কোপা সামসু,কোপা -ডাঃ মোঃ আল-আমিন

প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ – ২৭

” কোপা সামসু,কোপা ”

লেখকঃ
ডাঃ মোঃ আল-আমিন
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ

ঈদের দিনটা একটুখানি আরাম আয়েশ করে কাটান আমাদের রমজান আলী। ব্যাচেলর বন্ধুদের সাথে তাহাদের ফ্ল্যাটে চলে দিনভর আড্ডা আর দমে দমে গঞ্জিকাবাবা টানা। ইদানিং আবার শুরু হইয়াছে হিরোইনের সুবাস টানা। তাহার পর রাতে ঘরে ফিরিয়া আসিয়া বেগম সাহেবার হাতের শাহী খানা ভক্ষণ করিয়া বেগম সাহেবাকে কোল বালিশ বানাইয়া সুখনিদ্রা। ভালোই কাটিতেছিল রমজান আলীর কুরবানির ঈদগুলি। কিন্তু সব ঈদই রমজান আলীর একই রকম যাইবে তাহা বুঝি ভাগ্য বিধাতার সহ্য হইলো না। তিনি এই বারের কুরবানিতে রমজান আলীকে কঠিন প্যাচে নিপতিত করিলেন। সদ্য ক্রয় করা অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটে উঠিবার পরে নানা ঝামেলায় তাহার মহল্লার কসাই বা মাদ্রাসার হুজুরদের সাথে মহব্বত জমিয়া উঠে নাই। তিনি সর্বদা দেখিয়া আসিয়াছেন যে, ঈদের জামাতের পরে মাদ্রাসার ছাত্ররা দলে দলে অস্ত্র হাতে কুরবানি দেয়ার জন্য ছোটাছুটি করে। তিনি ভাবিলেন উহাদের কাউকে বলিলেই হইবে। কিন্তু বিধিবাম, তিনি যে অভিজাত এলাকায় আসিয়াছেন, সেখানে প্রাইভেট সিকিউরিটি বাহিনীর পূর্বানুমতি ছাড়া বাহিরের কাহারো প্রবেশ নিষেধ,অস্ত্র হাতে মাদ্রাসার ছাত্রতো অসম্ভব ব্যাপার! যাহা হউক নামাজ পড়িয়া আসিয়া আয়েশ করিয়া সোফায় বসিয়া জর্দাফিরনী গলাধকরনের পরে বাহিরে নিষ্ক্রান্ত হইবার আয়োজন করিতে না করিতেই বেগম সাহেবার সামনে পড়িয়া গেলেন। বেগম সাহেবা মধুর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন গরু কুরবানি না দিয়া জনাব আপনি কোথায় চলিলেন। তিনি বেগমসাহেবার চাইতেও মধুর সুরে বলিলেন যে,তুমি তো জানোই জানু যে আমি গরু কেন মুরগীও জবেহ করিতে পারি না,আমার দিল ধড়ফড় করে, আমার প্রেশার বাড়িয়া যায়। কেন জানু আমার শ্যালকরাই তো প্রতি বছর যাহা করিবার তাহা করে। বেগম সাহেবা উত্তরে বলিলেন আপনি জনাব এমন জায়গায় নিয়া আসিয়াছেন যে উহারা কোথাও কোনো হুজুর খুজিয়া পাইতেছে না। এখন তোমাকেই গরু জবেহ করিতে হইবে,তুমি না বলিতে পারিবে না, তুমি না আমার সোনা ময়না পাখি। তুমি কি চাও তোমার জানু বোন জামাইদের সামনে হাসির খোরাক হউক। তাছাড়া গরু জবেহ তো মামুলি ব্যাপার। আমার ভাইয়েরাই যাহা করিবার তাহা করিবে, তুমি শুধু আল্লাহর নাম নিয়া ছুড়ি চালাইয়া দিবে। আমার জন্য এইটুকু কাজও তুমি করিবে না? তুমি না আমার জন্য ঘাগড়া আনিতে বেড়া টপকাইয়া ওপারেও গিয়াছিলে ? আর ইহা তো গরু মাত্র! জানুর এমন আবেগতাড়িত
কথা শুনে রমজান আলী কোরবান হইয়া গেলেন। মেয়েরা এমনই। মন ভোলানো কথা বলে কাজ আদায় করে নিতে ওস্তাদ।
রমজান আলী ভয়ে জীবনে পশু জবেহও দেখেননি। কাঁটাছেড়া দেখিলে ভীষণ ভয় পান। কিন্তু আজ জানুর আবদার শুনিতেই হইবে। তাই তিনি নিজেকে সাহস দিতে লাগিলেন গরু জবেহ কোনো ব্যাপারই না! মুরগি জবাই করার মতোই মামুলি ব্যাপার। দুরু দুরু বুকে দোয়া দরুদ পড়িতে পড়িতে রমজান আলী কুরবানির সাহস সঞ্চয় করিতে লাগিলেন। তাহার মনে আস্তে আস্তে কোপা সামসুর ফিলিংস আসিতে লাগিলো, আজ গরুর খবর আছে! কিন্তু গরুর কাছে আসিবার পরে তাহার সাহস উবিয়া গেলো। ওরে বাবারে এতো বড় জানোয়ার আমি জবেহ করিব! তাহার মনে হইতে লাগিলো গরুটা তাহার দিকে টার্গেট করিয়া তাকাইয়া আছে। আজ গরু নয়, আমার খবর আছে। বেগম সাহবা বিলম্ব দেখিয়া ধমক দিলেন, কী ব্যাপার ? তাড়াতাড়ি করো। দেখিতেছ না সবাই ধরাধরি করিয়া গরুটাকে শুইয়া রাখিয়াছে। এবার রমজান আলীর কাজ, জবাই। গরুর গলা বরাবর ছুরি চালাইতে হবে। কিন্তু রমজান আলীর সমস্ত শরীরে ইহা কি শুরু হইয়া গেল, ভুমিকম্প নাকি! তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে গরুর গলায় ছুরি বসাইয়া আল্লাহু আকবার বলিয়া দিলেন এক পোঁচ। কিন্তু এ কী ! গলা যে কাটে না। পাশ হইতে বেগম সাহেবা ধমক দিলেন,গাধা… ছুরি উলটা ধরিয়াছ। ঠিকই তো ! রমজান আলী তৎক্ষণাৎ ছুরি ঠিক করিয়া আবার দিলেন পোঁচ। কিন্তু এইবার ঘটিয়া গেল মারাত্মক দুর্ঘটনা। গরু প্রচণ্ড জোরে হাতপা নাড়াইয়া তাহাকে যাহারা ধরিয়া ছিল তাহাদেরকে ছিটকাইয়া ফেলিয়া সোজা হইয়া উঠিয়া দাড়াইল। সঙ্গে সঙ্গে রমজান আলীও উপুড় হইয়া পড়িয়া মাথায় কঠিন আঘাত পাইলেন । কিন্তু কঠিন ব্যাপার হইলো এই যে দুর্ঘটনার কোনো এক ফাকে তাহার পাঞ্জাবি গরুর শিংয়ে আটকাইয়া গিয়াছে। তিনি এখন গরুর শিংয়ে উলটা হইয়া ঝুলিতে লাগিলেন ! তিনি আর কোন উপায় না দেখিয়া গরুর গলা আকড়াইয়া ধরিলেন। গরু তখন ছোটা শুরু করিল। তাহা এক অদ্ভুত দৃশ্য। রাস্তায় একটা গরু ছুটিতেছে। সেই গরুর গলায় ঝুলছে আস্ত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ! মানুষ বিপদে পড়লে জান কোরবান হইয়া দৌড়ায়, আর আমাদের বেচারা রমজান আলী গরুর গলায় ঝুলিয়া রাস্তায় বাড়ি খাইতে খাইতে দৌড়াইতেছেন ! জ্ঞান হারানোর আগে শেষ দৃশ্যে তিনি দেখিলেন তাহার জানু-ই কেবল গরুর পিছন পিছন দৌড়াইয়া আসিতেছেন। আর অন্যান্য কুটুমেরা ভয়ে জান বাচাইতে উল্টা দিকে দৌড়াইতেছে ! জ্ঞান ফিরিবার পরে রমজান আলী দেখিলেন তাহার মাথা ব্যান্ডেজ করা, সম্ভবত মাথা ফাটিয়া গিয়াছে। ডান হাতও প্লাষ্টার করা, মনে হয় ভাঙিয়া গিয়াছে। তাহার বেগম সাহেবা এক বাটি স্যুপ নিয়া পাশে দাড়াইয়া আছেন। চোখের পানি মুছিতে মুছিতে বেগম সাহেবা অভিমানী কন্ঠে বলিলেন তুমি এমন না মুমকিন গাঁধা জানিলে আমি জীবনেও তোমাকে জবাই করিতে বলিতাম না।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোরবান : ত্যাগ এবং ভালোবাসা - ডা: মীর মোহাম্মদ আবরার

Mon Sep 3 , 2018
প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৩০ ” কোরবান : ত্যাগ এবং ভালোবাসা “ লেখকঃ ডা: মীর মোহাম্মদ আবরার। ৪র্থ ব্যাচ, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ। গরুরে খাওয়াইয়া, আদর কইরা ঘরে ফিরছি, গলির মুখে এক ছোটভাই এর সাথে দেখা,জিগাইলো গরু নিসি কিনা। মোবাইল বের করে দেখাইলাম গরু। পাশে এক লোক দাঁড়িয়ে ছিল,দেখতে চাইলো তারেও […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo