মেডিকেলের যত গল্প ১ | ফরহাদ বিন সিদ্দীক স্যার এবং আমরা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ জুন, ২০২০, শুক্রবার

ডা. এ. এস. এম. রেজওয়ান চৌধুরী
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
সেশনঃ ২০১০-১১

জীবনে স্কুল কলেজের শিক্ষক নিয়ে অনেক গৌরবময় স্মৃতি লিখেছি, কখনো মেডিকেলের শিক্ষক নিয়ে ভাল কিছু দু কলম লিখেছি বলে মনে পড়ে না। এটি আমারই দৈন্যতা, ভাল দেখতে পাই নি হয়তো! করোনার ভয়াবহ থাবায় বা মানুষের মার খেয়ে কে কখন চলে যাব কেউ বলতে পারে না, তাই দুটো কথা। কিছু স্বীকারোক্তি না করে মরে গেলে অন্তরাত্মা অনুশোচনায় অতৃপ্ত থাকবে। আমি জানি এরকম স্মৃতি সবার আছে। আমার অনুজদের জন্য এই স্মৃতি রেখে যেতে চাই, যেন তারাও তাদের শিক্ষকদের স্মরণ করে, ভালবাসে। অন্যরকম এক প্রশান্তি ও তৃপ্তি আছে, যা এখন অনুভব করছি। নবাগত শিক্ষকরাও চাইলে এখান থেকে ভাল কিছু শিখতে পারি, ছাত্রদের আপন করে নিতে পারি।

ফরহাদ বিন সিদ্দীক স্যার, আমার মেডিকেলীয় জীবনের প্রথম দেবদূত। মেডিকেল জীবনের প্রথম দিনটি থেকেই হয়তো ডিপ্রেশনে থাকতাম বা পালাতে চাইতাম, যদি উনি কাছে ডেকে সাহস না দিতেন। যদি কলেজের গাজী আজমল স্যার, বোমা মিজান স্যার কিংবা বণিক স্যারের কথা জিজ্ঞাসা করে হাসিঠাট্টা করে আমাকে সহজ না করতেন অথবা প্রথম ডিসেকশনের দিন কাটাকাটি করতে দিয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি না করতেন, তবে এনাটমিকে হয়তো সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে পারতাম না কখনো। বড়দের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, স্যার চুপিচুপি বিরানীর প্যাকেট ধরিয়ে দিতেন ইমরান আব্দুল্লাহ আর আমাকে। নিজের বাসায় সবাইকে দাওয়াত খাওয়াতেন। খেলার মাঠে ল্যাং মারলে বিশাল পর্বতসম শরীর নিয়ে পড়ে গেলেও তিনি সহ্য করতেন। সব সময় গভীর জীবনবোধ এবং বাস্তবমুখী উপদেশ দিতেন।

কক্সবাজার পিকনিককে ফরহাদ স্যার সবার জীবনের চিরস্মরণীয় ভ্রমণ হিসেবে গেঁথে দিয়েছিলেন। স্যারের কাছে সম্পূর্ণ বাংলায় আইটেম দিতে পারতাম আমরা, বুঝিয়ে বললেই খুশি হতেন। এছাড়া ফিমেইল রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম পড়ানোর সময় প্রায়ই আইটেমে বিতর্ক হতো, সেটাও সহ্য করতেন। এতটাই মজা করে স্যার পড়াতেন বিরক্ত লাগতো না। গল্প, পড়া, কৌতুক – সবকিছুর সমন্বয় থাকতো এক একটা ক্লাসে। স্যারের যে টপিকে স্বচ্ছ ধারণা থাকতো না, সেটা নিয়ে লুকোচুরি করতেন না। বলতেন,

“ভাল ভাবে নিজে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করে তারপরই পড়াব।”

ফরহাদ বিন সিদ্দীক স্যার তাঁর সব শিক্ষার্থীকে যেকোন বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। প্রতিটি পিছিয়ে পড়া ছাত্রকে তিনি টেনে তুলতেন, তাদের প্রতি স্যারের তীক্ষ্ণ নজর ছিল। আমার মনে আছে, মুস্তাক নামে ক্যাডেট থেকে আসা বন্ধুটির প্রায় সব আইটেম পেন্ডিং ছিল টার্মের। টার্ম যেন দিতে পারে, কোন ভাবেই যেন পিছিয়ে না পড়ে স্যার সর্বোচ্চ সাহায্য করেছিলেন। স্যারের ফেয়ারওয়েল ছিল একই সাথে আনন্দঘন এবং তীব্র যন্ত্রনাদায়ক। আমরা স্যারের রম্য কার্টুন আঁকি, মানপত্র রচনা করি যা ছিল স্যারের ‘মেদ ভুড়ি, খাদ্যরসিকতা ও মুরগীর আর্তনাদ’ কে কেন্দ্র করে। স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠান ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করি।

এরকম হাজারো স্মৃতি জমে আছে, বলে শেষ করা সম্ভব না। স্যারকে আমরা সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, তাঁর প্রতি রইলো ভালবাসা।

Subha Jamil Subah

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঘরে তৈরি কাপড়ের মাস্কের ব্যাপারে সিডিসি- এর নির্দেশনা

Fri Jun 19 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ জুন ২০২০, শুক্রবার ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম শামীম সহযোগী অধ্যাপক ইপিডেমিওলজি এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর সাধারন মানুষকে কাপড়ের তৈরী মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি। সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ঘরেই তৈরী করা যায় এবং এটা কোভিড- ১৯ এর ছড়িয়ে পরা প্রতিরোধেও […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo