মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম মাহমুদুল এর গল্প

এবছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের ৮৩ হাজার ৭৮৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন মাহমুদুল হাসান। তবে তার এ সাফল্যের পেছনে আছে অনেক পরিশ্রম। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ইচ্ছা থাকলেও ইন্টার সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড (আইএসএসবি) পরীক্ষায় অযোগ্য হন তিনি। তবে জীবনের প্রথম ব্যর্থতা তাকে আরও দৃঢ়চেতা ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
f47616293877e0fcbf7e7db6518d9dec-59ea75620f28f (1)
মায়ের সাথে মাহমুদুল

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আইএসএসবিতে যাই। ট্রেনিংয়ের শেষ দিনে সবার হাতে একটি করে খাম দেওয়া হয়। যারা যোগ্য তাদের খামে সবুজ কার্ড এবং যারা অযোগ্য তাদের খামে ছিল লাল কার্ড। আমি আমার খামটা খুলে যখন লাল কার্ডটা দেখলাম তখন আমি ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিলাম। ওই লাল কার্ড ছিল আমার জীবনের প্রথম ব্যর্থতা। স্বপ্নের সেনাবাহিনীর চাকরিতে যেতে পারবো না ভেবে খুব মন খারাপ হয়েছিল। পরে বাসায় ফিরে আসি, তবে আমি থেমে যাইনি। কার্ডটা এখনও আছে আমার কাছে, স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। তবে ব্যর্থতাকে মাথায় রেখে নতুন সাফল্যের বীজ বুনেছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার। গত জানুয়ারি মাস থেকেই পড়া শুরু করি। তিনমাস মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কোচিংও করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কনফিডেন্স ছিল কিন্তু প্রথম হবো এটা ভাবিনি। প্রথম যখন রেজাল্ট শুনেছিলাম তখন বিশ্বাস হয়নি। এবছর রেজাল্ট দিতে অনেক দেরি হয়েছে। অপেক্ষা করে করে আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেদিন সন্ধ্যার পর কোচিং থেকে ফোন করে রেজাল্ট জানানো হয়। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে নিজের চোখে রোল নম্বর দেখে বিশ্বাস করি।’

এদিকে, ফলাফল ঘোষণার দিন সেনাবাহিনীর সদস্য বাবা লুৎফর রহমান কাপ্তাইতে অবস্থান করছিলেন। ছেলের রেজাল্টে বাবার কর্মস্থলের সবাই খুব খুশি। তাইতো কোম্পানি কমান্ডার নিজে ডেকে ১০ দিনের ছুটি দিয়েছিলেন তাকে।

অন্যদিকে, ছেলের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে বলে চোখ মোছেন মা মমতাজ বেগম। মাহমুদুল হাসান ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব বেশি সময় না পরলেও যতোটুকু পড়তো ততোটুকু মনোযোগ দিয়েই পড়তো ইউসুফ (মাহমুদুল হাসানের পারিবারিক নাম)। ফলে ক্লাসে বরাবরই ভালো রেজাল্ট ছিল তার। এরপরতো সুযোগ পেল মীর্জাপুর ক্যাডেট কলেজে। সেখানেতো ক্লাস এইট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।’

ছেলের পাশে বসে মা বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমি ছেলের সঙ্গে পড়ার টেবিলে বসে থাকতাম। মাঝে খাবারের জন্য আধাঘণ্টা উঠতে হতো। আর ছুটির দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওর সঙ্গে থাকতে হতো। ১২টার পর আমি রান্না করতাম আর ছেলেকে খেলার জন্য পাঠাতাম। এমনকি, যখন থেকে মেডিক্যালে ভর্তির পড়াশোনা শুরু করেছে তখনও ওর সঙ্গে থাকতাম। হয়তো কখনও ঘুমিয়ে গিয়েছি। তবে যখই সে উঠে বাথরুমে বা অন্য কাজে যেতো তখন মনে হতো ওর কিছু দরকার কিনা। কফি বানিয়ে বসে থাকতাম ওর পাশে। এখন এসবের ফল পাচ্ছি, ছেলে পুরো দেশে ফার্স্ট হয়েছে, আশা করি এর চাইতেও বড় সাফল্য ভবিষ্যতে আসবে।’

কথা বলা শেষে ফিরে আসার সময় মা মমতাজ বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ছেলেকে যখন কুমিল্লার ময়নামতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য গেলাম, তখন একজন মানুষ আমাকে কিছু কথা বলেছিলেন। যেটা এখনও ভুলতে পারিনি। ফর্ম তুলতে গেলে দায়িত্বে থাকা মানুষটি আমার কাছে জানতে চান, ওর বাবা মিশনে গিয়েছে কিনা? মিশনে যাননি জানালে তিনি বলেন, তাহলে এ খরচ কিভাবে চালাবেন? গ্যাসের চুলায় রান্না করা ছাড়তে হবে। তাকে বলেছিলাম, মাটির চুলাতেই রান্না করবো। তখন তিনি বলেন, একজন ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে আর একজন সৈনিকের ছেলে সৈনিকই হবে, আর কিছু না….।’ এটুকু বলে থামেন মমতাজ বেগম। তারপর বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে কেবল আমি বলেছিলাম, ছেলেটাতো আমার তাই আমি চেষ্টা করে যাবো, দেখি কী হয়।’

মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি জানি না, তিনি আজ কোথায় আছেন। তবে নিশ্চয়ই এ খবরটা দেখবেন। তাকে শুধু বলবো, সৈনিকের ছেলে সৈনিক হয়নি, পুরো দেশে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’

…………
লেখাটি অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউন থেকে সংগৃহীত ।

মূল লেখার লিংকঃ https://goo.gl/Z5ZqDf

drferdous

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আমার আনন্দ, আমার বিষণ্নতাঃ ডা. জামান অ্যালেক্স এর কলাম

Sun Oct 22 , 2017
১…. রুমের বাইরে তখনও জনা ত্রিশেক নারীপুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, রুমের ভিতর আমি একের পর এক রোগী দেখে চলেছি। এমন সময় রুমে দু’জন ষন্ডামার্কা লোক ঢুকে ফটোকপি করা প্রায় অর্ধশত কাগজ আমার সামনে ফেলে সত্যায়িত করে দেয়ার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করলো। মূল সার্টিফিকেট সহ দুপুর একটার পর আসতে বলেছিলাম, কাজের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo