সরকারি টেলিমেডিসিন সেন্টারে ডাক্তার নিয়োগ হোক

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০

করোনা সংকটে আমাদের চেয়ে ধনে জ্ঞানে বহুদূর এগিয়ে থাকা জাতি নাকানি চুবানি খেয়ে যাচ্ছে, আমরা আর কী করবো!
অস্তিত্ব সংকটের মুখে লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে গেছে।
আশার কথা, ঘুরে দাঁড়ানোর সব রকম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ দেখা যাক।

আমরা লকডাউন কে ছুটি ভেবে বেড়াতে চলে যাই।
বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করি। বিভিন্ন সামাজিকতায় অংশ নিই।
একটু জ্ঞান থাকলে, সাধারণ বিচার বুদ্ধি থাকলে নিশ্চয়ই এমন করতাম না।
মুখে মাস্ক বেঁধে মারামারির ঘটনা দুনিয়ার আর কোথাও ঘটেছে বলে জানা নেই। বর্শা বল্লম টেঁটা নিয়ে হামলে পড়েছে লোকজন। এমনিতেই হাসপাতালে সামাল দেয়া যাচ্ছে না, আবার টেঁটা বল্লম বিদ্ধ রোগীর অবিরাম আগমন। লকডাউন কী জিনিস দেখার জন্য লোকজন বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়!

দিনমজুর পড়েছে বিপদে, তবু চোখ কান খোলা রাখলে ১০ টাকায় চাল ডাল তেলের ব্যবস্থা আছে, সরকার ব্যবস্থা করেছে।
যানবাহন বন্ধ। রিকশা, অটো, টেম্পু, বাস, ট্রাক সব বন্ধ। তালিকা হচ্ছে, ব্যবস্থা হবে। গৃহশ্রমিকদের কি অবস্থা?
অনেকেই ২ মাসের বেতন দিয়ে ২ মাস আসতে বারণ করেছেন। কেউ কেউ তা পারেননি। চাকরি নট। সে তবু ১০ টাকার লাইনে দাঁড়াবে। তার চাকরিদাতা কি করবে?

ভিন্ন একটা উদাহরণ দিই।
দেশে প্রায় ৪০ হাজার ডাক্তার বেসরকারি চাকরি করেন। কেউ টুকটাক চেম্বার করে পারিবারিক ব্যয় মেটান। এখন চেম্বার বন্ধ। হাসপাতালে রোগী নেই। আয় নেই। কাউকে হয়তো চাকরি ছাড়তে হয়েছে। কেউ হয়তো চাকরিতে আছেন, বেতন পাননি। এদিকে ঘরভাড়া আছে, পানি বিদ্যুৎ গ্যাস আছে (সরকার এসব বিলের লেট পেমেন্ট মওকুফ করেছেন এবং আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন), খবরের কাগজ বন্ধ, ওয়াইফাই বন্ধ, কিছু জমানো টাকা ছিল তাও শেষের পথে। এখন কী হবে?

সরকার সংগত কারণেই হাসপাতালে বহির্বিভাগ সীমিত করেছেন যেখানে উন্নত বিশ্ব সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে। রোগীর সুবিধার্থে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তারের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ রোগীর সেবা দেয়া হয়েছে ফ্রিতে। এমনকি হটলাইনে ফোন করতেও কোনো পয়সা খরচ হয়নি। আবার ডাক্তাররা এর বিনিময়ে কিছু চাননি এবং পাননি, যেহেতু স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।

এই দুটো সমস্যা যদি এক বিন্দুতে মিলিয়ে নিই, কেমন হয়?

সরকারি টেলিমেডিসিন সেবা বৃদ্ধি করা হোক।
ডাক্তারদের সেখানে যুক্ত করা হোক যাদের চাকরি নাই বা মাসিক আয় হঠাৎ অনেক কমে গেছে। অনেকে শুধু চেম্বারই করতেন, তাঁরা আর বসতে পারছেন না এবং তাঁরা তারকা চিকিৎসকও নন।
এই ডাক্তারদের কলপ্রতি একটা সম্মানী দেয়া হোক। গত কয় বছরে পেশাজীবি হিসেবে ডাক্তাররা সুনামের সাথে কর দিয়েছেন। সেই করের অধিকারে আজকের দুঃসময়ে এই সুযোগ করে দেয়া হোক। তাঁরা কাজের বিনিময় পেলেই সম্মানের সাথে বাঁচতে পারবেন। তাঁদের ঘরে পত্রিকা, বাচ্চার জন্য দুধ ফিরে আসবে। গৃহ পরিচারিকাও হয়তো ফিরবেন বা আরো ২ মাসের বেতনসহ ছুটি পাবেন।
একজন চিকিৎসক সমাজের ক্ষত সারান। সাধারণত তাঁরা মানবিক হন। সমাজেই তাঁদের সমাজবদ্ধ বসবাস। তাঁদের প্রতি এই অস্থায়ী চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে সমাজের অনেক গুলো ঝুঁকি কমে যাবে।
একদিন সবকিছু আগের মতো অবস্থায় ফিরবে। তখন তাঁরা এই ব্যাপারটি মনে রাখবেন। সবাই যদি নাও রাখেন, মনে করিয়ে দিবে কৃতজ্ঞ চিকিৎসকরা।

আমাদের দেশের সরকার সীমিত সামর্থ্য ও নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও লড়াইয়ের সাহস করছেন, প্রণোদনা দিচ্ছেন।
এমন একটি বাস্তব সম্ভাবনায় সাড়া দিয়ে বহুমাত্রিক সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধেও এগিয়ে আসবেন বলে বিশ্বাস করি।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক/ মুরাদ মোল্লা

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসক মা, বন্ধ দুয়ার নিজ শিশুর জন্যে

Tue Apr 21 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ এপ্রিল ২০২০ লেখকঃ ডা. অনির্বাণ সরকার সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ (৩৮ ব্যাচ) অভিমানী শিশু। চিকিৎসক মা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কাজ করার পর আছেন কোয়ারেন্টাইনে। শিশু যতই কাঁদুক, মায়ের উপায় নেই তার কাছে যাওয়ার, তাকে আদর করার। বন্ধ দরজার সামনে তাই কান্না। Share on FacebookTweetFollow us

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo