অ্যান্টিবায়োটিক: সম্ভাব্যতা ও সম্ভাবনা

লেখকঃ Sifat Khandoker

20110402_bbd002

*পূর্বকথা*

৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯২৮

আলেকজান্ডার ফ্লেমিং খেয়াল করলেন, তার স্ট্যাফাইলোকক্কাসের কালচার প্লেটগুলোর একটায় এক ধরনের ছত্রাক জন্মেছে। আরো খেয়াল করলেন, ছত্রাকের আশেপাশের জীবানুর টিকিটি পর্যন্ত নেই। বুঝলেন, ছত্রাক নিঃসৃত রসে এমন কিছু আছে যা এর জন্য দায়ী।

দুই সহকারীকে নিয়ে শুরু করলেন গবেষনা। আশ্চর্য ছত্রাকের নির্যাস আটশো গুন পাতলা করলেন, তারপরো দেখলেন কাজ করছে। যে উপাদানটা দায়ী তা পৃথক করতে চাইলেন, পারলেন ও, তবে সেটা অস্হায়ী, টেকে না।

এটাই ছিল পেনিসিলিয়াম নটাটাম থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কারের কাহিনী। ব্রিটিশ জার্নাল অফ প্যাথলজিতে আবিষ্কারের কথা জানান দিলেন ফ্লেমিং। পরে ১৯৩৯ সালে আর্নস্ট চেইন এবং হাওয়ার্ড ফ্লোরে সফলভাবে পেনিসিলিনকে স্হায়ীভাবে পৃথক করেন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লক্ষ আহত সৈনিকের প্রান বাঁচালো পেনিসিলিন। ১৯৪৫ সালে ফ্লেমিং, চেইন আর ফ্লোরে যৌথভাবে নোবেল পেলেন।

অপরদিকে, গেরহার্ড ডাহক নামক এক বিজ্ঞানী তিরিশ এর দশকে আবিষ্কার করলেন সালফোনামাইড গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক। ১৯৩৯ সালে নোবেল পেলেন এ আবিষ্কারের কারনে ।

এটাই ছিল শুরু। পরবর্তী চার দশক ছিল অ্যান্টিবায়োটিকের স্বর্নযুগ। নবজীবনের বাস্তবরুপ হিসেবে এর অগ্রযাত্রা চলতে লাগল।

*অ্যান্টিবায়োটিক রেজিষ্ট্যান্স : নবজীবনের নবঅভিশাপ*

১৯৪৬ সালে সেনা ব্যারাক থেকে সাধারন্যে নেমে আসল পেনিসিলিন। ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসে ধুন্ধুমার ব্যাবহার শুরু হল এর।

১৯৪৬ সালেই পেনিসিলিন রেজিষ্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাসের বেশ কয়েকটা কেস পাওয়া গেল। কিভাবে ওই জীবানুগুলো আগে থেকেই রেজিষ্ট্যান্ট ছিল তা গবেষনা করে দেখা গেল যে, প্রাকৃতিক পেনিসিলিনের সংস্পর্শে জীবানুরা সবসময় ছিল। এর সাথে আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করা হয়, পেনিসিলিনের একটিভ উপাদানের একশভাগ ই মানবদেহে মেটাবলাইজড হয়ে পরিবর্তিত হয় না। বেশ কিছু অংশ অপরিবর্তিত অবস্হায় চলে আসে প্রকৃতিতে। যেটা প্রাকৃতিক রেজিস্ট্যান্সকে বুস্ট আপ করে ফেলছে।

এরপর নতুন নতুন এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়েছে, তাদের অনেকেরই পেনিসিলিনের মতো এরকম ধর্ম ছিল। আবার অপরিকল্পিত ব্যাবহারে আধামরা জীবানুগুলোও ঢাল তলোয়ার নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ সুযোগ পায়। রেজিষ্ট্যান্ট জীবানু নিয়ে গবেষনা করে দেখা গেল ভয়ানক এক ব্যাপার। এরা প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে তো অর্জন করেই, জীন সঞ্চারনের মাধ্যমে তা ছড়িয়েও দেয়, নিজ প্রজাতিতে তো বটেই, অন্য প্রজাতিতেও। উদাহরনস্বরুপ, ধরুন পেনিসিলিন রেজিষ্ট্যান্ট স্ট্রেপটোকক্কাস নিজের প্রতিরোধী ক্ষমতা অন্য স্ট্রেপটোকক্কাসকে দিতে পারে, হয়তো সেটা করাইনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরিকেও ভালোবেসে দিয়ে দিল!!!!

মুড়ি মুড়কির মতো ব্যবহারে প্রথমে সিঙ্গেল ড্রাগ, পরে মাল্টি ড্রাগ রেজিষ্ট্যান্ট জীবানু এল।
এখন ইনফেকশনে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজন রেজিষ্ট্যান্ট জীবানুতে আক্রান্ত, তার মাঝের শতকার ২৫ ভাগ আবার মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট।

বর্তমান পৃথিবীতে সাত লাখ লোক প্রতিবছর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিষ্ট্যান্ট জীবানুতে মারা যায়। ভুক্তভোগী হয় তিন কোটির বেশী মানুষ।

* আশার আলো টিক্সোব্যাকটিন*

ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে নতুন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার বন্ধ থাকার পর নভোবায়োটিন ফার্মাসিউটিকালস কয়েকদিন আগে ঘোষনা দিয়েছে, এক নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তারা আবিষ্কার করেছে যা বিপক্ষে MRSA (মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস) আর যক্ষার জীবানু রেজিষ্ট্যান্ট হতে পারে না। দেহকোষের ভিতরে আর বাইরে দু জায়গাতেই একই রকম সফলতা পাওয়া গেছে। বাজারের বেশিরভাগ এন্টিবায়োটিকের টার্গেট সাইট একটি, আর টিক্সোব্যাকটিন জীবানুর মাল্টিপল সাইটে আক্রমন করতে পারে।

টিক্সোব্যাকটিনের হিউম্যান ট্রায়াল এখনো হয়নি। আশা করা যায়, ট্রায়াল উতড়ে শীঘ্রই হাতের নাগালে চলে আসবে টিক্সোব্যাকটিন।

*শেষকথা*

প্ল্যাটফর্মের হয়ে গাজীপুরে একটা হেলথ ক্যাম্পের ওষুধ বিতরন সেকশনে বসার সুযোগ আমার হয়েছিল, অবাক হয়ে দেখেছিলাম, মাত্র ২০ ভাগের মত রোগীর অ্যান্টিবায়োটিকের ইন্ডিকেশন আছে। অথচ কোয়াকেরা কিছু হলেই একটা করে সেফট্রায়াক্সন ইনজেকশন ধাম করে দিয়ে দেয়।

যতশতই অ্যান্টিবায়োটিক আসুক, যথেচ্ছ ব্যাবহার না কমালে জীবানুর বিরুদ্ধে জেতা যাবে না।

রেজিষ্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ারা যেহেতু স্মার্ট, আমাদের হতে হবে স্মাটাঁর।

ডক্টরস ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

এম.ডি/এম.এস এঁর খুঁটিনাটি

Sat Jan 24 , 2015
এমডি/এম এস এঁর  খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন জনাব ডাঃ নিয়াজ নওশের রকি এমডি/এম এস -১ম কিস্তি অনেকদিন ধরেই ভাবছি লিখব কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনা।একটু বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি।কোন ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।প্রথমেই বলি পরীক্ষা হয় বছরে ২ বার।প্রথমে এপ্রিল মাসে যেটা হয় সেটা নন রেসিডেন্সি।এই একই সাথে ডিপ্লোমা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo