বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
মাত্র ৩ ফুট উচ্চতার চন্দ্রজীত পড়ছেন ডাক্তারি।কটাক্ষের থেকে অনুপ্রেরণার নাম। মেডিকেল কলেজ এ ক্লাস শুরু হওয়ার মাত্র ৩ দিন এর মধ্যেই সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রিয় মুখ হয়ে উঠেছেন চন্দ্রজীত। সম্প্রতি ডিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে এমন তথ্য।

জন্মের কিছুদিন পরই ডোয়ারফিজম নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে থমকে যায় নরসিংদীর চন্দ্রজীত সাহার শারীরিক বৃদ্ধি। দেখতে স্বাভাবিক না হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই তাকে শুনতে হয়েছে নানা কটুক্তি, হতে হয়েছে অবহেলার স্বীকার। তবে তাতে দমে জাননি চন্দ্রজীত।২০২৪-২০২৫ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৮০.৫ নাম্বার পেয়ে জাতীয় মেধা তালিকায় ২৩৮৭ তম হয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ এ ভর্তি হয়েছেন চন্দ্রজীত সাহা।ভবিষ্যতে ভালো একজন ডাক্তার হয়ে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান এই তরুণ। তার তার বিশ্বাস শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই মেধা বা মনন এর প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না!
এ বিষয়ে চন্দ্রজীত সাহা বলেন,” আমি আসলে মনে করি যে যেমনই হোক না কেনো যদি লক্ষ্য থাকে যে ভালো কিছু করবো তাহলে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে গেলে অবশ্যই সম্ভব। মাঝে বাঁধা বিপত্তি আসবে তবে সেগুলো বাঁধা হিসেবে না নিয়ে সেগুলো মনে করতে হবে সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যারা একটু পিছিয়ে আছে তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে তোমরা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাও অবশ্যই ভালো কিছু সম্ভব। ”
চন্দ্রজীত এর আত্নবিশ্বাস,আচরণ ও ইতিবাচক মনোভাব মুগ্ধ করেছে সহপাঠীদের।শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়া মেধাবী চন্দ্রজীত এখন সকলের অনুপ্রেরণা বলেও জানান সহপাঠীরা।
চন্দ্রজীত এর সহপাঠীরা বলেন,” সমাজের টপ লেভেল এর বা এক নাম্বার যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার এরাই তো,দাদা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এই পজিশন এ এসেছে, অবশ্যই সে সকলের জন্যই দৃষ্টান্ত।”
চন্দ্রজীত সাহা শুধু একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী নন,তিনি নতুন প্রজন্ম এর জন্য সাহস ও আত্নবিশ্বাস এর এক জীবন্ত প্রতীক বলে জানান মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার চন্দ্রনা সরকার।
এ বিষয়ে ডা.চন্দ্রনা সরকার বলেন, “ছেলেটা খুব স্ট্রং মেন্টালিটির এবং আমি ওকে করিডোর এ হাঁটতে দেখেছি উইথআউট এনি হেল্প, অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই সে হেঁটে আসছে এবং আমি আজকে ওর হিস্টোলজি ক্লাস নিয়েছি সেখানে মাইক্রোস্কোপটা আমি ওর দেখার জন্য, ওর জন্য আমি স্পেশাল আয়োজন করেছি,ওকে আমি একটা ছোট্ট টুল এর উপর মাইক্রোস্কোপ টা দিয়েছি এবং আমি ওকে একবার দেখানোর পরেই আমি দেখলাম যে সে একবারেই আমার স্লাইড ফোকাস করতে পেরেছে যেটা অনেক স্টুডেন্টই একবারে পারে নাই, কাজেই আমি তো ধরেই নিলাম,ধরে নিলাম না! এটা একদম আমি কনফার্ম যে সে অনেক এর চেয়ে বেশি মেধাবী। তার কেচিং পাওয়ার টাও খুব ভালো।”
চন্দ্রজীতকে সকল ধরনের সহায়তায় কলেজ কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করছে বলে জানান কলেজ এর অধ্যক্ষ, অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ ফয়জুল বাশার।
অধ্যক্ষ বলেন,” সবারই আমরা হোস্টেল এ সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, ভুল ক্রমে দুই একজনের হয়তো বাদ পড়ে যেতে পারে কিন্তু চন্দ্রজীত এর সিট হয়েছে। যেহেতু ওর আসতে,চলাচলে অসুবিধা আমরা ওকে নীচ তলায়ই সিট দিয়েছি।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মেহরুবা আক্তার।