“আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ জুলাই ২০২০, শুক্রবার।

ডা. তারিকুল ইসলাম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কে-৪৬
সেশন ৮৮-৮৯

মার্চের মাঝামাঝি। করোনার প্রাদুর্ভাব তখন শুরু হয়েছে।
এক রাতে চশমাটা পায়ের নিচে পড়ে ভেঙে গেল। চশমা ছাড়া আমার কর্মকাণ্ড প্রায় অচল। তবুও  ভাবলাম আগে ডাক্তারের কাছে চোখ দেখিয়ে তারপর নতুন চশমার অর্ডার দিব।

তো পরদিন সন্ধ্যার পর বের হলাম বাসা থেকে। চারিদিকে শুনশান নীরবতা, কোথাও কেউ নেই টাইপের অবস্থা।

কিছুটা এগিয়ে একটা চশমার দোকান পেয়ে গেলাম। অবাক ব্যাপার! দোকানি জানালেন ডাক্তার সাহেব তখনও দোকান সংলগ্ন চেম্বারে আছেন। কি সৌভাগ্য আমার।

চেম্বারে ঢোকার আগে নিজেকে আর একটু সাজিয়ে নিলাম দোকানের আয়নায়। সাদা ফতুয়ায় কিছু পুরনো দাগ রয়েছে, চলবে। প্যান্ট-ফতুয়া দুটোই আগের দিন থেকে ব্যবহার করছি, কাজেই বেশভূষায় বেশ মলিন। চেম্বারে ঢোকার আগ মুর্হুতে টুপিটা একটু বাঁকা করে দিলাম।

তরুণ চক্ষু চিকিৎসক নিয়ম মাফিক প্রশ্ন করলেন।
নাম জিজ্ঞেস করলে নামের শুরুতে ডাক্তার বিশেষন বাদ দিয়ে নাম বললাম। পেশা জিজ্ঞেস করায় বললাম, আগারগাঁও এ একটা হাসপাতালে ছোট-খাট একটা জব করি। সচেতনভাবে অগোছালো বাংলায় বিড়বিড় করে ডাক্তার সাহেবের প্রশ্নের উত্তর দিলাম।

যন্ত্রে চোখ দেখলেন। নতুন চশমার পাওয়ার লিখে দিলেন।
প্রেসক্রিপশন হাতে পেলাম। আমার উদ্দেশ্য প্রায় সফল হয়েছে। বললাম আপনার ফি টা কোথায় দিতে হবে স্যার।
এবার ডাক্তার সাহেব হেসে ফেললেন। বললেন “স্যার আপনার এই অভিনয়ের কারণ জানতে পারি? এখন আপনার কোন হাসপাতালে পোস্টিং?”

ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লাম। অভিনয় ভালো হয়নি নিশ্চয়ই, নাহলে কিভাবে উনি বুঝে ফেললেন আমি ডাক্তার। বললাম তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি একটা শর্তে, সেটা হচ্ছে তোমার পেশাগত ফি দিতে চাই। চারিদিকে এত শুনশান অবস্থায় তুমি চেম্বার করছো, মানুষ জন নাই তবুও তো কাজ করে যাচ্ছো, কাজেই ফি নিতেই হবে। আর অভিনয় করেছি যেন বুঝতে না পারো আমি ডাক্তার, নাহলে তো আর ভিজিট নিবা না।

আমিও এবার  প্রশ্ন করলাম তুমি কিভাবে বুঝলা আমি ডাক্তার?
উত্তর দিলো, “ঐ যে বললেন হাসপাতালে ছোট খাট জব করি, তখনই বুঝে ফেলেছি”। অবাক হয়ে বললাম, “ব্যাস এতেই বুঝে গেলা আমি ডাক্তার?”

স্মৃতি রোমন্থন করার ভঙ্গিমায় তরুণ চিকিৎসক বললেন, “এর পেছনে একটা গল্প আছে। ২০০৯ সালের মার্চ মাসের তিন তারিখ, সম্ভবত সোমবার। তখন আমি ঢাকায় বি.এস.এম.এম.ইউ. তে কোর্সে ছিলাম। আমার স্ত্রী রুমা থাকতেন তার বাবা মার সাথে সিলেট দরগা মহল্লায়। তার আগের রাতে সে ফোনে বললো ভীষণ অসুস্থ বোধ করছেন। আমি রাতের বাসে রওনা হয়ে ভোরে সিলেট নামলাম।

রুমার অবস্থা ততক্ষণে আরও খারাপ হয়েছে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ আমার এক ব্যাচমেটকে ফোন দিলাম। বললো, একটা আলট্রাসাউন্ড করে তার সাথে সকালেই দেখা করতে।
তখন সকাল আটটার মত বাজে। বাসার কাছেই সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল। এত সকালে কাউকে পাওয়া মুশকিল। তবুও রুমাকে নিয়ে ছোট্ট হাসপাতালে চলে আসলাম। তখন কেবল  হাসপাতালের স্টাফরা আসা শুরু করেছে।

রুমাকে একটা জায়গায় বসিয়ে আমি একটু এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে লাগলাম কাউকে পাওয়া যায় কিনা। হাসপাতালের পশ্চিম দিকে রেডিওলজি বিভাগ সংলগ্ন জমিতে দেখলাম দু’জন মানুষ একটা গাছ লাগাচ্ছেন। আমি কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কি এই হাসপাতালের স্টাফ? একজন কিম্ভুতকিমাকার জোব্বা পরিহিত মানুষ বললেন “জি, হ্যাঁ আমি এই হাসপাতালে ছোটো-খাট একটা জব করি। বলেন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”

এবার ডাক্তার সাহেব বললেন “এবার বুঝেছেন তো কিভাবে আপনাকে চিনতে পেরেছি?”

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ কেড়ে নিলো দেশের চিকিৎসা জগতের আরেক প্রথিতযশা নক্ষত্রের প্রাণ

Sat Jul 18 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০ করোনা মহামারীতে শহীদ হলেন আরেকজন চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন দেশের চিকিৎসা জগতের আরেক প্রথিতযশা নক্ষত্র ডা. আবুল হোসেন খান চৌধুরী। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল হোসেন খান চৌধুরী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo