বিজ্ঞান ও বিস্ময়ঃ পর্ব-০১।। প্রাচীন মিশরীয় প্রেগন্যান্সি টেস্ট

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার 

ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

মিশরের মমি, পিরামিড ইত্যাদি ছাড়াও অনেক আশ্চর্যের জ্ঞান ছিল যা আমাদের এখনো অজানা। ১৯৩০ সালে টিউরিন মমি নামের এক মমির সাথে পাওয়া অনেক গুলো প্যাপিরাসের কাগজের উপরে লেখাগুলো কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। সেগুলো ষাটের দশক থেকে মর্মার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

২০১৮ সালে একটুকরো প্যাপিরাসের একটা লেখার মর্মার্থ উদ্ধারের পরে গবেষকেরা খুব আশ্চর্যান্বিত হয়। সেই প্যাপিরাসের আনুমানিক বয়স ১৪০০ খ্রীস্টপূর্ব। সেটা ছিলো একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর পদ্ধতির বিবরণ। সেখানে লেখা আছে যে কোন মেয়ের প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করার জন্য দুইটা ছোট থলেতে একটায় কিছু বার্লি ও আরেকটায় কিছু গমের দানা নিতে হবে। মেয়েটা সেই দুইটি থলের উপরে প্রস্রাব করবে। এর পরে কিছুদিনের ভেতরে যদি কোন একটা থলের শস্যে চারা গজায় তাহলে নিশ্চিতভাবে মেয়েটি গর্ভবতী। সাথে লেখা আছে যে, যদি বার্লি আগে গজায় তবে গর্ভের বাচ্চাটি হবে ছেলে এবং গমের দানা আগে অংকুরিত হলে বাচ্চা হবে মেয়ে।

হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা এই থিউরি টেস্ট করলেন অনেক মেয়েদের উপরে। এবং আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে ৭০% থেকে ৮৫% পর্যন্ত শুদ্ধ ফলাফল দিচ্ছে এই পদ্ধতি। মানুষ আধুনিক কালে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে শিখেছে ১৯২৭ সালে দুইজন জার্মান বিজ্ঞানীর দ্বারা। এর আগে মেয়েদের কনসেপশনের পরে অনন্ত ১ মাস অপেক্ষা করা লাগতো গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। জার্মান পদ্ধতিতে ১০ দিন পরেই বুঝা যায় গর্ভধারণ সম্পর্কে। ১৯৭০ সালে আধুনিক প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট কিট বের হওয়ার পরে এটি নিতান্তই একটি সহজ কাজ হয়ে গেছে। এই কিট গুলো মেয়ের মূত্রে হিউম্যান কোরিয়নিক গোনাডোট্রোপিন নামের একটা হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করে ফলাফল দেয়। কিন্তু মিশরীয় নিয়মে আসলে কি পদ্ধতিতে ফলাফল আসতো সেটা এখনো পরিষ্কার না। তবে যথাসম্ভব নারী দেহের এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে গাছের বীজও অংকুরিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। যেখানে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ এর জন্য এই আধুনিক কালেও অন্তত আপনাকে ২০ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে, সেখানে এতো দ্রুত সেই ৩৫০০ বছর আগে ৮০ ভাগের বেশি নিশ্চয়তার সাথে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারনের পদ্ধতি মিশরীয়রা কীভাবে আয়ত্ত করলো সেটা খুবই অবাক করার মতো।

গবেষকেরা বলেন, মিশরীয়দের দ্বারা লেখা ও তাদের প্রাচীন সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে। আমরা এখন যা তাদের সম্পর্কে জানি তা আসলে মোটের উপরে ২০ ভাগ জানা। বাকি ৮০ ভাগ আমাদের অজানা রয়েছে আজও। ২৭০ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি যদি পুড়িয়ে দেওয়া না হতো, তাহলে আমরা মিশরীয়দের সম্পর্কে এমন অনেক জিনিস জানতে পারতাম যে আমাদের দুই চোয়াল একত্র করাই মুশকিল হয়ে যেতো।

Md. Nafiul Islam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনার পর নতুন গাইডলাইনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

Thu Aug 20 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ আগস্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার  মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে এখনো কমে নি। করোনার কারণে ১৭ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। কবে নাগাদ এই করোনার প্রকোপ কমতে পারে এবং এসব প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে যখনই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo