লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

আফগানিস্তানে তখন কঠিন কঠোর ইসলামী শাসন আসতে আর কিছুদিন বাকি। সৈয়দ মুজতবা আলী আফগান সরকারের প্রমোশন পেয়ে গেছেন। সবাইকে ডিঙ্গিয়ে তিনি তখন সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী। অন্য ভারতীয়দের মাথায় হাত। তারা গিয়ে দরবার করলো শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। ‘মুজতবা আলীর সার্টিফিকেট বিশ্বভারতী’র, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত সরকারের রিকগনিশন নেই’।

আফগান মন্ত্রী এক কথায় তাদের উড়িয়ে দিলেন। বললেন- ‘আপনাদের সার্টিফিকেটে আছে গভর্নরের সাইন। এ রকম গভর্নর ক্ষুদ্র আফগানিস্তানেই ভুড়িভুড়ি। আর আগা মুজতবা আলীর কাগজে আছে মশহুর শাইর রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোরের। যিনি পৃথিবীর কাছে এ প্রাচ্যকে চিনিয়েছেন (চশম রওশন করদে অন্দ…)। কোন সাইনের মূল্য বেশি?’

গুণী’র আবার ধর্ম-বর্ণ-জাতি পরিচয় কী! বুদ্ধের অনুগামী হতে বৌদ্ধ হওয়া লাগবে? বিদ্যানন্দ-এর চেয়ে চিন্তাভাবনায় আমরা সাধারণরা অনেক এগিয়ে আছি। অন্তত পথ চলা শুরু করলে আর পিছন ফিরি না।

আমার তিনজন ঘনিষ্ঠ (কী বলবো? ফ্রেন্ডও বলা যায় মেন্টরও বলা যায়) সাবেক কলিগের কোভিড পজিটিভ এসেছে। একজনের চার বছরের ছোট মেয়েটার আজ জন্মদিন। আজকের দিনে মা হয়ে মেয়েকে দেখতে হবে দূর থেকে। দ্বিতীয় জন নিজেকে নিয়ে নয়, চিন্তিত তার বাবাকে নিয়ে। মা-কে হারিয়েছেন এক বছর। টেনশনে আছেন- বাবার স্যাম্পল আজ যাবে। তৃতীয়জনকে নিয়ে আগেই লিখেছিলাম। তার স্ট্যাটাসে আশঙ্কা ছিল। ছিল যুক্তি, জীবনস্মৃতি, ভর্ৎসনা, অভিমান। আমি বাঙলা তর্জমা করেছিলাম। আশঙ্কা সত্যি হলো। দুই শিশু বাচ্চা রেখে তিনি পজিটিভ।

কত ভয় আর কত দুশ্চিন্তা নিয়ে যে এ সময়ের ডাক্তাররা ডিউটি করছেন- তার কোনো লেখাজোকা নেই। আইসোলেশনে গিয়েও বলতে পারেন না সোশ্যাল স্টিগমাটার ভয়ে। করোনা শরীর সইবে, সমাজ সইতে পারবে? বেসরকারি ডাক্তার স্টাফদের কোনো ঝুঁকি ভাতা নেই অসুস্থ ভাতা নেই। সুরক্ষা বিহীন ভাবে আক্রান্ত হওয়ার অধিকার আছে শুধু! ‘ভাতা’ তো দূর, বেতনই বন্ধ হয় হয়! ঈদের বোনাস তো গেছেই। অথচ এ বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল গুলো দ্বিগুণ তিনগুণ পাঁচগুণ দশগুণ টাকা নিতেও দ্বিধা করে না।

২৮ তারিখ পাঠানো স্যাম্পল, রিপোর্ট আসলো ৫ তারিখ। সেও খোঁচা দিয়ে দিয়ে! কে দায় নিবে? কার কাছে বলবো? আজ থেকে কয়েকমাস পরে আমাদের মা বাবার খুনীর নামে আমাদের নাম হবে না, সে সায়েন্স খুব অগ্রসর নয় বলে!

এদিকে প্রায় সবকিছু খুলে যাচ্ছে। আজ বাজারে দেখলাম উপচে পড়া ভীড়। আমি একটু দেরী করে গেছিলাম যেন ভীড় কিছু কমে। মোড়ে চারজন পুলিশ দেখেছি, একজন পিপিই পরে বসে আছেন। এতলোক রাস্তায় নেমেছে বেচারারা কি করবে! আজ প্রথম রেস্টুরেন্টও খোলা দেখলাম। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্ভবত অর্থনীতি আর জীবননীতির মধ্যে অর্থনীতিকে বেছে নিচ্ছেন। সব দেশেই লকডাউন শিথিল হচ্ছে। পুঁজিবাদে মানুষের জীবনের মূল্য নাকি কম।

কাল থেকে মসজিদ উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরিস্থিতিতে সব স্বাভাবিকের মতো দেখাচ্ছে। যদিও যে জন্য এতকিছু সে করোনাভাইরাস ট্রান্সমিশন কমে নি। মৃত্যুও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ‘উই হ্যাভ টু বি রেডি টু লিভ উইদ করোনাভাইরাস’। আমাদের করোনাভাইরাস সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। খবরে শুনলাম বিদেশ থেকে নাকি আরো প্রবাসী আসছেন।

এরমাঝে লেখালেখি ও আঁকা-আঁকি করার জন্য দুইজন গুণী লোককে গ্রেফতার করা হলো। এ রেগুলার কলাম বন্ধ করে দিব কিনা ভাবছি। লেখাগুলো ধারাবাহিক ভাবে প্ল্যাটফর্ম প্রকাশ করছিল। তাদের ধন্যবাদ।

জানি না আজ থেকে মাসখানেক পরে কি ঘটবে। আমরা অনেকেই আক্রান্ত হবো, অনেকেই টেস্টের পিছনে ঘুরবো, অনেকেই মারা যাব। সবকিছু খুলে যাচ্ছে যখন এসব মাস্ক বা হ্যান্ড ওয়াশে খুব বেশি কাজ হবে না। আমরা যারা একটু কম বয়সী বা তেমন জানা অসুখ নেই, আক্রান্ত হয়ে হয়তো বেঁচে যাব। তবে আমাদের সিনিয়র প্রজন্ম হয়তো হারিয়েই যাবে।

আরো একমাস আধাপেটা হয়ে বাঁচাই বেশি যুক্তিযুক্ত হতো।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: নওগাঁয় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন করে আরো ৩২ জন শনাক্ত

Thu May 7 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ দিনদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন জেলায় মিলছে করোনা রোগীর সন্ধান। ২৪ ঘণ্টায় নওগাঁয় নতুন করে আরো ৩২ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জন চিকিৎসকসহ ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo