সিওমেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাংচুর ও হত্যার হুমকি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ জুলাই ২০২০, রবিবার

গত ৩০ জুন ২০২০, রোজ মঙ্গলবার, ১১টা ৩০ ঘটিকায় মধুবাজার, পূর্ব ধানমন্ডি এলাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেহবুবা সুমাইয়ার বাসায় অতর্কিত হামলা চালায় একদল ভাড়াটে গুন্ডাবাহিনী।

এসময় বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করে তারা। এতে বাধা দিতে গেলে পরিবারের সদস্যদের উপরও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাক্রমে জানা যায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করেই এরূপ হামলা চালানো হয়। উক্ত শিক্ষার্থীর বাবা, মা, বড় বোন ও নানাকে রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে তারা। বড় ভাই ভাড়াটিয়াদের সহায়তায় সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হয়। তার পিতাকে প্রায় ১৫ জন লোক ঘিরে মারধর করে এবং মেরে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়। তারপর মারা গিয়েছে মনে করে ফেলে যায় এবং বড় বোনের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর সবাই মিলে লুটপাট করে ভেঙেচুরে ফেলে ঘরের সব জিনিস।

এসময় পুলিশকে ফোন দেয়া হলেও তারা না ধরায় ৯৯৯ এ কল করে অনেক অনুনয় করার পর পুলিশ এসে তার বাবাকে উদ্ধার করে এবং পুলিশ আসার পরেও বাসায় ভাংচুর চলতে থাকে। পুলিশ স্পটে থাকা অনেককেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তবে থানায় কেইস ফাইল করতে গেলে তাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট অসহযোগিতা প্রকাশ পায়। অবশেষে রাত ৩ টা পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করলে তারা একটি দূর্বল ধারায় মামলা দেন।

দুর্বৃত্তরা পরবর্তীতে নিয়ে যাওয়া মোবাইলে সেইভ থাকা সব নাম্বারে কল করতে থাকে এবং ভিকটিমকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। পুলিশের কাছে বার বার নিরাপত্তা চেয়েও তারা ব্যর্থ হয়। তারা ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে রাতে বাড়িতে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সবাইকে হত্যা করবে বলে।

ঘটনার বর্ননা ভিক্টিমের নিজস্ব ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে তুলে ধরা হল:

“আমি একজন লাঞ্চিত নির্যাতিত নারী বলছি। এমন একটি সময়ে এই পোস্টটি লিখছি, যখন আমি নিজেই জানি না কতক্ষণ পরেই আমার পুরো পরিবার একসাথে মারা যাবো।
আমি মেহবুবা সুমাইয়া, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঠিকানাঃ মধুবাজার, পূর্ব ধানমন্ডি।

গত ৩০/৬/২০ তারিখে আমাদের পরিবারের উপর ঘটে যায় এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। বেলা ১১ টা ৩০, আমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। হঠাত শুনি কয়েকশো মানুষ একত্রে জড়ো হয়ে আমাদের বাড়ি ভাংচুর করছে। রুম থেকে বেরোবার আগেই দেখি তারা আমাদের বাসার মেইন গেইট ভেঙে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের ঘর বাড়ি সব কুপাচ্ছে আর আব্বু কে মাথায় রড দিয়ে মারতেছে। প্রায় ১৫ জন লোক আমার আব্বুকে ঘিরে ধরে মারে এবং রক্তাক্ত করে ফেলে। তারা আমাদের ঘরের মধ্যে ঢুকে আমার বড় বোনকে মাথায় রড দিয়ে বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রড দিয়ে আঘাত করে, এক পর্যায়ে তাকে শ্লীলতা হানির চেষ্টা করে। আমার আম্মু আপুকে বাঁচাতে গেলে তারা আমার আম্মুকে মুখের মাঝে রড দিয়ে বাড়ি দেয়, নানুকেও তারা রড দিয়ে আঘাত করে। আমাকে দুই জন এসে রড দিয়ে পিটায় আমার রানে রড দিয়ে খোচা মারে। চড় থাপ্পর মারে, আমি সজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। এক পর্যায়ে জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি তারা আমার আব্বুকে একটা আলাদা রুমে নিয়ে গিয়ে পা দিয়ে সমানে লাত্থি দিচ্ছে, আমার আব্বুর রক্তে আমাদের পুরো বাড়ি লাল হয়ে যায়। আমার বড় ভাইকে তারা মারতে মারতে গেটের বাহিরে নিয়ে যায়। আমার ভাইকে আমাদের বাসার ভাড়াটিয়ারা রক্ষা করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে বলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। এক পর্যায়ে তারা আমার আব্বুকে মেরে নীচে ফেলে দেয় আর আব্বু সিড়ি দিয়ে দোতলা থেকে গড়াগড়ি করতে করতে নীচে পড়ে যায়, সন্ত্রাসীরা ভাবে আমার আব্বু মনে হয় মারা গেছে। আব্বু সজ্ঞাহীন, আপু সজ্ঞাহীন, তারা এখন সবাই মিলে প্রায় ৫০ জন নিচতলা দোতলার প্রতিটি রুমে ঢুকে ঢুকে সব জিনিস ভেঙে ফেলে, পঞ্চাশ হাজার টাকা, পাঁচ ভরি গহনা, জমির দলিল পত্র, সাত সেট মোবাইল ফোন সব নিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি তারা ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই ঘটিয়ে ফেলে। আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি আম্মু পুলিশে কল দিচ্ছে কিন্তু পুলিশ আসছে না। পরে ৯৯৯ এ কল করে অনেক কান্নাকাটি করার পর পুলিশ এসে আব্বুকে উদ্ধার করে এবং পুলিশ আসার পরেও আমাদের বাসায় ভাংচুর চলতে থাকে। পুলিশ স্পটে থাকা অনেককেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

এই হামলার পিছনে দায়ী ব্যক্তি হলেন এলাকার সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু জাহাংগীর ওয়াজেদ এবং আবুল কাশেম।
আমার আব্বু ২০১০ সালে উক্ত ঠিকানায় মোঃ গোলাম মোস্তফার নিকট থেকে সাফ কাওলা মূলে জমি ক্রয় করে। সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে আমরা বসবাস করছি।
জমি ক্রয়ের পর থেকেই জাহাংগীর ওয়াজেদ এবং আবুল কাশেম নানা ভাবে আমাদের নিকট চাঁদা দাবী করতো এবং জমি থেকে উচ্ছেদের নানা ষড়যন্ত্র করতো। আবুল কাশেম এক পর্যায়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে মূল মালিক যার নাম মোক্তার আহমদের নাম ধারণ করে জাল ভোটার আইডি বানিয়ে মোক্তার আহমেদের পিতা মাতার নামের সাথে নিজের পিতা মাতার নাম মিল রেখে নতুন একটি আইডি কার্ড বানায়। সে সম্পূর্ণ বে আইনী ভাবে জাল দলিলের মাধ্যমে ভূমিদস্যুত জাহাংগীর ওয়াজেদের কাছে আমার আব্বুর জমি বিক্রি করে দেয় এবং সাথে মামলা ও করে আব্বুর নামে। আব্বু সেই মামলায় রায় পায় এবং আমরা আমাদের বাড়িতেই বসবাস করতে থাকি। মামলায় হেরে গিয়ে তারা তাদের পালিত সন্তাসী বাহীনীর মাধ্যমে আমাদের কে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নামে আমাদেরকে সপরিবারে হত্যার জন্যে আমাদের উপরে সশস্ত্র আক্রমণ চালায়।

আমরা পুলিশে কেইস ফাইল করতে গেলে পুলিশ কেইস নিতে চায় না, গড়িমসি করতে থাকে, আব্বুকে ঢাকা মেডিকেল থেকে ফিরে থানায় আসার জন্যে বলে। অসুস্থ শরীরে হাতে পায়ে জখম নিয়ে আব্বু থানায় আসে। এদিক থেকে থানার বাহিতে বাকি সন্তাসীরা উত পেতে থাকে কখন আমরা বের হবো। অনেক অনুরোধ করার পর পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়, কিন্তু আমাদের আসামীদের একেক করে ছেড়ে দেয়। রাত ৩ টা পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রেখে থানার ওসি সাহেব উনার মন মত একটা মামলা দেন। দূর্বল ধারায় মামলা নেন।
আমাদেরকে চরম অসহযোগিতা করেছেন। আসামীরা থানা থেকে আমাদের সামনে বের হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা পুলিশ কে বলায় উল্টা ওসি সাহেব আমাদেরকে ধমক দেন। একেক করে পুলিশ স্পট থেকে ধরে আসামী ছেড়ে দেয়। তারা পরবর্তীতে আমাদের নিয়ে যাওয়া মোবাইল থেকে মোবাইলে সেইভ থাকা সব নাম্বারে কল করতে থাকে। আমার নাম্বারে কল দিয়ে আমাকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। এত সব কিছুর পরেও পুলিশ ওদের পক্ষ নিয়ে আব্বুর বিরুদ্ধে ওদের মামলা নেয় আব্বুকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়।

আসামীদের পরিচয়:
১) জাহাঙ্গীর ওয়াজেদ ঠিকানাঃ৮/২, পরিবাগ মোতালেব টাওয়ার(৪র্থ তলা)
২) আবুল কাশেম। ঠিকানাঃ ৯৯৯, বাওনিয়া, তুরাগ থানা।

আমাদের জমির মালিকানাঃ ছবিতে সব কিছু ডিটেইলস আছে। পুলিশের কাছে আমরা বার বার নিরাপত্তা চেয়েও ব্যর্থ। ওরা ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে রাতে বাড়িতে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। যে কোন সময় আমাদের সবার মৃত্যু ঘটতে পারে, তাই আমরা সকলের নিকট সাহায্য চাই বেঁচে থাকার জন্যে আপনাদের সবার সাহায্য প্রয়োজন। আল্লাহ ছাড়া আমাদের পাশে এখন কেউ নেই আমরা কোথাও কোন নিরাপত্তা পাচ্ছি না।”

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ডিএএমসিতে চিকিৎসকদের সহযোগিতায় "ডায়াবেটিক ডক্টর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন"

Sun Jul 5 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ জুলাই ২০২০, রবিবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত চিকিৎসকদের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে ডায়বেটিক এসোসিয়েশান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুর। হাসপাতালে কর্মরত সকল চিকিৎসকেরা তাদের পদ অনুসারে অর্থায়ন দিয়ে গঠন করেছে “ডায়াবেটিক ডক্টর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন”। গত ২৭ জুন থেকে ডায়বেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর চৌধুরী […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo