“আমার মেয়েটাকে ডাক্তার বানাইস না”

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ২৮ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. আসিফ ইসতিয়াক
সহকারী সার্জন
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ

আমি ফাইনাল প্রফ পাশ করি ২০১৩ এর জানুয়ারিতে। ইন্টার্নিতে বার্ণ প্লাস্টিক ডিপার্টমেন্টে প্লেসমেন্ট তখন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে তখন সারাদেশে পলিটিক্যাল আনরেস্ট। শুরু হয়ে যায় সারা দেশব্যাপী গাড়িতে আগুন দেওয়া। তখন প্রতিদিনই প্রায় সময়ই আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের খবর আমরা দেখেছি। কিন্তু নিজ চোখে পুড়ে যাওয়া রোগী হয়তোবা আমরা খুব কম মানুষই দেখেছি। সেরকম একটা রোগী এসেছিল আমাদের মেডিকেলে ১০০% পার্সেন্ট বার্ণ নিয়ে। রোগী আসার পরে যখন ড্রেসিং করছিলাম তখন তার শরীরের কোন অংশে হাত দিতে পারছিলাম না। যেখানে হাত দিচ্ছিলাম চামড়াগুলো খুলে খুলে আসছিল। রোগীটি ‘আল্লাহ মইরা গেলাম রে, মইরা গেলাম’ বলে চিৎকার করছিল। রোগীটিকে দেখার পরে অনেক দিন আমি ঘুমাতে পারিনি ঠিকমত। ছয় মাস পর্যন্ত প্রায় সময়ই রাতে রোগীর কন্ঠ আমার কানে বেজে উঠত, আল্লাহ মইরা গেলাম রে। ধড়ফড়িয়ে  ঘুম থেকে উঠতাম। আসলে বার্ণের মৃত্যু যে কী ভয়ঙ্কর, তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু খুব কম হয়।

ডা. রাজিব ভট্টাচার্য আজ মারা গেছেন। ৮৫% বার্ণ নিয়ে ৫ দিন আইসিইউ তে ছিলেন তিনি। ডা. রাজিব দাদাকে পারসোনালি আমি চিনতাম না। কিন্তু পুড়ে যাওয়ার পর উনার মনের অবস্থা চিন্তা করে আজ আবার সেই দুঃস্বপ্নটা ফিরে এলো। একজন মানুষের যত পার্সেন্ট বার্ণ, তার সাথে রোগীর বয়স যোগ করলে রাফলি তার মৃত্যুর সম্ভাবনা বোঝা যায়। মৃত্যু যে অবশ্যম্ভাবী তা রাজিব দা যখন পুড়ে গেছেন তখনই বুঝে ফেলেছেন। তার জানা হয়ে গিয়েছিল তিনি আর বাঁচবেন না। সেই হিসেবে তার শেষ কথাটি ডেথবেড টেস্টিমেন্ট বলা যায়। উনার শেষ কথাটি ছিল তার বন্ধুকে বলা, “দোস্ত আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রাখিস, আর ওকে ডাক্তার বানাইস না।”

ছবিঃ ডাক্তার রাজীব ও তার মেয়ে

হায়রে মানব জীবন তুমি এত ছোট ক্যানে? উনি নিজে চিকিৎসক, উনার স্ত্রীও। কতটা অভিমান ছিল উনার মনে যে নিজের সন্তানকে সেই জীবনে আনার চিন্তাও করতে নিষেধ করে গিয়েছিলেন তিনি। কতটা কষ্ট আর অবহেলা আর নির্দয় আচরণ এর স্বীকার না হলে একজন তার মৃত্যুকালে এমন করে বলতে পারেন।

উনার মেয়েটাকে উনি কত ভালবাসতেন তা উনার মেয়ে চিরদিন বুঝবে কিন্তু আফসোস উনি শুধু ছবি হয়েই থাকবেন। অপূর্ণ আশা আর পূরণ হবে না। আহারে, আহারে৷

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান

Wed Jul 29 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ শে জুলাই ২০২০, বুধবার প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় গত ২৬ শে জুলাই (রবিবার) ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কেএন-৯৫ প্রোটেকটিভ মাস্ক এবং শুভেচ্ছা পত্র দেওয়া হয়। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশও আজ লড়াই করছে কোভিড-১৯ নামক ভয়াবহ এক মহামারীর বিরুদ্ধে। আর এই মহামারীতে নিজের প্রাণ বাজি রেখে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo