প্রশ্নে প্রশ্নে সহজ করে কোভিড-১৯ | পর্ব ৭

২২ জুন ২০২০, সোমবার 

ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল।

 

১) মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

উত্তর: এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো মায়ের বুকের দুধে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। বুকের দুধের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২) এই করোনা মহামারীর সময়েও কি মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

উত্তর: অবশ্যই উচিত৷ শিশুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্যেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে একদম সঠিক মাত্রায়। তার সারাজীবনের সুস্থতা নির্ভর করে বুকের দুধের ওপর। তার বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করে এটি। বুকের দুধে থাকা এন্টিবডি নানা ধরনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধের মাধ্যমে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তেও  শিশুকে সাহায্য করবে।

৩) চারিদিকে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলা হচ্ছে, এখনও কি নবজাতককে জন্মের পরপর মায়ের বুকে ‘স্কিন টু স্কিন’ কেয়ারের জন্য দিতে হবে?

উত্তর: হ্যাঁ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি তাদের শরীরে নানামুখী উপকার করে, নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দেয়৷ তাছাড়া মায়ের বুকে দ্রুত দুধ আসাকেও এটি ত্বরান্বিত করে।

৪) যদি মা নিজে কোভিডে আক্রান্ত হন বা কোভিডের লক্ষণ থাকে, তাহলে কি তিনি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?

উত্তর: হ্যাঁ, পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

৫) কী কী সতর্কতা?

– শিশুকে দুধ খাওয়াবার আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

– মা একটি মাস্ক পরে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন। মাস্কটি ভিজে গেলে সেটি নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিয়ে অন্য একটি মাস্ক পরতে হবে। একটি ব্যবহৃত মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। মাস্কের সামনের দিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না

– দুধ খাওয়াবার সময় হাঁচি-কাশি না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি-কাশি এলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে।

– মায়ের পরিধেয় কাপড়চোপড় পরিষ্কার থাকতে হবে।

– মা তার আশেপাশে যা কিছু স্পর্শ করবে, তা নিয়মিত পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

৬) কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কি প্রতিবার দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নিতে হবে?

উত্তর: যদি তিনি উন্মুক্ত বুকে বা স্তনে হাঁচি-কাশি দিয়ে থাকেন, তাহলে বুকের দুধ পান করাবার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান-পানি দিয়ে স্তন ধুয়ে নিতে হবে৷

এমনিতে প্রতিবার বুকের দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নেয়া জরুরি না।

৭) যদি এমন হয় কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কাছে কোনো মাস্ক নেই তবুও কি তিনি বুকের দুধ পান করাবেন?

উত্তর: আসলে বুকের দুধ এতো বেশি জরুরি যে, এ অবস্থাতেও মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাবেন। তবে অন্যান্য সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

৮) শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হবার হার কেমন?

উত্তর: এখন পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

৯) তবুও যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তখন?

উত্তর: আশার কথাটি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যেসব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো লক্ষণ ছিল না অথবা সাধারণ কিছু লক্ষণ ছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি৷

১০) যদি মা এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না, তখন করণীয় কী?

উত্তর: সেক্ষেত্রে  ‘এক্সপ্রেসড ব্রেস্টমিল্ক’ খাওয়ানো যেতে পারে শিশুকে। মা হাত দিয়ে চেপে বা পাম্পের মাধ্যমে একটি কাপে/বাটিতে দুধ সংগ্রহ করে দেবেন। অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি শিশুকে সে দুধটুকু খাইয়ে দেবে। তবে হাত, পাম্প, কাপ, চামচ যা যা ব্যবহার করা হবে সবই খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেই ১১ কেজি ওজনের জটিল টিউমার অপারেশন

Mon Jun 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ জুন ২০২০, সোমবার পুরো বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ আতঙ্কে স্থবির, থেমে আছে সবকিছু, এই পরিস্থিতির মাঝেও হাসপাতালে নিয়মিত চলছে জটিল অপারেশন। গত শনিবার ঢাকার ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে জটিল রেট্রোপেরিটোনিয়াল টিউমার অপারেশন করা হয়। অপসারিত টিউমারের ওজন ছিল প্রায় ১১ কেজি। সুদীর্ঘ তিন ঘন্টাব্যাপী এই অপারেশনে ৩ ব্যাগ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo