হলুদ সাংবাদিকতার শিকার ডা. নাদিরা বেগম, চিকিৎসক সমাজের ক্ষোভ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০

সিলেটের প্রথিতযশা প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নাদিরা বেগমকে হেয় করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় চিকিৎসকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে এ নিয়ে কথা বলেছেন। অধ্যাপক ডা. নাদিরা বেগম অত্যন্ত সম্মানিত চিকিৎসক। তিনি যত্ন নিয়ে রোগী দেখেন এবং রোগী সন্তুষ্ট। তাঁর রোগীরা তাঁকে হেয় করে সংবাদ প্রকাশ করা স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। সিলেটের স্থানীয় নিউজ পোর্টাল অনলাইনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাঁর ফি নিয়ে সমালোচনা করে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে। করোনা দুর্যোগে যখন সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে, তখন গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতা অবলম্বন ও ঘরে বসে চিকিৎসা পরামর্শ নেয়ার সুবিধার্থে তিনি অনলাইনে চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া শুরু করেন। এতে যেমন ঘর থেকে বের হয়ে, চেম্বারে আসার ঝক্কি পোহাতে হয় না। আবার যানবাহন সংকটে রোগীর হয়রানি হতে হয় না। ঘরে বসেই চিকিৎসা পাওয়ায়, যাতায়াত খরচও বেঁচে যায়। স্বেচ্ছায় রোগীরা ফি দিয়ে তাঁর পরামর্শ নেন। কারো জন্যেই বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি কেউ কেউ আর্থিক সমস্যায় আছেন, টের পেলেই অধ্যাপক নাদিরা বেগম তাঁর ফি ফিরিয়ে দেন। রোগী যেখানে সন্তুষ্ট, সেখানে একজন সম্মানিত চিকিৎসক কে প্রকাশ্যে সামাজিক ভাবে হেয় করা হলে, সারাদেশে কোনো চিকিৎসকই আর অনলাইনে চিকিৎসা দেয়ায় আগ্রহী হবেন না। জরুরি রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসা ডাক্তাররাই দিয়ে থাকেন। এমন অপারেশন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অনেক চিকিৎসক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের নেয়া এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো উচিত বলে সমাজের সচেতন মহল মনে করেন। অধ্যাপক ডা. নাদিরা বেগমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হল-

“আমি সাধারনত লেখালেখি করি না, কিন্তু আজকে একটি বিশেষ কারনে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। এই লেখাটি শুধুমাত্র আমার সহকর্মী ডাক্তার এবং ছাত্র-ছাত্রী যারা কিনা আমার পরিবার সমতুল্য তাদেরকে উদ্দেশ্যে করা দেওয়া, যাতে করে অন্তত তারা আমার সম্পর্কে কোনো ভুল ধারনা পোষন না করেন। প্রথমে আসি, কেন আমি অনলাইনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করছি?

১। করোনা পরিস্থিতিতে সারাসরি রোগীদের বিশেষ করে গর্ভবতী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বিপদজনক। এতে করে অনেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার (community transmission) সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে নিরাপত্তা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা থাকায়, সিলেটের অন্যান্য ডাক্তারদের মত আমি চেম্বার বন্ধ রাখি। এক্ষেত্রে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমি অনলাইন বা ভিডিও কলের সহায়তা নেই।

২। চেম্বার বন্ধ রাখার কারনে যেসব পুরাতন রোগী ফলোআপ এর জন্য কথা বলতে চান এবং রিপোর্ট দেখাতে চান, তাদের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে সংযুক্ত হই। বিশেষ উল্লেখ্য যে, ইমার্জেন্সি রোগীদের বা যাদেরকে সরাসরি দেখা প্রয়োজন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলি এবং আমি সশরীরে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসি।

৩। এর পাশাপাশি আগের মত অনেক রোগীরাই প্রায়শই ফোন করেন এবং এক্ষেত্রে যদি সংক্ষেপে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, তখন বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে দেই। আর যদি রোগীর সাথে দীর্ঘসময় আলাপ করার প্রয়োজন হয় বা রিপোর্ট দেখার দরকার হয় তখন সিরিয়াল নিতে বলি।

এখন আসি, আমি কোন প্রক্রিয়ায় রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছিঃ

১। ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগীর সাথে সংযুক্ত হওয়া।

২। রোগীর কমপ্লেইন শোনা।

৩। আগের ব্যবস্থাপত্র (Previous prescription) এবং অন্য ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র (prescription) বিশেষত যাদের অন্য রোগ (other co-morbidity) আছে, এই বিষয়গুলো সময় নিয়ে দেখি।

৪। এরপর রোগীকে মৌখিকভাবে পরামর্শ দেই ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (relevant investigation) করতে বলি । এরপর প্রেসক্রিপশন (prescription) লিখে সাথেসাথে ছবি তুলে পাঠাই।

৫। প্রেসক্রিপশন দেখার পর রোগীর যদি আরো প্রশ্ন থাকে তাহলে ধৈর্য্য সহকারে উত্তর দেই। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রক্রিয়ায় একজন রোগীকে চিকিৎসা দিতে ২০-২৫ মিনিট সময় লেগে যায়।

৬। পরবর্তী রিপোর্ট দেখার তারিখ দেই এবং বিনামুল্যে রিপোর্ট দেখে দেই। তখন যাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরী বলে মনে করি, তাদের ভর্তি হতে বলি। এখন আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমার এই পদক্ষেপটি অন্যায় কিনা? আমাকে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপমানিত করা হচ্ছে এইটা কি মেনে নেওয়ার মত? আমি আমার মনের কথাগুলো নিজের ভাষায় আপনাদের জানালাম। আশা করি আপনারা চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন।”

স্টাফ রিপোর্টার/ শরিফ শাহরিয়ার।

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সিলেটে ইন্টার্ন-চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত

Thu Apr 23 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজঃ ২৩ এপ্রিল, ২০২০ বুধবার রাতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন-চিকিৎসক। বিষয়টি নিশ্চিত করেন এই হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে নতুন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo