বলিভিয়াতে মারাত্মক হেমোরেজিক জ্বরের প্রাদুর্ভাব, সংক্রমিত হতে পারে মানুষ থেকে মানুষে

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ নভেম্বর, ২০২০, শুক্রবার

গত সোমবার, ১৬ নভেম্বর সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) একটি মারাত্মক প্রাণী ভাইরাস “চ্যাপারে” এর কথা প্রকাশ করেছে। যা জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি, মাড়ির রক্তক্ষরণ, ফুসকুড়ি, চোখের পিছনে ব্যথার সৃষ্টি করে এমনকি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে।

সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে গ্রামীণ বলিভিয়ার চ্যাপারে প্রদেশে “চ্যাপারে ভাইরাস” (ইবোলার মত একটি রোগ) এর একটি নিশ্চিত কেস পাওয়া যায় এবং এরপর রোগটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি গবেষণার মতে, পরবর্তীতে আবারও ২০১৯ সালে, বলিভিয়াতে ৫ জন লোক আক্রান্ত হয়। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, বলিভিয়ার রাজধানী লা-পাজ এর কাছাকাছি অঞ্চলে, ভাইরাসটি বডি ফ্লুইডের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছিল এবং ৩ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। ২০২০ সালে ভাইরাসটির কোনো সচল প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি এবং ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কোনো প্রাদুর্ভাব ঘটেও সেটা মহামারী সৃষ্টি করবে না। সিডিসি (CDC) এর বিবৃতি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৫ টি নিশ্চিত কেসের মধ্যে ৩ জনই ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী। যাদের একজন ছিলেন মেডিকেল রেসিডেন্স, একজন ছিলেন এম্বুলেন্স মেডিক এবং একজন ছিলেন অন্ত্রবিদ। যারা আক্রান্ত রোগীর বডি ফ্লুইড এর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে থেকে ২ জন মারা যায়। গবেষকরা চ্যাপারে ভাইরাসের জেনেটিক মেটারিয়ালের অংশকে আর.এন.এ (RNA) হিসেবে শনাক্ত করে। নতুন প্রাদুর্ভাবের বিবরণে দেখা গেছে যে, রোগটি এখন একজন ব্যক্তি থেকে অন্যজনে ছড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অ্যাম্বুলেন্স মেডিক এর কথা যিনি আক্রান্ত ব্যক্তিকে রিসাসিটেশন দেওয়ার সময় ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন।

জর্জেটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষক কলিন কার্লসন এর মতে, হেমোরেজিক ফিভার যেমন- ইবোলা বা ইবোলার মত রোগ। শ্বাসযন্ত্রের রোগ যেমন- ফ্লু বা কোভিড-১৯ এর মত বৃহৎ পরিসরে কদাচিৎ ছড়ায়। কারণ এই ধরণের হেমোরেজিক ফিভার এর মতো রোগে সংক্রমণের পর খুব দ্রুত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় এবং সংক্রামণের জন্য বডি ফ্লুইডের সাথে সরাসরি সংস্পর্শ প্রয়োজন। কিন্তু এর প্রাদুর্ভাব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে নিয়ে যেতে পারে। কারণ বিপুল সংখ্যক স্বাস্থকর্মী আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে।

২০১৯ সালের চ্যাপারে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলিভিয়ান সিটি অফ স্যান্টা ক্রুজের সরকারি পরীক্ষাগারের একটি বডি ফ্লুইডের নমুনা পরীক্ষায়। যে ডাক্তার নমুনাটি সংগ্রহ করেছিলেন তাঁর ধারণা ছিল যে, রোগীটির হয়তো ডেঙ্গু সংক্রামিত হয়েছে। কারণ দক্ষিণ আমেরিকাতে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব খুব বেশি এবং হেমোরেজিক ফিভারের লক্ষণ দেখলে যে কোনো রোগের আগে সেটিকে ডেঙ্গু হিসেবে ধারনা করা হয়। সিডিসি এর একজন গবেষক মারিয়া মোরেলেস-বেতুল ডেঙ্গু ও চ্যাপারে এর ব্যাপারে মন্তব্য করেন-

“It’s similar. Very similar.”

কিন্তু নমুনা পরীক্ষার পর দেখা যায়, ডেঙ্গু ভাইরাসের কোনো চিহ্ন নেই। গবেষকরা ঐ অঞ্চলের অন্যান্য প্রচলিত রোগজীবাণু যেমন- ইয়েলো ফিভার, মাচুপো (আরও একটি বিরল এবং মারাত্নক হেমোরেজিক রোগ) এর জন্য পরীক্ষা করলেও তার সবগুলো নেগেটিভ আসে। তখন সেই পরীক্ষাগারে চ্যাপারে ভাইরাস যাচাইয়ের জন্য কোনো নিদিষ্ট পরীক্ষার ব্যবস্থাও ছিল না।
যেহেতু ইমারজিং ডিজিজ দেখার জন্য সিডিসি এবং লাতিন আমেরিকা- কেন্দ্রিক প্যান- আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থা (PAHO) একসাথে কাজ করছিল। তাই লাতিন আমেরিকার থেকে সিডিসি কে নমুনা গুলো পরীক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়। এবং পরবর্তীতে নমুনাসহ, প্রাদুর্ভাবটির সমস্ত তথ্য সিডিসি কে পাঠানো হয়। সিডিসি এটিকে পরীক্ষাগারে আসা একটি ভাইরাল হেমোরজিক জ্বর হিসাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সুরক্ষা স্তরের সাথে নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

পরবর্তীতে সিডিসি কর্তৃক ঐ অঞ্চলে গবেষণার জন্য একটি দল পাঠানো হয়। গবেষকরা একজন ব্যক্তির সিমেনে আক্রান্ত হওয়ার ১৬৮ দিন পরেও ভাইরাল আরএনএ পায়। এছাড়াও তারা ঐ ব্যক্তির বাসা এবং তার আশেপাশের কৃষিজমি থেকে সংগৃহীত ইঁদুরেও ভাইরাসটির চিহ্ন পায়। যদিও এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি যে রোগটি ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়িয়েছে এবং আক্রান্ত ইঁদুর মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে কি না।

Omaima Akter Maria

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছাদের পলেস্তারা খসে দুর্ঘটনা

Fri Nov 20 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ নভেম্বর, ২০২০, শুক্রবার  আজ ২০ নভেম্বর, শুক্রবার, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে জু’মার নামাজের আগে বারান্দার ছাদ থেকে ১০ বর্গফুটের অধিক বিশালাকার পলেস্তারা বিকট শব্দে খসে পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে সেখানে সেসময় ছাত্ররা কেউ উপস্থিত না থাকায় কারো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কথা ভেবে ছাত্রদের মধ্যে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo