সফলভাবে জরায়ুর ৩২ টি টিউমার অপসারণ করলেন গাইনী কনসালটেন্ট ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ অক্টোবর ২০২০, বুধবার  

১৯ বছরের অবিবাহিতা মেয়ে রাবেয়া (ছদ্ম নাম) বাড়ি কাঠখালি, কিশোরগঞ্জে। ৬- ৭ বছর যাবত ভুগছিল জরায়ুর টিউমার এর সমস্যায়। সমস্ত জরায়ুতে টিউমার। কেউ এই রোগীর অপারেশন করতে রাজি হয় না। কারণ এটা জটিল
অপারেশন যেহেতু এত বেশী সংখ্যক টিউমার (ফাইব্রয়েড) ফেলে জরায়ু রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু জরায়ু থেকে ৩২ টি টিউমার অপসারণ করে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ। এ ধরণের জটিল অপারেশন ও জরায়ু রেখে এত বেশী সংখ্যক টিউমার অপসারণ শুধু দেশেই নয়, বহিঃবিশ্বেও বিরল উদাহরণ।

ছবিঃ ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ

অপারেশনটি করা হয় মডিউল জেনারেল হসপিটালে। অপারেশনের সহকারী সার্জন ছিলেন, ডা. সুলতানা রুবাইয়া এবং এনেস্থিসিয়ার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক। অপারেশনে রোগীর ৩ ব্যাগ রক্ত লাগে। অপারেশনের চিফ সার্জন ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ এর নিকট অপারেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৬- ৭ বছর যাবত রোগীটি জরায়ুর টিউমার এর সমস্যায় ভুগলিছেন। আর এতো বেশি সংখ্যক টিউমার থাকার ফলে জরায়ু রেখে টিউমার অপসারণের কাজটাও বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা পেরেছি অপারেশনে জরায়ু থেকে ৩২ টি টিউমার সফলভাবে অপসারণ করা হয়। আর রোগী এখন সুস্থ আছেন।” তার কাছে নারীদের জরায়ুতে সাধারণত কোন কোন সমস্যাগুলো বেশি হয়ে থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড।”

ছবিঃ জরায়ু থেকে অপসারণকৃত টিউমার

জরায়ু টিউমার এর লক্ষণগুলো কি কি প্রশ্ন করা হলে?

তিনি বলেন, “সাধারণত নারীরা এসে বলেন, আমার তো পেট বড় হয়ে যাচ্ছে, তবে আমি গর্ভবতী নই। অথবা বলে আমার খুব বেশি ভেজাইনাল ব্লিডিং হচ্ছে বা এমন হতে পারে ব্যথা হচ্ছে। টিউমারটি সাধারণত মধ্য বয়সী নারীদের বেশি হয়ে থাকে। তাদের প্রথম যেটি অভিযোগ, সেটি হলো, অনেক ঋতুস্রাব হচ্ছে। ঋতুস্রাবের সময়ও দেখা যায় খুব রক্তপাত হচ্ছে, চাকা যাচ্ছে।”

জরায়ু টিউমার শনাক্তকরণে কি কি পরীক্ষা করা হয়?

“প্রথমে খুব ভালো করে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করতে হবে। আর যদি বড় টিউমার হয়ে থাকে, তাহলে আমরা হাতে ধরলেই বুঝা যায়। তবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি থেকে ১০০ ভাগ জানা যায়।”

অনেকের মনেই ভীতি কাজ করে যে টিউমার হলেই অপারেশন করতে হবে। কখন অপারেশন করা হয়?

“দুই সেন্টিমিটার হলেই খুব ভালোভাবেই ফলোআপে থাকা যায়। কারণ, ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে যদিও ম্যালিগনেন্সি হয়, তবে খুব কম। এটি ক্যানসারে যাওয়ার আশঙ্কা খুব কম, বিনাইন বেশি হয়। কিন্তু যদি অনেক বড় হয়ে গেছে এমন অনেক লক্ষণ দেখা যায় এবং সংখ্যাও বেশি সার্জারির প্রয়োজন রয়েছে।”

সময় মতো চিকিৎসা করা না হলে, কী কী ঝুঁকি রয়েছে?
“একটি সুবিধা হলো এটি ক্যানসার হয় না। তবে একদম যে হয় না, সেটি বলা যাবে না। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং তার পরামর্শমতো চলতে হবে।”

নারীদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন?
তিনি বলেন,  “প্রত্যেক নারীকেই বলবো, আপনি নিজে নিজের প্রতি সচেতন থাকবেন এবং যদি কোনো জটিলতা মনে হয় যে আপনার কোনো পরিবর্তন হয়েছে, যেখানেই হোক না কেন শরীরের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখনো কখনো দেখা যাবে, কিছু হয়েছে, কখনো কখনো দেখা যাবে কিছু হয়নি। সতুরাং এ বিষয়ে সচেতন হওয়া,কোনো কিছুকে এড়িয়ে না যাওয়া, কোনো রোগকে এড়িয়ে না যাওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলা- এগুলোই করতে হবে।”

সার্জারির পরবর্তি আবার কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি?

“সাধারণত দেখা যায়, সার্জারির পরে কোনো সমস্যা হয় না। এমনকি যে সার্জারিতে দেখা যায়, টিউমার ফেলে দেওয়া হচ্ছে, সেসব সার্জারির পরে গর্ভধারণ করতে পারে। সেটি নিয়ে আতঙ্কে থাকার কিছু নেই। তবে সার্জারির পর পর একটি ফলোআপতো অবশ্যই করতে হয়।”

উল্লেখ্য, ডা. নুসরাত আরা ইউসুফ ২০০০ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ২০০৭ সালে এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। ২৪ তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে জয়েন করার পর বর্তমানে তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের কঠোর প্রতিবাদ

Wed Oct 21 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ অক্টোবর ২০২০, বুধবার গতকাল ২০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিএমএ এর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এর সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ এর […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo