লাইফ ইন লকডাউন, ডে সেভেনটি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুন ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত মারা গেলেন। একজন মানুষের কখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া উচিত?

মহাভারত মতে অর্জুন শ্রেষ্ঠ ধনুর্বিদ। তিনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি। দিল্লির সিংহাসনে বসে রাজা যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে চাইলেন। একটি ঘোড়া ছেড়ে দেওয়া হবে, সে যেসব রাজ্যের উপর দিয়ে যাবে তাদের বাধ্যতামূলক কর দিতে হবে। ঘোড়ার রক্ষক হলেন স্বয়ং অর্জুন।

মণিপুরে বভ্রুবাহন ঘোড়া আটকে দিলেন। অর্জুন যুদ্ধ করলেন, হেরে গেলেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর- যিনি মহাযুদ্ধ কিছুদিন আগে জিতেছেন, এখন দিল্লির সৈন্যদল নিয়েও হেরে গেলেন অখ্যাত অপরিচিত এক রাজার কাছে! এর কিছুদিন পর দস্যুরা যাদব বিধবাদের কিডন্যাপ করতে গেলে অর্জুন চেষ্টা করেও তাদের আটকাতে পারলেন না। তিনি ঋষি ব্যাসদেবের শরণাপন্ন হলেন। ব্যাসদেব বললেন- এটা সময় তাদের পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার।

একজন মানুষ যখন তার কাজ শেষ করে ফেলবে, যে কাজ দিয়ে সে পরিচিত তা আর করতে পারবে না- তখন তার পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়াই উত্তম। মানে পৃথিবীর তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

আমি টার্মিনাল ইলনেস এর রোগী দেখেছি। কিডনি কাজ করে না, ফুসফুস কাজ করে না, মস্তিষ্ক কাজ করে না। সবসময় মনে হতো এটি সময় তাদের পৃথিবীকে গুডবাই বলার। সে একজন ‘মানুষ’, কোনো যন্ত্র নয়। যন্ত্রের মতো পার্ট বাই পার্ট কাজ কেন করবে। শতপদের ঔষধ সহ তার বেঁচে থাকা অন্যায়। এটি শারীরিক দিক, একই কথা মানসিক দিক থেকেও প্রযোজ্য। আত্মীয় স্বজন সবসময় আবেগ দ্বারা চালিত হয়।

আমি জানি না আমি ভুল বা ঠিক। আমার মনেহয় মানুষের জন্য মৃত্যু কখনোই ‘গিফট’ নয়। সে নেকেড এইপ সে ভাবতে পারে, এনালাইসিস করতে পারে, বিচার করতে পারে- এটি তার ব্যক্তি সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। তাকে বুড়ো হতে হবে মরার জন্য- এমন কোনো ওয়াদা নেই। বা অমুকে বেঁচে আছে বলে তাকেও বেঁচে থাকতে হবে- ছোটলোকি চিন্তা ভাবনা। তার একটি হনার থাকা উচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার।

‘পারসিস্টেন্ট স্যাডনেস’ ‘লস অফ ইন্টারেস্ট’ ‘ফিলিং ল’ -এসব ডিপ্রেশনের সাইন। কিন্তু এগুলো তো মিথ্যে নয়। ঘোলা চশমা দিয়ে না দেখলেও পৃথিবী ঘোলা। দেখলাম পত্রিকার শিরোনামঃ ‘সুশান্ত কাটস শর্ট এ ব্রাইট ফিউচার’। এ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বর্তমানের ঠিক কোন কাজে আসবে। আর আপনি কে বিচার করার- সে ভুল না সঠিক! আপনি কি ভগবান?

আমি জানি এ ভাবনা গুলো ডিস্টার্বিং। আমি পারছি না নতুন কিছু ভাবতে বা বলতে বা কেন বেঁচে আছি বুঝতে, একসময় হয়তো ভাল সময় আসবে। আমি যখন ভাবছি আমার তেমন প্রয়োজন নেই- এমনও তো হতে পারে আমাকে পৃথিবীর ‘খুব প্রয়োজন’। কিন্তু কখনো কখনো শহরের উঁচু বিল্ডিং গুলো পাহাড়ের মতো দেখায়। সবচেয়ে উচুঁটা সবচেয়ে উচুঁ পাহাড়। আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফিসফিস করে ডাকে- একবার পাখির চোখে পৃথিবীটা দেখতে। এরকম নিশ্চয় অনেকের হয়। সুশান্ত সিং রাজপুতরা জাস্ট একটু বেশি সাহসী। তিনি যদি নতুন কিছু করতে না পারেন, তার কোটা শেষ করে ফেলেন- কেন বেঁচে থাকবেন।

আমি জানি না কথা বললে নাকি এ চিন্তা গুলো কমে। অন্তত বইপত্রে তাই লেখা। ‘টক, ওপেনলি টক এবাউট…’। কোথায় বলতে হবে তা কেউ বলে না। সাইকিয়াট্রিস্টরা অল্প মেধাবী- উনারা রোগ ও সামান্য সমস্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। তাই লিখে রাখছি। আর ওদের কাছে গেলে লোকে ‘পাগল’ বলবে। সমস্যা হচ্ছে এ পৃথিবীর বেশিরভাগ লোক শুয়েই ঘুমিয়ে যায় এবং তারাই অন্যের সুস্থতার সার্টিফিকেট দেয়। যখন অনেক কিছু এখনো আবিষ্কার করা বাকি।

(এটি ডায়েরির মতো লিখছি অনেকদিন। আপনার উপদেশ/সান্ত্বনা/অভিমত/প্রেসক্রিপশন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেমন যেন বিরক্তি সারা গায়ে প্যাঁকের মতো ঠেসে লেগে আছে- টের পাই। এটি করোনার চেয়েও বেশি খারাপ। মাফ করবেন যারা পড়েছেন আমার এ লেখাটিকে।)

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৫৩ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩৮৬২ জন

Tue Jun 16 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩,৮৬২ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৫৩ জন, আরোগ্য লাভ করেছেন ২,২৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ৯৪,৪৮১ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ১,২৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ৩৬,২৬৪ জন। দুপুর ০২.৩০ ঘটিকায় […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo