ডাঃ ভাই এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ও তার জীবনের শেষ ইচ্ছে।

ডাক্তার_ভাই এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ও তার জীবনের শেষ ইচ্ছে….
পহেলা সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডাক্তার ভাই এর জীবনের শেষ ইচ্ছে পূরণে চিকিৎসক কমিউনিটি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহবান রইল। উনি যেই মডেল চালু করে দিয়ে গেছেন মধুপুরে, এটি যেন হারিয়ে না যায়, এটিই ছিল ডাক্তার ভাইয়ের শেষ ইচ্ছে।

পুরো নাম ডাক্তার এড্রিক সার্জিসন বেকার। গরীব খেটে খাওয়া মানুষের কাছে যিনি “ডাক্তার ভাই” নামেই পরিচিত।
১৯৮৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা দেবার নিমিত্তে চালু করেন ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট।

জন্ম, শৈশব এবং লেখাপড়া ডাক্তার এড্রিক ১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরেই প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া শেষ করে ১৯৬০ সালে তিনি ডুনেডিন শহরের ওটাগো মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক সম্পন্ন করেন। মেধাবী ছাত্র বেকার এরপরে ১৯৭০ সালে পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েশনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গমন করেন। সিডনিতে ট্রপিকাল মেডিসিনের উপর ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন সম্পন্ন করে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ধাত্রীবিদ্যার উপর ডিপ্লোমা লাভ করেন ১৯৭১ সালে। জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত পাগল এই মানুষটি ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিশু বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন।

ছোট বেলা থেকেই তিনি আর্তমানবতার জন্য কিছু করার তাড়না বোধ করতে থাকেন। ডাক্তার হবার মধ্যে দিয়ে তাঁর দ্বার খুলে যায়। এমবিবিএস পাস করে সরকারের শল্য চিকিৎসক দলের সদস্য হিসাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে যান তিনি। সেখানে কাজ করার সময়ই তিনি পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারেন। যুদ্ধকালীন ও তার পরবর্তী এখানকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখে তিনি ঠিক করেন সম্ভব হলে বাংলাদেশে আসবেন।

সেই পরিকল্পনা থেকেই ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে আসার পর তিনি মেহেরপুর জেলার বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি টাঙ্গাইল চলে আসেন এবং শিশু বিষয়ক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কুমুদিনী হাসপাতালে জয়েন করেন। সেখানে মন টিকাতে না পেরে চলে আসেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়।

আর্তমানবাতার সেবায় যারা জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পান , তাদের মধ্যে অন্যতম উদাহরণ ডাঃ এড্রিক বেকার। গরীবদের চিকিৎসা, গরীবরাই তা করবে” এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে চালু করেন ব্যতিক্রমী চিকিৎসাকেন্দ্র ‘কাইলাকুড়ি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। ২০০ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী ফ্রি চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে। ছোট ছোট মাটির ঘরে ডায়াবেটিস বিভাগ, যক্ষ্মা বিভাগ, মা ও শিশু বিভাগ, প্রশিক্ষণ কক্ষ, মাতৃসদনসহ নানা বিভাগ রয়েছে। সব বিভাগ মিলিয়ে ৪০ জন রোগী ভর্তি করানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এখানে সেবা দেয়ার জন্য উনি ৮০ জনকে নিজ হাতে প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। চিকিৎসা খরচ যোগাতে মাঝে মাঝে নিজ দেশে গিয়ে স্বজন, সাহায্য ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে অর্থ আনতেন।
তার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগও রয়েছে। প্রায় ৪০ জন রোগী ভর্তির সুবিধাও আছে। চিকিৎসা খরচ যোগাতে মাঝে মাঝে নিজ দেশে গিয়ে স্বজন, সাহায্য ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে অর্থ আনেন। সাভারের গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ থেকে দুইজন ইন্টার্ন ডাক্তার সেখানে নিয়মিত সেবা দিয়ে থাকেন।
সেবার জন্য ধর্ম, বর্ণ ও জাতিভেদের উর্ধ্বে থেকে সেবার এই নজীর স্থাপন করেছেন এই পৃথিবীর সুখী দেশ বলে খ্যাত নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ডাঃ এড্রিক বেকার। হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তার গড়া ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ওয়েবসাইটের নামও দিয়েছেন ঐ গ্রামের নামানুমসারে www.kailakuri.com। ওয়েবসাইটে Dr. Edric Baker এর উক্তি “A health Care System like Kailakuri is the Only Answer for the rural poor People’s of Bangladesh.

বাংলাদেশের খ্যাতিমান নির্মাতা এবং উপস্থাপক হানিফ সংকেত ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর এড্রিক বেকারের ওপর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিনোদন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে। প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সেবা দেয়ার অবদান স্বরপ বাংলাদেশ সরকার জনাব বেকারকে ২০১৪ সালের পাঁচ আগস্ট নাগরিকত্ব দেয়। ১৯৯৯ সালে নিজদেশে তিনি” Officer of the New Zealand Order of Merit” পুরষ্কারে ভূষিত হন।
২০১৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর মানবতার এই মহান সেবক পরলোকগমন করেন।

প্রতিবেদক :
মোঃ দেলোয়ার হোসাইন
তায়রুননেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।

সোনালী সাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সুবর্ণ এক্সপ্রেস-ফারদিন খান

Sat Sep 1 , 2018
প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -১ “সুবর্ণ এক্সপ্রেস”   ট্রেনের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই ঈদের মৌসুমে টিকেট পাব কিনা জানিনা, ঈদের আমেজের কাছে এই দাঁড়িয়ে থাকা নেহাত কিছুই না। ভালোই লম্বা লাইন, আমার পজিশন প্রায় শেষ থেকে সামনের দিকে। সামনে এক টুপি পড়া ভদ্রলোক আর পিছনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝেমধ্যে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo