লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি ফাইভ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ মে ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

লকডাউন প্রায় সবাইকে লেখক বানিয়ে দিয়েছে। এখন আপনি কোনো রসেই বুঝতে পারবেন না কোনটি আসল অনুভূতিতে লেখা, কোনটি নকল। বাবার মৃত্যু, নিজের মার খাওয়া, অর্থনৈতিক দারিদ্র‍্য বঞ্চনা- সবকিছু নিয়েই পোস্ট পড়ছে। পরে কাউন্টার পোস্ট বা নিজের অনুতাপে আসল সত্য প্রকাশ পাচ্ছে। অনলাইন পত্রিকাগুলোও ফেসবুক তথ্যসূত্র হিসেবে নিচ্ছে!

সুপার শপে সবচেয়ে বেশি ভীড় দেখেছিলাম চকলেট পার্টে। মানুষ চকলেট কিনছে গিফট হিসেবে। লাভ ইন দ্যা টাইম করোনা, সম্ভবত এটিই সবচেয়ে বড় শক্তি যাকে করোনা হারাতে পারে নি। নেইল ফার্গুসন ব্রিটিশ টপ সায়েন্টিস্ট। যিনি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে বলেছিলেন লকডাউন ঘোষণা করতে। তার ভাষ্যমতে আড়াই লাখ মানুষ মারা যাবে শুধু ব্রিটেনে যদি লকডাউন স্ট্রিক্ট না হয়। নিজে করোনা আক্রান্ত হয়ে চৌদ্দদিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। বের হয়েই লকডাউন উপেক্ষা করে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে চলে যান। সেটি জানাজানি হলে পরে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

শুধু ভীনদেশী কেন! একদম লকডাউনের শুরুতে যখন কিছুই চলতো না, এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম ব্যাটারি গাড়িতে। তিনি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে সিরাজগঞ্জ চলেছেন। বলছিলেন- পরিবারের সাথে দেখা করবেন। আনন্দের আতিশয্যে একটু বেশিই বলছিলেন। বিরহ নাকি অন্ধকারের মতো। এক দেখাতেই সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়। সে তিনদিন না তিনমাস না তিনবছর- ব্যাপার না। আলো যেমন হাজার বছরের জমাট অন্ধকারকে এক মুহূর্তে উধাও করে দেয়, তেমনি!

প্রেম ভালোবাসার নাটক খুব দেখা যায় হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গুলোয়। ষোড়শী সপ্তদশী অষ্টাদশীর প্রেম আনপ্রেডিক্টেবল। কত সিভিয়ার শ্বাসকষ্ট, কত বুকে ব্যাথা, কত আনকনসাশনেস যে এক ওমিপ্রাজল ইঞ্জেকশনে সুস্থ হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। করোনার দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি রোগী এসেছে এ মান অভিমানের। একরাতে ডিউটি ডক্টরস’ রুমে বসে খাচ্ছি, জরুরি তলব পড়লো। গিয়ে দেখি মেয়েটি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর ব্যাকুল চোখে দেখছে ব্যগ্র স্বামীকে। এর মাঝেও একধরনের পুলক আছে, ‘এ পৃথিবীর একজন তো ব্যস্ত আমাকে নিয়ে…’! ব্যগ্রতা বাড়াতে দুঃসময়ের মধ্যে ইসিজি এক্সরে আরবিএস দিয়ে দিলাম। তখন বাজে রাত দু’টা!! রোগটা মিথ্যা, ভালোবাসাটুকু তো আর মিথ্যা নয়।

করোনার মধ্যে তিনদিন পরপর বাড়ি গেছেন এমন লোকও আছে। ডাবল ভাড়া ট্রিপল ভাড়া দিয়ে। আক্রান্ত হওয়ার ভয় উপেক্ষা করে। তারপর আলাদা কক্ষে আলাদা ভাবে থেকেছেন। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল গুলোয় ডিউটি ডাক্তারদের থাকার আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। তবুও তারা বাড়ি যান। একজনকে বললাম ‘এটি রিস্ক’। বললো রবীন্দ্রনাথ নাকি বলে গেছেন- ‘ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভূবনের ভার। হালের কাছে মাঝি আছে, করবে তরী পার!’

পাউলো কোয়েলহো লিখেছেন- ‘ইন দ্যা ওয়ার্ডস অফ এ পার্সিয়ান সেজঃ লাভ ইজ এ ডিজিক নো ওয়ান ওয়ান্টস টু গেট রিড অফ।’ লাভ সিকনেস করোনার চেয়েও কঠিন। বেশি সংক্রামক। অসুস্থ লোক সুস্থ হতে চায় না। এ কোভিড উনিশ সব ধরনের ভালোবাসাকে রিডিফাইনড করছে।

আজ দেশে করোনা শনাক্ত একহাজার ছাড়িয়েছে। সবার ধারণা সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি। ধরা পড়ছে না কারন টেস্ট হচ্ছে না। টেস্ট হলেও সব ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলস নিগেটিভের ঝামেলা তো আছেই। উপজেলা থেকে যা পাঠানো হচ্ছে সব স্বতঃসিদ্ধ নয়। টেস্টের তুলনায় সিম্পটমের উপর জোর দেয়া হচ্ছে বেশি। দেশে এবং বিদেশে। ওয়াইড ভ্যারাইটিজ সিম্পটম। এ বঙ্গ মুলুকে এসে মারাও যাচ্ছে প্রায় সব বয়সী। ভেন্টিলেটরে যাওয়া ৮০% রোগী ফিরছেন না।

ঢাকায় প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। সরকার থেকে দশ টাকার চাল দেয়ার প্রকল্প আবার শুরু হয়েছে। আগামীকাল আরো অনেক প্রবাসী দেশে ফিরবেন। আসছে সময় নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারন আছে। যদিও ভেবে কিছু হবে না। এর দিকে কর্তাব্যক্তিরা কেউ তাকিয়ে নেই!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সিলেটের স্বনামধন্য কিংবদন্তিতুল্য সার্জনের মৃত্যু

Tue May 12 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ১২ মে, ২০২০, মঙ্গলবার চলে গেলেন কিংবদন্তিতুল্য স্বনামধন্য সার্জন অধ্যাপক ডা. মীর মাহবুবুল আলম। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আজ মঙ্গলবার রাত ৩ঃ২৫ মিনিটে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন তিনি। তিনি সাবেক বিভাগীয় প্রধান সার্জারি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo