ইন্টার্নশীপের সুযোগ পাচ্ছে না কেয়ার মেডিকেল কলেজের নব্য চিকিৎসকেরা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার 

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ। ২০১৪ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। মেডিকেলটিতে ২০১৪- ২০১৫, ২০১৫- ২০১৬, ২০১৬- ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) এর রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত। মেডিকেল কলেজের নীতিমালা অনুযায়ী কেয়ার মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় বিএমডিসি তাদের পরবর্তী সেশন গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং কেয়ার মেডিকেল কলেজ এর কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) থেকে চিঠি পাঠানো হয় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনাসহ নানা অসংগতি গুলো ঠিক করার জন্যে। কিন্তু এখন পর্যন্ত “কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ” সেই চিঠি গুলোর সঠিক জবাব দিতে পারেনি বরঞ্চ তারা বিএমডিসি এর আদেশ অমান্য করে হাই কোর্টে রিটের মাধ্যমে পরবর্তী সেশন গুলোর ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

কেয়ার মেডিকেল কলেজের ২য় ব্যাচ ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো নভেম্বর ২০২০ এ যা করোনা প্রাদুর্ভাব এর কারনে ৮ মাস পিছিয়ে আগস্ট ২০২১ এ অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের ফলাফল প্রকাশিত হয় ১৮ অক্টোবর ২০২১। সেই মোতাবেক আমাদের ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার কথা ছিলো ১লা নভেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্ত অন্যান্য সকল সরকারি- বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোতে ১লা নভেম্বর ইন্টার্নশিপ শুরু হয়ে গেলেও, কেয়ার মেডিকেল কলেজ বিএমডিসি এর রেজিষ্ট্রেশন এর আওতায় না থাকায়, আমরা ৬ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ইন্টার্নশিপ শুরু করতে পারিনি। ফলস্বরূপ, তাদের গাফিলতির কারনে ছাত্র-ছাত্রীরা চরম ভোগান্তি এবং মানসিকভাবে হতাশায় পড়ে যায়। কেয়ার মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল এর রেজিষ্ট্রেশন এর আওতায় আসার জন্য যথাযথ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তারা বিভিন্নভাবে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে তারা রেজিষ্ট্রেশন এর ব্যবস্থা করে দিবেন। তাদের কথামত আমরা জানুয়ারিতে ডিউটিতে জয়েন করি।  কারণ  তারা বলেছিলেন আমরা ডিউটি তে জয়েন করলে কয়েকদিনের ভিতরে তারা অনুমোদন এনে দিবেন এবং আমাদের অভিভাবক কে মিথ্যা আশ্বাস দেন এই বলে যে এই ডিউটি’র সময় গুলো  পরবর্তীতে তারা পুষিয়ে দিবেন। কিন্তু ২০ দিন ডিউটি করার পরেও কোনো কাজ না হওয়ায়, আমরা অভিভাবক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.পারভিন ফাতিমা’র কাছে যাই। উনি আমাদের আবারও  নানা রকম মিথ্যা আশ্বাস দেয়। পাশাপাশি কলেজ পরিচালক ডা. গোলাম মোর্শেদ সুমন, কলেজ সচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম আমাদের কে বলেন যে, ২৩ ফেব্রুয়ারিতে কলেজে বিএমডিসি এর সদস্যরা শেষ বারের মত কলেজ পরিদর্শন করবেন এবং সেই পরিদর্শনের পরেই আমাদের ইন্টার্নশিপ শুরু হবে বলে আবারও আস্বস্ত করেন। কিন্তু সেই শেষ পরিদর্শন তথাপি মোট ৪ টি পরিদর্শনের পরেও কেয়ার মেডিকেল কলেজ বিএমডিসি থেকে রেজিষ্ট্রেশন এর অনুমোদন আনতে ব্যর্থ হয়।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএমডিসি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেলে জানতে পারি যে, কেয়ার মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ত্রুটি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অসংগতি থাকায় বিএমডিসি কেয়ার মেডিকেল কলেজকে রেজিষ্ট্রেশন দিতে বিলম্ব করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা চরম হতাশায় পড়ে যাই এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে মাইগ্রেশনের দাবি জানাই। তারা প্রথমে দ্বিমত পোষণ করলেও  বারংবার বলার পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ইন্টার্ন ব্যাচকে মাইগ্রেশন করাতে রাজি হয়। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বরাবর লিখিত আবেদনে স্বাক্ষর করেন এবং কথা দেন যে আমাদের পরবর্তী মাইগ্রেশান সংশ্লিষ্ট কার্যে আমাদেরকে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। কিন্তু তারা তাদের কথার খেলাপ করেন। আমাদের কোনো কাজে কলেজের চেয়ারম্যান, পরিচালক এমনকি  প্রিন্সিপালও কোনোরকম সহযোগিতা করছেন না। বারংবার সহযোগিতা চেয়ে অনুরোধ করতে গেলে, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ফারহানা সালাম সরাসরি বলে দিয়েছেন যে আমাদের দায়িত্ব তার উপর বর্তায় না। অপরদিকে চেয়ারম্যান ডা.পারভিন ফাতিমা তার দ্বায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করতে তার  চেম্বারে বেশ কয়েকবার গেলেও তাকে সেখানে পাইনি এবং তার  বাসায় গেলেও তাকে অনুপস্থিত পাই। এমনকি তিনি নিজে থেকেও কোনোরকম যোগাযোগ রাখেন নি।

তাদের এসকল কর্মকান্ডে, ইতোমধ্যেই আমরা “২০১৫-২০১৬ সেশনের” নব্য পাসকৃত ডাক্তাররা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং আমাদের ভবিষ্যত জীবন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। আমরা জানি না আমাদের ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার জন্য আর কতদিন বা কত মাস অপেক্ষা করতে হবে। ৬ বছর কষ্ট করে পড়ালেখা করেও, কেয়ার মেডিকেল কলেজ এর প্রতারণা, জালিয়াতির কারনে আমরা ভুক্তভোগী, যা মোটেও কাম্য নয়।

এমন অবস্থায় আমরা-
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

সব শেষে আবারো উল্লেখ করতে চাই “আমরা ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের, কেয়ার মেডিকেল কলেজের একদল তরুণ অভাগা ছাত্র-ছাত্রী, যারা বিএমডিসি কতৃক “স্টুডেন্ট রেজিস্ট্রেশন পেয়ে, নিয়মিত সেশনে পাস করেও শুধুমাত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি পক্ষান্তরে বিএমডিসি কতৃক “প্রভিশনাল রেজিস্ট্রেশন” না পাওয়ায় ৬ মাস থেকে শুধু পথে পথেই ঘুরছি।

প্ল্যাটফর্ম ডেস্ক রিপোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিএসএমএমইউতে অ্যাডভান্স ক্লিনিক্যাল ফেলোশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রাম

Tue Apr 26 , 2022
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি ‘অ্যাডভান্স ক্লিনিক্যাল ফেলোশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রামে’ আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে উপ-রেজিস্ট্রার ডা. জিএম সাদিক হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি ‘অ্যাডভান্স […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo