দাঁতের যত্নে টুথপেস্ট এর ভূমিকা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০,বুধবার

“দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝো” এ কথাটা আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি। একটা সময় ছিল যখন মানুষ কয়লা, পোড়া মাটি, বিভিন্ন গাছের ডাল ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতো। সময়ের বিবর্তনে আজ সেই স্থান দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন নামি দামি কোম্পানির টুথপেস্ট। বর্তমান সময়ে শহর থেকে শুরু করে একদম রুট লেভেল পর্যন্ত সবাই ব্রাশ এবং টুথপেস্ট ব্যবহার করে। টেলিভিশনের দৌলতে আমাদের নানা রকমের টুথপেস্টের সঙ্গেই পরিচয় রয়েছে। কিন্তু আমরা যে টুথপেস্ট ব্যবহার করছি সেটা আসলে কি দিয়ে তৈরি? সেটা দাঁত পরিষ্কার করতে সক্ষম কি না? সেটা সঠিক মানের কি না? কতটা নিরাপদ? এমন হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানাবো বাংলাদেশের স্বনামধন্য দন্ত বিশেষজ্ঞদের দাঁত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

দাঁত সম্পর্কে কথা বললে প্রথমেই আসে টুথপেস্ট এর কথা।

টুথপেস্ট কি এবং কিভাবে কাজ করেঃ
মূলত দাঁত পরিষ্কার এর ক্ষেত্রে টুথপেস্ট ভূমিকা পালন করে। যেমনঃ দাঁতে লেগে থাকা প্লাক (খাদ্যকণা) কিংবা স্টেইন(দাগ) এ ধরণের জিনিস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। উপরোক্ত কারণ ছাড়াও পেস্ট যে ফেনা উৎপন্ন করে তা ব্রাশিংয়ে সুবিধা করে। অর্থাৎ স্বাচ্ছন্দে ব্রাশ করতে দেয় এবং বলা যায় মুখের পরিবেশকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। এছাড়া ফেনা উৎপাদিত হওয়ার কারণে এনামেল এর ক্ষতি হয় না শক্ত ব্রিসল এর ব্রাশ এর ঘর্ষণের কারণে যেটা হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া হেলিটোসিস দূর করতে টুথপেস্ট তথা ডেন্টিফ্রিস সাহায্য করে।

টুথপেস্টের উপাদান ও তার উপকারীতাঃ
১. টুথপেস্টের ফোমিং এজেন্ট দাঁতের এনামেল এর ক্ষয়রোধ করে। সরাসরি দাঁতে ব্রাশ ইউজ করলে কিংবা ছাই দিয়ে দাঁত মাজলে এনামেল এর উপরে ক্ষয় তৈরি হয়।
২. টুথপেস্ট এর মধ্যে কিছু ফ্লেভারিং এজেন্ট থাকে। যা মুখের দুর্গন্ধ তথা হেলিটোসিস দূর করতে সাহায্য করে।
৩. কিছু কিছু পেস্ট এর মধ্যে ফ্লোরাইড কনটেন্ট থাকে যা ক্যারিজ প্রিভেনশন এর সাহায্য করে ।
৪. আবার কিছু পেস্টে এন্টি প্লাক এজেন্ট থাকে যা মুখে খাবার জমতে দেয় না।

আমরা যেই পেস্ট গুলো ব্যবহার করি বেশির ভাগ পেস্টে ট্রাইক্লোসান থাকে এটার গলনাংক ৫৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর কাছাকাছি। বিভিন্ন স্ট্যাডিতে একে কারসিনোজেনিক বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে অল্প অল্প পেটে গিয়ে ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্সি এগ্রাভেট করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ট্রাইক্লোসান ডিটারজেন্ট ও রান্নাঘরে ব্যবহৃত সাবানেও থাকে কিন্তু ওইগুলো আমরা মুখে নেই না। যেহেতু প্রায় সব ভাল ব্রান্ডের পেস্টেই এটা পাওয়া গেছে আর আমাদের সামনে কোন বিকল্পও নাই। তাই সতর্কতার সাথে ব্রাশ করাই শ্রেয় যাতে পেটে না চলে যায়। পেটে না গেলে কার্সিনোজেনিক নয়। বাচ্চাদের মানে ডেসিডুয়াস ও বড়দের মানে পারমানেন্ট দাঁতের গঠন একটু আলাদা হয়। তাই অনেক সময় বড়দের পেস্ট বাচ্চাদের দিতে বারন করা হয়।

কারণঃ                                                              ১। ট্রাইক্লোসান পেটে গেলে সমস্যা। আর বাচ্চারা খুব সহজেই পেস্ট খেয়ে ফেলে। এছাড়া পেস্টে আরো যে সকল ইনগ্রিডেন্ট রয়েছে সেগুলোও পেটে গেলে টক্সিসিটি করতে পারে(স্লো পয়জনিং)।

২। বাজারের প্রায় সকল পেস্টে ফ্লুরাইড থাকে ১০০০ppm। ফ্লুরাইডের এই লেভেল বড়দের জন্য। বাচ্চাদের জন্য ফ্লুরাইড লেভেল ০ থেকে ৫৫০ ppm। কাজেই বড়দের পেস্ট যদি বাচ্চারা খেয়ে ফেলে ফ্লুরাইড টক্সিসিটি হবে। এছাড়াও অধিক ফ্লুরাইড ব্যবহার করলে বাচ্চাদের দাঁতে ফ্লুরোসিস নামক রোগ হয়, যেটা হলে দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং হুয়াইট স্পট পড়ে।
৩। থাইরয়েড হরমোন এর জন্য আয়োডিন দরকার হয় অপর দিকে ফ্লুরাইড এবং আয়োডিন একই হ্যালজেন গ্রুপের মৌল। বডিতে অধিক ফ্লুরাইড থাকলে থাইরয়েড হরমোন এ সমস্যা দেখা দিতে পারে(যদিও এটা প্রমাণিত হয় নি কিন্তু গবেষণা চলছে)। সব কিছু মিলিয়ে বাচ্চাদের এই সকল পেস্ট বারণ করা হয় এবং বেবি পেস্ট এ ফ্লুরাইড এবং ট্রাইক্লোসান এভয়েড করা হয়।

আমাদের ব্যবহৃত টুথপেস্ট সম্পর্কে জেনে নেইঃ টুথপেস্ট ব্যবহার করলেও কখনও কি টুথপেস্ট টিউবের নিচের অংশে কিউব আকৃতির রঙিন চৌকো অংশটি খেয়াল করেছেন? টুথপেস্ট অনুসারে বিভিন্ন হয়ে থাকে এই রং। আমাদের কারো লাল, নীল, সবুজ, কালো রঙের এই ছোট্ট বাক্সটিকে নিয়ে হয়তো কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এগুলির পিছনেও রয়েছে একটি কারণ।

চলুন জেনে নেই কি লুকায়িত আছে এই রং এর মধ্যে-
সবুজ: যে সমস্ত পেস্ট তৈরিতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তার জন্য সবুজ রংয়ের কিউব দেওয়া থাকে।
নীল: এই টুথপেস্ট তৈরি করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহার করা হয়৷
লাল: এই টুথপেস্ট তৈরি করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ও কিছু রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়।
কালো: এই টুথপেস্ট তৈরি করতে শুধুমাত্র রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়৷
আপনার ব্যবহৃত টুথপেস্টের চৌকো বক্সটি কোন রংয়ের মিলিয়ে নিতে পারেন উপরের তথ্য দেখে৷

সাধারণ মানুষ কিভাবে টুথপেস্ট বাছাই করবে?
বিভিন্ন উপাদান থাকে টুথপেস্টের ভিতরে৷ কোনটা প্লাক দুর করে৷ কোনটা দাগ দুর করে৷ কোনটা জিনজিভা ভালো রাখে৷ ব্রান্ড ভেদে উপাদানের ভিন্নতা হয়৷ তাই একজন সুস্থ মানুষের একই পেস্ট বেশিদিন ব্যাবহার না করে ভিন্ন ভিন্ন ব্রান্ডের পেষ্ট ব্যবহার করা উচিত৷ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণের জন্য পরামর্শ দেন, কোন বিশেষ ব্র‍্যান্ড এর কোন বিশেষ পেস্ট বেশি সময় ব্যবহার না করা। একটা পেস্ট শেষ হলে অন্য ব্র‍্যান্ড এর টা ব্যবহার করা এতে করে কোন একটা বিষয় ইনগ্রিডেন্ট দ্বারা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম থাকে।

যাদের দাঁতে সমস্যা আছে তারা ডেন্টিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী পেস্ট ব্যবহার করবে। আর মেডিকেটেড পেস্ট গুলো দাঁতের কোন বিশেষ সমস্যার জন্যই তৈরি করা হয়েছে এতে থাকে সোডিয়াম ফ্লোরাইড, পটাশিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি যেগুলো সেনসিটিভিটি রোধ করে৷ যাদের দরকার তাদেরই শুধু এগুলো ব্যবহার করা উচিত ৷
এগুলো ডেন্টিস্টরা পেশেন্ট এর সমস্যা অনুযায়ী প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। (যেমনঃ একজন ডায়াবেটিস আছে এমন পেশেন্টকে ডেন্টিস্টরা সুগার ফ্রি মেডিকেটেড পেস্ট সাজেস্ট করে থাকেন)। বাজারের প্রায় সকল নন মেডিকেটেড এবং কিছু মেডিকেটেড পেস্ট এ সুগার থাকে।
অনেকের দাঁতেই সিরসির ভাব বেশি থাকে তাদের মিন্ট উপাদান বর্হিভূত পেস্ট ব্যবহার করা উচিত। কেননা মিন্ট আরো সিরসিরানি বাড়িয়ে দেয়। অনেক ডেন্টিস্ট এর মতে যেকোনো পেস্ট থেকে পরিপূর্ণ উপকার পেতে টুথপেস্ট আগে আঙ্গুলে নিয়ে সব দাঁতে ভালো করে লাগিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ড অপেক্ষা করা। তারপর ভালো নরম ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করা। চারকোল মিশ্রিত টুথপেস্ট ইদানিং অনেক ব্রান্ডই বাজারে এনেছে। চারকোল ভালো দাগ উঠায়। আর এগুলো অল্টারনেটিভ করে ব্যবহার করা দাঁতের জন্য ফলপ্রসূ।

শুধু কি টুথপেস্টেই দাঁতের যত্নে ভূমিকা রাখে? নাকি টুথব্রাশও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে দন্ত বিশেষজ্ঞরা বলেনঃ
টুথপেস্ট এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল টুথব্রাশ টেকনিক। আমাদের সঠিক নিয়মানুযায়ী ব্রাশ করতে হবে এবং ভাল মানের নরম ব্রিশলের ব্রাশ ইউজ করতে হবে। শক্ত ব্রিশলের ব্রাশ দীর্ঘ দিন ব্যবহারে এনামেল ক্ষয়ে যায়। আর নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে খাওয়ার পর ব্রাশ করতে হবে।

 

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ভেজাল ঔষধে বাজার সয়লাব

Wed Sep 30 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার ভেজাল ও নকল ঔষধ অসংখ্য মানুষের প্রাণনাশের কারণ হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু ঔষধই ভুয়া নয়, আছে ভুয়া কোম্পানিও যাদের মাধ্যমে নকল ঔষধ ছড়িয়ে পড়ছে হাট বাজার সহ ঔষধের দোকানেও। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও বাজার থেকে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo