পেশাজীবী আন্দোলন ও পরবর্তী কর্মসূচী

৩০ তারিখ।চলমান ৪ দিনের ১ঘন্টা করে কর্মসূচির শেষ দিন।
এখন আমাদের মূল্যায়ন করার সময় এসেছে এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা কি অর্জন করলাম।
সারা দেশে বেশ স্বতস্ফুর্তভাবে কর্মসূচি পালন করছে।
ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল প্রথম দিকে ঢিলেঢালাভাবে পালন করলেও পরে জোরালভাবে পালন করেছে।গুটিকয়েক উপজেলায় অফিস প্রধানদের অনিচ্ছায় বা অসহযোগিতার কারণে কর্মসূচি কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমি মনে করি এ চারদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা যে দাবী আদায়ের দদ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি তা বলা যাবে না।বরং আমরা পরবর্তী আরো কঠোর প্রস্তুতির মহড়া দিয়ে রাখলাম।এ ছাড়া সারা দেশে আন্দোলনের স্পিরিট ছড়িয়ে দিতে ও বৃদ্ধি করার জন্য এ কর্মসূচি প্রয়োজন ছিলো।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ৩০ তারিখের পর কি হবে?
আমরা কি আবার কালো ব্যাজ ধারণ বা মানববন্ধনের মত নখদন্তহীন আন্দোলনে ফিরে যাবো, নাকি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো।আর কত ঘুমাবো আমরা?
আমার মতামত এখানে দিচ্ছি।আপনারাও মতামত দিন।পরবর্তী কর্মসূচি এমন হতে পারে: (চিকিৎসকদের অগ্রনী ভূমিকা রাখার ওপর আন্দোলনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল)
১। অসহযোগ আন্দোলন:প্রশাসন ক্যাডারের সভাপতিত্বে উপজেলা,জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কোন সমন্ময় সভা সহ যেকোন ধরনের সভা সকলে বয়কট করা হোক।
২।এছাড়া মাসিক অনলাইন রিপোর্টিং বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে।
৩।সত্যায়িত করা থেকে সকলে বিরত থাকুন।
৪।সকল হাসপাতালের বহির্বিভাগ সেবা বন্ধ করে দেয়া হোক।
৫।সকল প্রকার ইনজুরি রিপোর্ট দেয়া স্থগিত রাখা যেতে পারে।
৬।প্রশাসন ক্যাডারের সকল কর্মকর্তার এসিআর এর স্বাস্থ্য অংশে সই করার আগে ইসিজি,ইকো,বুকের এক্স রে,লিপিড প্রোফাইল ও চোখের কনসালট্যান্টের সার্টিফিকেট দেখে নিন।এগুলো ছাড়া কিছুতেই কেও সাইন করবেন না।কোন রিপোর্টে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে চিকিৎসা করে আসতে বলুন।
৭।পূর্ণ কর্মবিরতি।(আপাতত শুধু চিকিৎসকদের জন্য জরুরী সেবা চালু থাকুক।পরে প্রয়োজনে সেটাও বন্ধ করা লাগতে পারে)
৮।সকল বিভাগ ও জেলায় এবং ঢাকায় পেশাজীবি মঞ্চ দাবী আদায় না হওয়া
পর্যন্ত চলমান রাখা।
এগুলো শুরু করলে এমনিতেই আন্দোলন কে সবাই আমলে নেয়া শুরু করবে।
আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দকে দেখেছি তারা এ আন্দোলনকে গিয়ার আপ করার ক্ষেত্রে কতটা উদাসীন।
জনাব ফিরোজ খান সেদিন টক শোতে বলেই ফেল্লেন যে উনি চাপে পড়ে এ আন্দোলনে আছেন।কি লজ্জা!
পেপার পত্রিকা বা অন্য মিডিয়ায় এমনকি কিছু কিছু ব্যানারের লেখা থেকে একটা জিনিস লক্ষ করছি যে খুব সুকৌশলে আমাদের মূল দাবী ‪#‎কৃত্যপেশাভিত্তিকমন্ত্রণালয়ের‬ কথাটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।এটা একটি গভীর ষঢ়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে করছি।সিলেকশন গ্রেড,টাইম স্কেল,ইনক্রিমেন্ট,ইউএনও র স্বাক্ষর বাতিল এসব কিছু হাইলাইট করা হচ্ছে।তার মানে এরকম কয়েকটি দাবী মেনে নিয়ে আন্দোলনের ইতি ঘটিয়ে আমাদের সুবিধাভোগী কিছু নেতা ক্রেডিটও নেবেন আবার ব্রাহ্মন ক্যাডারদের পক্ষে আন্দোলন বন্ধও করবেন,এমন চিন্তা ভাবনা করছেন।সাবধান ভাই ও বোনেরা।স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট বারবার আসেনা।মন্ত্রণালয় স্বাধীন না করে ঘরে ফিরে গেলে ঐ আমলাদের কাছে সারাজীবন মাথা নত করেই চলতে হবে।তাই নেতা নির্ভরতা কমিয়ে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহনকেই এ আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি বানাতে হবে।আমাদের আগে আন্দোলনটি ধারণ করতে হবে।
আমি বিশ্বাস করি সকল নেতা এরকম চরত্রের অধিকারী নয়।ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় বিএমএ র মহাসচিব আর্সেলান স্যার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ আন্দোলনে চলমান কর্মসূচি সফল করার আহবান জানিয়েছেন।বিএমএ কে আরো সক্রিয় ভূমিকায় আমরা দেখতে চাই এবং আশা করি বিএমএ এ আন্দোলন সফল করার জন্য কার্যকরী ভাবে নেতৃত্ব দেবে যা সত্যিকারভাবে এ আন্দোলনকে সফল পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবে।
আর আমাদের খুলনা বিভাগের বিএমএ র সভাপতি যিনি অলরেডি পেশাজীবি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেই Baharul Alam স্যার গতকাল খুলনায় পেশাজীবি মঞ্চ শুভ উদ্বোধন করেছেন।দাবী আদায়ের এ আন্দোলনে এ মঞ্চ নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
একজন করে বাহার স্যার যদি প্রতি বিভাগে তৈরি করা যায় তবে এ আন্দোলনের সফলতা অনিবার্য।
সবার প্রতি আহবান জানাই সবাই নিজের জন্য লড়ুন,নিজের সম্মানের জন্য লড়ুন,নিজের পেশার জন্য লড়ুন।এ লড়াইয়ে জেতার জন্য সবাই এক এক জন বাহারুল আলম হয়ে উঠুন। আমরা সবাই রাজা আমাদের এ রাজার রাজত্বে।নেতৃত্বের আদেশের অপেক্ষার দিন শেষ।বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষনের একটি কথা মনে করুন,”আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি………..”।
তাই বলছি নেতার ডাকের অপেক্ষা আর নয়।সবাই ঝাপিয়ে পড়ুন অসম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ সফল করতে,ঝাপিয়ে পড়ুন ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে চুরমার করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে।
যদি লক্ষ থাকে অটুট,বিশ্বাস হৃদয়ে,
হবেই হবে দেখা,দেখা হবে বিজয়ে।
জয় বাংলা।

ডাঃ মাহাদি হাসান বিপ্লব

ডক্টরস ডেস্ক

One thought on “পেশাজীবী আন্দোলন ও পরবর্তী কর্মসূচী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

চিকিৎসকেরা মানুষ না, কুমিল্লা মেডিকেলে নির্যাতন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে কিডন্যাপ

Sat Jan 2 , 2016
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা:তপু কে প্রকাশ্য দিবালোকে তার ক্যাম্পাস থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে দূবৃত্তরা । চিকিৎসকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে আরেক দফা থুতু । রাজপথে নেমেছে শিক্ষার্থীরা । এদিকে গতকাল রাতে ২জন ইন্টার্ন ডাক্তারকে একজন রোগী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা টিজজ করে। তারই প্রতিবাদ করতে দুজন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo