স বেড়ে যায়।

৯.মেয়ে শিশুকে আড়াই বছর, ছেলে শিশুকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান।

১০. ধূমপান করবেন না।

১১. মদ্যপান করবেন না।

কারণ ও লক্ষণ জানা থাকলে ও সেই অনুযায়ী কাজ করলে ব্রেস্ট অর্থাৎ স্তন ক্যান্সার কিছুটা হলেও প্রতিহত করা সম্ভব। অথবা খুব প্রাথমিক পর্যায়ে নিজের রোগ নিজেই সনাক্ত করা সম্ভব যা খুব জরুরি। 

দয়া করে কারণ, লক্ষণগুলি বারবার পড়ুন, বুঝুন, নিয়মগুলি মেনে চলুন। ক্যান্সার যদি হয়েই যায়, এতোটুকু বিচলিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় অবিলম্বে সার্জারি আউটডোরগুলোতে যোগাযোগ করুন। আগে অপারেশন, পরে কেমোথেরাপি -হরমোন থেরাপি -রেডিওথেরাপি লাগতে পারে, বা আগে থেরাপি, পরে অপারেশন লাগতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যথাসময়ে সবকিছু সম্পন্ন করবেন।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে
ভীতি নয়,দরকার সচেতনতা ও সাহস।

লেখক: নাহিদ ফারজানা

স্টাফ রিপোর্টার/তামান্না ইসলাম

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন ৩ বিজ্ঞানী

Tue Oct 8 , 2019
২০১৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য ৩ জনের নাম ঘোষণা করেছে সুইডিশ নোবেল কমিটি। তারা হলেন মার্কিন চিকিৎসাবিদ উইলিয়াম কাইলিন জুনিয়র ও গ্রেগ এল সেমেনজা এবং ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ স্যার পিটার র‍্যাডক্লিফ। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কারে এটি ১১০ তম পুরস্কার। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কোষ কিভাবে সাড়া দেয় এবং […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo