লাইফ ইন লকডাউন, ডে ফোর

১০ এপ্রিল, ২০২০:
ডা. শুভদীপ চন্দ

চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, আলু, সাবান, ছোট বোতল সরিষার তেল, নাপা ট্যাবলেট- এক পরিবারের দশদিনের বেঁচে থাকা। মোট একশ পরিবার। রাতে জানালায় জানালায় পৌঁছে যাবে। অথচ ছোটবেলায় শিখেছিলাম এ ছেলেগুলো ‘স্পয়েলড চাইল্ড’। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগ্রেট খায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেয়। ভাল কলেজ, মেডিকেল, ভার্সিটিতে পড়ে না। বিসিএস পরীক্ষা দেয় না। অথচ তাদের আইডিয়া আর শ্রম দেখে মনে হলো আমরা ভাল ছেলেরা যোজন যোজন দূর পিছিয়ে আছি!

রাস্তার পেটে পেটে রাখা অধিকাংশ পানির ড্রাম আর সাবান- এখন এমনি পড়ে আছে। বিয়ে, জন্মদিন, গেট-টুগেদার উৎসব সব বন্ধ। ডেকোরেটররা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের সম্বল নিয়ে। সামান্য কিছুই অনেক সময় গেম চেঞ্জার। এক বন্ধু ফোন দিলো- তার বাইক রেডি আছে আমার জন্য চব্বিশঘন্টা। যেখানে ডাক্তারদের এড়ানো চলছে, সেখানে সে উল্টো দায়িত্ব নিতে আসছে! আসলে দুর্যোগ দরকার- অনেক কিছু আবিস্কারে। মানুষের ভিতরের সৌন্দর্য যত দেখছি, অবাক হচ্ছি।

বাজার শিফট করা হয়েছে বড় ঈদগাহ ময়দানে। মাথার উপর রৌদ্দুর। ধুলা, ধুলা, ধুলা। এটা চৈত্রের শেষ কাল। মহাসড়কে রাস্তার পাশে গাছগুলো সব হলুদ হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি ধুলা জমে কলাগাছে। একদম বিবর্ণ হয়ে থাকে। বাজারে ঘামে ভেজা শরীরে দোকানিরা বসে আছেন। মাস্ক থোতায় দিয়ে। মাথার উপর ছায়া নেই। দড়ি দিয়ে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেইন্টেন করা হচ্ছে। মাইকে বারবার বলা হচ্ছে ‘করোনা রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, আমরা দেখছি না….।’ বাজারে সরবরাহ কম নেই। যতটুকু বুঝি দামও রিজনেবল। কিছু রিকশাও আছে। এক তরুণ রিকশাচালক বললেন- ‘সব ত্রাণ বুড়া আর মহিলারা পায়। আমরা পাই না। ব্যাটা ছাওয়ালদের কেউ কিছু দেয় না।’

ছবিঃ ইন্টারনেট

মুরগী, মাছ, ডিম, শাক, চাল, ডাল, আলু- কিনতে এসেছিলাম। সবাই মনেহয় আমার মত ভাবছে। সাত-দশ-পনেরদিন বাজারমূখী হওয়া চলবে না। মাস্ক পরিহিত প্রায় সবাই। এটি মাস্কের শহর। কেউ কেউ মুক্তির স্বাদ নিচ্ছেন। বাজার একটি উছিলা, আসলে প্রয়োজন ছিল আকাশ দেখা। এরজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। আমার পেশা আমাকে লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে প্রতিদিন রাস্তায় নামার।

জুম্মার নামায না পড়ে ঘরে জোহরের নামায পড়ার অনুরোধে মাইকিং চলছে। আগে মাইক শুনেই কান বন্ধ করে দিতাম। হয় কোনো কোচিংয়ের সাফল্য, নয় চুলকানির ওষুধ বিক্রি। এখন খেয়াল করি। লকডাউন এ শহরে নির্দেশ সব মাইকেই আসে।

এরমাঝেই নির্দেশ আসলো সরকারি ছুটি বাড়ছে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। ভারত তার বন্ধুদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দিচ্ছে। তার বন্ধু আমেরিকা, ব্রাজিল, ইসরায়েল। আমরা তার বন্ধু রাষ্ট্রের মাঝে পড়ি কিনা কে জানে! অনেকেই বলছেন এ ঔষধটা যোগাড় করে দিতে। আসলেই সময়টা গুজব আর গজবের।

এটি এক যুদ্ধ। আমরা অপেক্ষা করছি মৃত্যু সংখ্যা চূড়ায় উঠার। তারপর ঢাল বেয়ে নামবে। সে এখনো বহুদিন বাকি। যাচ্ছে দিন প্রস্তুতিতে।

স্টাফ রিপোর্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ডা. আয়শা সিদ্দিকা: একজন সাহসী চিকিৎসক মায়ের গল্প

Fri Apr 10 , 2020
১০ই এপ্রিল, ২০২০ করোনা আতংকে সারা পৃথিবী যেখানে ঘরবন্দি,সেখানে একদল সৈনিক সেই ভয়কে জয় করে,সেই যুদ্ধকে জয় করার লক্ষে, লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই যুদ্ধের একজন সৈনিক ডা. আয়শা সিদ্দিকা। পুরো নাম ডা. আয়শা সিদ্দিকা আশা। কাজ করেন আউটডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে, নাটোর সদর হাসপাতালে। গাইনি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo