লাইফ ইন লকডাউন, ডে নাইনটি ওয়ান

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন বের হয়েছে। সেখানে বলছে- করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত রোগ। ৩২ দেশের ২৩৯ জন বিজ্ঞানী মিলে এক জার্নালে এর তথ্যপ্রমাণাদি প্রকাশ করবেন। তারা ইতোমধ্যে WHO কে পূর্বের রিকোমেন্ডেশন পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন। এ যদি সত্য হয় এতোদিনের মাস্ক, পিপিই, হাত ধোয়াধোয়ি সব অর্ধেক অর্থহীন হয়ে যাবে। WHO এর আগে বলেছিল এটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে শুধু শুধু পার্সোন টু পার্সোন ছড়ায়।

আমরা যখন ‘আধুনিক’ শব্দটি ব্যবহার করি, কালকের জন্য না রেখেই ব্যবহার করি- কাল কী করব! বাস্তবতা হচ্ছে ‘আধুনিক আমরা’ এ যুদ্ধে হেরে গেছি। গত কয়েক সপ্তাহ আমরা নিউ কেস, ডেথ, রিকোভারডের চক্করে চলেছি। এখন সব মিডিয়া রিকোভারকে বেশি ফোকাস করে। যেখানে কারো ক্রেডিট নেই। যিনি মারা গেছেন এবং যিনি সুস্থ হয়েছেন- কেউ জানেন না কেন কী! এদিকে মৃত্যুসংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। মানে আমরা হারটা স্বীকার করছি না, কিন্তু হেরে গেছি।

গতকাল শহরে উপচে পড়া ভীড় দেখলাম। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক গুলো একের পিছনে আরেক এমন ভাবে লেগেছিলো মনে হচ্ছিলো ট্রাম লাইন। দেখে মনে হয় থেমে আছে, ভালভাবে দেখলে বোঝা যায় খুব ধীরে চলছে। অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত প্রায় বন্ধ। স্বল্প পরিসরে যা খোলা আছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোক দেখানো। আসলে প্রয়োজন খুব বেশি নেই। সপ্তাহে এক দিন দুই দিন অফিস যাচ্ছেন বেশিরভাগ কর্মচারী।

করোনা সব পত্রিকায় আর দায়িত্বে! যেখানে দায়িত্ব সেখানে খুব সতর্ক হয়ে বসে থাকেন আর আফসোস করেন কত বড় ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন! আবার সে ভদ্রলোকই থোতায় মাস্ক দিয়ে বড় বাজার করেন, বিকেলে মাঠে গিয়ে গায়ে হাওয়া লাগান। এমনকি হাসপাতালে পিপিই পরা বাদ দিলে মেডিকেল স্টাফদেরও স্বর্ণযুগ যাচ্ছে। যে ওপিডি গুলোয় আগে নিম্নে একশো রোগী হতো, সে এখন সব মিলিয়ে ত্রিশও হয় না।

এটি প্রমাণ করে আমরা কত বাজে কাজে সময় নষ্ট করতাম। গত বছর এ সময় একশো রোগী সংখ্যা এখন দশে নেমে এসেছে- মানে সেসময় ওই দশজনই প্রকৃত রোগী ছিল! প্রায় সব সেক্টরে এমন। আমরা ক্রাইসিস তৈরি করে রাখতাম, এখন যখন আসল ক্রাইসিস আসলো- মেকি ক্রাইসিস সব এমনি পালালো। নিজের চরিত্র সার্টিফিকেট নিজে লিখে একজনের সিগনেচারের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতাম; অথচ তিনি আমাকে চেনেন না! একজন বিদেশে ভার্সিটিতে এপ্লিকেশন করবে ‘টু হুম ইট মে কনসার্ন’ লিখে ঘুরছে, স্যার প্রতিবার বলছেন ‘দুর্বল ইংলিশ’। তিনি নিজে সবল করে দিচ্ছেন না, রেকোমেন্ডও করছেন না। এই ছিল আমাদের কোভিড পূর্ববর্তী পৃথিবী।

এখন এটি অফিসিয়ালঃ মিছিল, মিটিং, কনফারেন্স, খেলা, শপিং, কবিতা উৎসব, বাইরে খাওয়া- এসব ছাড়াও জীবন চলে। বিদেশ না গিয়েও কিছুলোকের খাবার হজম হয়। সিজার না করেও অনেক বাচ্চা পৃথিবীতে আসে। অনেক অফিস বাড়িতে বসেই সুন্দর করা যায়।

ভেবে দেখলে কোভিডের প্রাপ্তি একদম কম নয়!

ফেসবুকে পরিচয়। জানলেন এক হাসপাতালে ডাক্তারদের পিপিই নেই। কথা বলে এক গাড়ি পিপিই নিয়ে চলে গেলেন। সেও প্রায় একশো কিলোমিটার দূর। কখনো মাস্ক, কখনো স্যানিটাইজার, কখনো ইফতারি, কখনো ত্রাণ।

ক্যামেরার ফ্লাশ নেই, ব্যানার নেই, স্বীকৃতি নেই, পরিচিতি নেই। তারা তিনজন। গার্মেন্টস বায়িং বিজনেস। দেশে করোনা আসলো মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, তারা কার্যক্রম শুরু করলেন ২৪ মার্চ থেকে। তারপর থেকে চলছে। কখনো নিজেদের অফিসেই প্যাকিং করেন, কখনো খাবার কিনে নেন। তারপর নিজেদের গাড়ি করে বিলান। ডাক্তার থেকে গোর খুড়ে, রোজাদার থেকে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা- সাহায্য চলছে। শুধু একটি নক। সে অসহায় হয়ে পার্সোনাল প্রয়োজনে হলেও।

জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘কেন করেন’? বোকা উত্তর দিয়েছিলেন ‘মানসিক শান্তি’। এ পৃথিবীতে তারাই শান্তিতে আছে যারা ভাবছে পৃথিবীটা যথেষ্ট। যারা বের হয়ে কিছু করতে চাচ্ছে- অশান্তি খুড়ে আরো অশান্তি বের করছে! তার উত্তরটা বরং এমন হতো- ”এমনিই করি। কিছু করা দরকার তাই করি।”

কোভিড শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে এ লোকগুলোর জন্যে। গাঁটের পয়সা গায়ের শক্তির মতো, যারা এগুলো অন্যের প্রয়োজনে উড়াতে জানেন- তারাই সুপারহিরো। এ ‘ডে’ টি এরকম পরিচিত অপরিচিত অসংখ্য জনের উদ্দেশ্যে রাখলাম।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

চারটি নাম্বারে পাওয়া যাবে হাসপাতালের তথ্য

Thu Jul 9 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার  চারটি নাম্বারে কল করে জানা যাবে হাসপাতালের তথ্য।০১৩১৩৭৯১১৩০, ০১৩১৩৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ – এই চারটি নাম্বারে কল করে জানা যাবে হাসপাতালের আইসিইউ এবং শয্যা সংক্রান্ত তথ্য। এতে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা আরোও সহজ হবে। গত ৭ জুলাই, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক স্বাস্থ্য বুলেটিনে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo