একজন যক্ষারোগী পনেরো জন সুস্থ মানুষে যক্ষা ছড়াতে পারেন

বিশ্বে যে দশ টি রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান তার মধ্যে যক্ষা অন্যতম। যক্ষা একটি ভয়ানক রোগ। সাধারন এন্টিবায়োটিক ঔষধে এ রোগের ব্যাকটেরিয়া উপর কার্যকরী নয়। ২০১৭ সালে প্রায় ১ কোটি মানুষ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হন তার মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মৃত্যু বরন করেন। এবং প্রায় দশ লাখ শিশু যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয় এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এইডস রোগীর অধিকাংশ মৃত্য বরন করেন যক্ষা রোগে।

এক নাগাড়ে তিন সপ্তাহের অধিক সময় কাশি, গায়ে গায়ে জ্বর, রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা এ হলো যক্ষার প্রধান লক্ষন। এ লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো বুকের একটা এক্সরে, রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, কফ পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও আরো দুতিনটি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের পরামর্শমতো মতো এসব সম্পুর্ণ বিনামুল্যে করা যায়, অথবা এত মুল্য সরকারি ভাবে পরিশোধ করা হয়।

যক্ষ্মা রোগের ওষুধ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামুল্যে পাওয়া যায়। তিনটি বা চারটি এন্টিবায়োটিক এক সাথে এক নাগাড়ে ৬ মাস বা ৯ মাস অথবা ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ মাস খেতে হয়। একজন স্বাস্থ্য কর্মী রোগী কে নিয়মিত ঔষধ খাওয়ানোর কাজটি নিশ্চিত করেন। তবে প্রয়োজনে রোগীর কোন আত্মীয় ঔষধ খাওয়ানোর দায়িত্বটি নিতে পারবেন এতে তার ঐ আত্মীয় কে বিশেষ মাসিক সম্মানী বা বেতন দেওয়া হয়। এছাড়া রোগী কে সুষম খাবার কিনে খাবার জন্যে নগদ অর্থ ও সরকার ও বিভিন্ন এন জি ও সংস্থা দিয়ে থাকে।

প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ একজন মেডিকেল অফিসার এর তত্বাবধানে এই যক্ষা রোগের সনাক্তকরণ, চিকিৎসা কার্যক্রম এবং ফলোআপ হয়। উনাকে মেডিকেল অফিসার ডিজিজ কন্ট্রোল বা এম. ও. ডি. সি বলে। এম.ও. ডি. সি কে কেন্দ্রীয় ও মাঠ বিভিন্ন যক্ষা বিষয়ক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে থাকেন।

একজন যক্ষা রোগী চিকিৎসা না পেলে তার মাধ্যমে গড়ে নুন্যতম ১৫ জন সুস্থ মানুষ যক্ষায় আক্রান্ত হন। যক্ষা ছোঁয়াছে অর্থাৎ হাচি, কাশি, চুমু, আলিংগন এসবের মাধ্যমেই যক্ষা ছড়ায়। যক্ষা রোগীর কাশিতে লেগে থাকা যক্ষার জীবানু উন্মুক্ত পরিবেশে ৬ মাস বেঁচে থেকে তা অন্যকে সংক্রমন করার ক্ষমতা রাখে।

যক্ষার জীবানু সাদা কালো ধনী গরীব বুঝে না। সবাই সমান ভাবে যক্ষায় আক্রান্ত হতে পারেন। যক্ষা রোগাক্রান্ত পুরুষ বা নারীর শিশু সন্তান যক্ষা রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে বেশি। তাই যক্ষ্মা সনাক্ত হলে বা সন্দেহ হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন। এতে রোগীর যেমন উপকার হবে তেমন তার পরিবারের সদস্যদের ও যক্ষা হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

যক্ষা নির্মুলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত সফলতার সাথে এগিয়ে চলেছে। আজ ২৪ শে মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবস। সচেতনতার জন্যে দেশের প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগী ও চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগী ও ঝুঁকিতে থাকা পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে র‍্যালি আলোচনা সভা ও আপ্যায়ণের মাধ্যমে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

ডা. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট ও
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
দক্ষিণ সুরমা সিলেট।

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

স্বাধীনতা দিবসের কলামঃ ৭১ এর চিকিৎসা সেবার গল্প

Tue Mar 26 , 2019
‘৭১ এর চিকিৎসা সেবা : একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ যখন বিধ্বস্ত, তখন ইংল্যান্ডে অবস্থানরত বাঙ্গালি চিকিৎসকেরা চুপচাপ বসে থাকতে পারেননি। দ্রুত সিদ্ধান্ত এর সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠিত হল “Bangladesh Medical Association (uk)” যার সভাপতি ছিলেন ডাঃ এ. এইচ. সাইদুর রহমান ( opthalmologist) এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী (vascular […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo