লাইফ ইন লকডাউন, ডে টু হান্ড্রেড সিক্স

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার 

ডা. শুভদীপ চন্দ

রামায়ণে লক্ষ্মণের স্ত্রীর নাম ঊর্মিলা। খুব অল্পই বাক্য ব্যয় করা হয়েছে উনার প্রতি। অথচ চাইলে উনাকে নিয়ে আরেক রামায়ণ লেখা যেতো।

ছবিঃ প্রতীকী

পিতৃ আজ্ঞা পালন করতে রাম বনে চললেন, সাথে প্রেমময়ী স্ত্রী সীতা। লক্ষ্মণ বললেন তিনি কখনো দাদার অনুগামী ছাড়া হোন নি, তিনিও যাবেন। এদিকে ঘরে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী ঊর্মিলা। ঊর্মিলা বললেন তবে তাকেও নেয়া হোক, দাদা দিদির সেবা তিনিও করবেন। লক্ষ্মণ বোঝালেন তাতে তার কর্তব্য চ্যুতি ঘটতে পারে। তিনি পুরো মনোযোগ রামের সেবায় দিতে চান। সেদিন লক্ষ্মণ ভাবেন নি তবে ঊর্মিলা কী নিয়ে বাঁচবেন। পিতৃপণ রক্ষার দায় রামের উপর বর্তেছিল তার উপর নয়। এদিকে যে পণ করে তিনি ঊর্মিলাকে ঘরে তুললেন তার সত্যরক্ষা কী করে হবে। ঊর্মিলা সেদিন তার স্বামীকে বোঝাতে পারেন নি। লক্ষ্মণের নাম রামের নামের সাথে জুড়ে গিয়েছিল সেদিনই। আর তাতে যে বউটি চৌদ্দ বছর অপেক্ষা, আশঙ্কা ও চোখের জলের সাথে সংসার করলো, তার পুরস্কার থাকলো বিস্মৃতিই। ক’জনে আর জানে ঊর্মিলা দেবীর নাম!লক্ষ্মণ চেয়েছিলেন ভাইয়ের সেবা করতে। যুদ্ধ করে হোক বা বনে কষ্ট করে হোক তিনি তার জন্ম উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেছেন। আনন্দ নিয়েই ছিলেন। ওইদিকে ঘরবন্দী একাকীত্ব নিয়ে থাকা ঊর্মিলা দেবী? কে শুনছে তার কথা! ঊর্মিলাদের কথা যে কেবল গল্প আখ্যানেই তা কিন্তু নয়। ঊর্মিলারা ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের চার পাশেই। সাফল্যের মুকুটে যে রঙিন পালক তা অনেক সময়ই বঞ্চিতের অভিমানে তৈরি হয়। স্বামী শহরের নামকরা সার্জন, একটু সময় হয় না একটু ঘুরে আসার। বিদেশী পিএইচডি অর্জন সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি অথচ বর্তমান? যে একটু স্পর্শের জন্য বসে আছে সে? তার বয়স কী থেমে থাকবে? কষ্ট লক্ষ্মণরাও করছেন, কিন্তু একটি আগুণে পুড়ে পোক্ত হওয়া অন্যটি আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া। দুইটি দুই জিনিস। নেশা হিসেবে মানুষ কত কিছুরই না নাম বলে। কিন্তু সাফল্যের নেশা, কর্তব্যের নেশা, সত্যবাদিতার নেশার মতো অমন ভয়ঙ্কর আর কিছু নেই। এগুলো মন্দ শ্রেষ্ঠ হয়েও ভালর উর্দি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

আনন্দের বিপরীত শব্দ নিরানন্দ। কিন্তু ‘আনন্দ’ শব্দের মাঝে যে সর্বব্যাপী উন্মাদনা, নিরানন্দের মাঝে তার বিপরীত ছিঁটে ফোঁটাও নেই। বিপরীত শব্দ হিসেবে নিরানন্দ আনন্দের সাথে যায় না। বরং ‘ভার’ শব্দটি খুব বেশি উপযুক্ত আনন্দের ঠিক বিপরীতার্থক শব্দ হিসেবে। এ পৃথিবী ভর্তি আলো, বাতাস, ছবি, গান। মানুষ নিজের ভারে ভারী হয়ে আছে। উড়তে পারে না। কেউ ভারী স্বপ্নের ভারে, কেউ ভারী প্রতিশ্রুতির ভারে, কেউ ভারী সত্য রক্ষার ভারে, কেউ ভারী দায়িত্বের ভারে। কী আর হতো যদি সেদিন লক্ষ্মণ রামের সাথে বনে না যেতেন! রামের সাথে প্রতিষ্ঠা পেতেন না? মন্দিরে মন্দিরে তার বিগ্রহ হতো না? নাই বা হলো। এক মানুষের মন কী কম বড় এক পৃথিবীর চেয়ে! রাম, লক্ষ্মণ, বাল্মিকী, দশরথ কেউ সেদিন হালকা হতে পারেন নি।

অথচ হালকা হলেই উড়া যায়। মন থেকে মনে।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প  || পর্ব : ১৬

Tue Dec 8 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ। আজকের মানুষটি মধ্যবিত্ত জীবনের ঘোর টোপে আজন্ম আবর্তিত। ছোট ছোট আশা আনন্দেই জীবনের সুখ খুঁজে নিতে জানেন তিলে তিলে পাওয়া না পাওয়ার খেরো খাতার হিসেব বন্দি জীবনে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo