করোনা চিকিৎসায় নতুন উদ্ভাবনঃ নেগেটিভ প্রেসার আইসোলেশন ক্যানোপি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ জুলাই, ২০২০, সোমবার

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর হাঁচি- কাশি থেকে নির্গত জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয় অন্যান্য রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ। জীবাণুর সংক্রমণ রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এর যৌথ গবেষণায় তৈরি করা হল “নেগেটিভ প্রেসার আইসোলেশন ক্যানোপি”।

গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকী-ই-রব্বানী শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ এই যন্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘নেগেটিভ প্রেসার আইসোলেশন ক্যানোপি’ হল হাসপাতালের শয্যার উপর বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) স্থাপন করা তাঁবুর মতো একটি যন্ত্র, যেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেটেড করে রাখা হয় এবং রোগীর হাঁচি-কাশির সাথে নির্গত জীবাণু দ্বারা দূষিত বায়ুকে পরিশোধিত করা হয়। ক্যানোপির সাথে সংযুক্ত একটি ‘এয়ার ফিল্টারের’ মাধ্যমে রোগীর চারপাশে দূষিত বায়ু নেগেটিভ প্রেসারের মাধ্যমে টেনে নিয়ে পরিশোধিত করে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ফলে আক্রান্ত রোগীর আশপাশের লোকজন সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। ক্যানোপির চারদিকে স্বচ্ছ পর্দা থাকায় এবং তা আকারে বড় ও উঁচু হওয়ায় রোগী অস্বস্তি বোধ করেন না। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে আনা- নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সেও এটি স্থাপন করা যাবে। তারা দাবি করছেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই ক্যানোপি ব্যবহার এর ফলে কোভিড- ১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সহজ হবে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হারও কমে আসবে। ইতোমধ্যেই বিএসএমএমইউতে এটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং সেখানকার ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগে এটি ব্যবহার ও গবেষণার জন্য ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড অনুমোদন করেছে।

অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিকী-ই-রব্বানী বলেন,

“স্বল্প খরচে ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা এই ক্যানোপি বিশ্বের অন্যান্য ক্যানোপি থেকে ব্যতিক্রম ও উন্নত। এর আগে ইসরাইলে শুধু মুখ ও মাথা ঢাকার জন্য এ ধরনের ক্যানোপি তৈরি করা হয়, বিদেশের যন্ত্রে ক্যানোপির ভেতরের বাতাসের জীবাণু ও ভাইরাসকে বিশেষ ধরনের হেপাফিল্টার দিয়ে যতটা সম্ভব আটকে রেখে পরিশোধিত বাতাস আবার হাসপাতালের কক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর এইটায় হেপাফিল্টারের সাথে বাড়তি আছে আলট্রাভায়োলেট আলোর প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে প্রথমেই সব জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস করে ফেলা হয়। তাই এর গুণগত মান একই উদ্দেশ্যে তৈরি পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো যন্ত্র থেকে উন্নত। এর দামও হবে বিদেশের একই ধরনের যন্ত্রের থেকে অনেক কম। তাছাড়া দেশে তৈরি বিধায় সহজে মেরামতের গ্যারান্টিও থাকবে।”

তিনি আরও বলেন,

“গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। এ কাজে আমাদের পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের এ কাজের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। অবশেষে আমরা এটি উদ্ভাবনে সফল হয়েছি। গবেষণা প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক প্রকৌশলী রাকিব সাখাওয়াত হোসেন এবং অংশীদারবিহীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘বাইবিট লিমিটেড’র গবেষক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান।”

কনফারেন্সে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন,

“গত দুই দিন জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত সারা বিশ্বের ১৪৯টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্স হয়েছিল, সেখান আমি এই উদ্ভাবনের বিষয়টি তুলে ধরি। তারা এই উদ্ভাবনে খুশি হয়েছেন এবং খুবই প্রশংসা করেছেন। আমরা এই কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে জাতির পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি, যার অংশ হিসেবে এই উদ্ভাবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় জাতির সংকটে এভাবে পাশে থাকবে। এই গবেষণায় সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স প্রোগ্রাম থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা এ প্রকল্পে কিছু অর্থ সহায়তা দিয়েছে। আর প্রতিটি ‘নেগেটিভ প্রেসার আইসোলেশন ক্যানোপি’ তৈরিতে খরচ হবে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।”

বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ভার্চুয়াল মিটিং এ বলেন,

“আপনারা জানেন, এই কোভিডে আমরা প্রায় ৬৫ জন চিকিৎসককে হারিয়েছি। এক হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবী আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ মারামারিতে এই উদ্ভাবন দেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত হলে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা এবং সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় অনেক ভূমিকা রাখবে।”

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়ে সৌদি আরবে আরো একজন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকের মৃত্যু

Mon Jul 13 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ করোনা মহামারীতে শহীদ হলেন আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক। এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন ডা. এ কে এম মাকসুদুল হাসান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি সৌদি আরবস্থ “আরার সেন্ট্রাল হাসপাতাল” এ অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ কর্মরত ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo