দাঁতের মত সংবেদনশীল চিকিৎসায় হাতুড়ে ডাক্তারদের জন্য রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুদৃশ্য চেম্বার। আছে সাইনবোর্ড। তাতে হরেক রকম ডিগ্রি এবং তা দাঁতের ওপর। এদের অনেকে দাঁতের সমস্যায় কোনো চিকিৎসা না দিলেও শুধু ওষুধের পরামর্শপত্র লিখে দেওয়ার জন্য রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট নিচ্ছেন ২৫০-৩০০ টাকা। আর দাঁতের সামান্য কাজের জন্য নেন হাজার হাজার টাকা। কিন্তু এই চিকিৎসকদের বেশিরভাগই ভুয়া। দন্ত চিকিৎসায় নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা। মাধ্যমিক পাস করেছেন মানবিক বিভাগ থেকে। রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরনের হাজার হাজার ভুয়া ‘দন্ত চিকিৎসক’ আছেন বলে আশঙ্কা করছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে জড়িতরা।বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি  (বিডিএস) ডিগ্রির সনদ না থাকলেও অনিবন্ধিত এ চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আর এর মধ্য দিয়ে তারা শুধু রোগীর সঙ্গে প্রতারণাই করছেন না একইসঙ্গে দাঁতের চিকিৎসার মতো সংবেদনশীল চিকিৎসা যথাযথভাবে না করে রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।দেশে বর্তমানে রেজিস্টার্ডকৃত দন্ত চিকিৎসকের সংখ্যা সাত হাজার। কিন্তু এর বাইরে অনিবন্ধিত আরও বহু সংখ্যক ভুয়া চিকিৎসক এখন রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন। সাধারণত এমবিবিএস কোর্সের মতো চার বছরের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ও এক বছরের ইন্টার্নি সম্পন্ন হলে বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে একজনকে দাঁতের চিকিৎসা করতে হয়। এর মধ্যে টেকনেশিয়ানরা বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের তাদের কাজে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই রোগীকে পরামর্শপত্রে ওষুধ দেওয়া বা নিজে স্বাধীনভাবে দাঁতের চিকিৎসা করতে পারেন না। কিন্তু এসব টেকনিশিয়ান তথা চিকিৎসকের সাহায্যকারীরা কিছুদিন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করে নিজেই এখন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে চেম্বার খুলে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। র‌্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, জেল-জরিমানার পরও অনেকে কারগার থেকে বের হয়ে নাম ও ঠিকানা বদলে আবার নতুন করে প্রতারণা শুরু করে। এসব চিকিৎসকের অনেকে ‘বাংলাদেশ কম্বাইন্ড মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিসিএমডিসি) এবং ‘ন্যাশনাল মেডিকেল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ (এনএমএ) নামের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া সনদ নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিসিএমডিসির তথ্য মতে, তাদের সনদধারী প্রায় ১২ হাজার ‘দন্ত চিকিৎসক’ রয়েছেন। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা শাস্ত্রে সনদ ও নিবন্ধনপত্র দিতে পারে না। র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আর দাঁতের চিকিৎসার মতো উচ্চমূল্যের খরচ কম খরচে করার আশায় এসব ভুয়া ‘দন্ত চিকিৎসকদের’ রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারা রোগীদের প্রতারিত করছেন। এমনকি দাঁতের চিকিৎসার মতো সংবেদনশীল চিকিৎসায় এ ভুয়া চিকিৎসকরা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন তা স্ট্যরিলাইজেশন বা জীবাণুমুক্ত করণের ব্যবস্থা না নিয়েই চিকিৎসা করছেন। ফলে রোগীর জীবাণুসংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে রোগীদের রক্তবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন- জন্ডিস (হেপাটাইটিস-বি সি), ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইডস ইত্যাদি রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে প্রতি ১২ জনে ১ জন হেপাটাইটিস জীবাণুতে আক্রান্ত। আর এর অন্যতম কারণ ভুয়া দন্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসা। সাধারণত বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ব্যক্তিগত চেম্বারে এ ভুয়া চিকিৎসকরা নিজেদের কার্যক্রম চালান। র‌্যাব এ রকম প্রায় ৫ শতাধিক ভুয়া দন্ত চিকিৎসকের খোঁজ পেয়েছে। আর এজন্য অভিযান পরিচালনা করতে তদারকি দল গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সাধারণত ভুয়া চিকিৎসকদের ব্যাপারে সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বা কোনো রোগী আদালতকে অবগত করার পর সেখানে অভিযান চালানো হয়। আর এ অভিযানে থাকেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদফতর ও বিএমডিসির প্রতিনিধিরা।

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শামসুন্নাহার হলে মধ্যরাতে নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত!

Sun Sep 21 , 2014
এক নারী চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে হল থেকে বের করে দিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নিশিতা ইকবাল নদী ও তার অনুসারীরা। লাঞ্ছিত চিকিৎসকের নাম রুমি পারভিন। তিনি গত ৪ঠা আগস্ট শামসুন্নাহার হলের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। খণ্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি ওই হলের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo