লাইফ ইন লকডাইন, ডে থার্টি ফোর

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ মে ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

হিন্দু মাইথোলজি অনুসারে শ্রী গণেশ একজন বিশেষ দেবতা। তিনি গণপতি তিনি সিদ্ধিদাতা। যেকোন মূর্তি পুজোর আগে তাঁর পূজা অবশ্যই করতে হয়। নইলে সিদ্ধিলাভ হয় না। তিনি মহাদেব শিব ও দেবী পার্বতীর সন্তান।

একদিন কৈলাসে দেবাদিদেব শিব ও পার্বতী বসে আছেন। পাশে তাদের দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক খেলাধুলা করছে। এমন সময় দেবর্ষি নারদ উপস্থিত হলেন ‘নারায়ণ নারায়ণ’ জপতে জপতে। হাতে একখানি মালা। স্বর্গে ফুলের অভাব নেই কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য শিব-পার্বতীর ‘প্রিয়’ যাচাই করা! উদ্দেশ্য সফল। মালা দেখে দুই ভাই-ই চেয়ে বসলো। উপায় না দেখে দেবী পার্বতী এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। সবার আগে যে তিনবার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে আসতে পারবে তার গলায় উঠবে মালা। প্রতিযোগিতার ধরন দেখে কার্তিক একটু খুশিই হলেন। কারন তার বাহন ময়ুর, গণেশ’দার বাহন ইঁদুর। ইঁদুরে চড়ে তো বিশ্ব পরিভ্রমণে যাওয়া যায় না! কালক্ষেপণ না করে ময়ুর নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

এদিকে গণেশ খেলা থেকে উঠে ধীরেধীরে মা ও বাবাকে তিনবার প্রদক্ষিণ করলেন। দেবর্ষি নারদ অবাক চোখে দেখছেন। একজন সন্তানের কাছে মায়ের চেয়ে বড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আর কী হতে পারে! কার্তিক একবার ঘুরে আসার আগেই গণেশ তিনবার প্রদক্ষিণ করে শেষ। ভবিষ্যতের দেবসেনাপতি কার্তিক ফিরে এসে দেখেন বড়দা গণেশ মালা পরে মায়ের কোলে বসে আছেন।

এজন্যই গণেশ বুদ্ধি, ঋদ্ধি, সিদ্ধির দেবতা। আমার মনেহয় এর চেয়ে সুন্দর গল্প পুরো মাইথোলজিতে নেই। নারদ মায়ের পক্ষপাতিত্ব দেখতে এসে গণপতি সন্তানের পক্ষপাতিত্ব শিখে গেছিলেন। একদিকে সম্পূর্ণ সৃষ্টি, অন্যদিকে মা। পাশে বসা জটাধারী ভগবানের কী তখন একটুও হিংসে হয় নি?

‘মা’ খুব ছোট এক শব্দ, কিন্তু এর ব্যপ্তি এতোই বিশাল যে এর আশেপাশে কোন বাক্য ভাষণ নেই। স্বয়ং ঈশ্বর মানুষসহ গোটা জীবকে হিংসে করে কারন তাঁর ‘মা’ ডাকার মতো কেউ নেই। তিনি স্বয়ম্ভু- এই তার কমজোরি!

আজ মা দিবস। সাথে লকডাউন। এ লকডাউনের মাঝে চলে গেল স্বাধীনতা দিবস, চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ, শব-ই-বরাত, মে দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, পনেরো রমযান, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, এক-দুই জন্মদিন। এগুলো কোনোকিছুই কারো অনুপস্থিতিতে ঠেকে থাকবে না। কিন্তু মা দিবসের জন্য দুইজনের উপস্থিতি অবশ্যাম্ভাবী। এ দিন সাদামাটাভাবে যাওয়া মানে পৃথিবীর হাতেগোনা দিন থেকে একদিন কমে যাওয়া।

তবুও বের হবো না। জুতা, কাপড়, মাস্ক ধোয়া যাবে, ফুসফুস বয়ে যে মারণ দূত আসবে তাকে রুখবো কি করে! মায়ের জন্য ঘরে বসে থাকা এখন ব্রহ্মলোক পরিভ্রমণের সমতূল্য।

করোনার জন্য অনেকেই দূরে, অনেকেই অনেকদিন বাসায় যেতে পারছেন না। তাদের নামে শপথ।

আমার কলিগ তিনজনের রিপোর্ট এসেছে। সবার নিগেটিভ। শুধু ‘আয়া’ খুরশিদা খালা পজিটিভ। তিনিও একজন মা। যখন ভাইরাস আর ডাক্তার-বিজ্ঞানের যুদ্ধ হচ্ছিলো এ লোকগুলো কিভাবে কিভাবে যেন ‘নো নো ল্যান্ডে’ ঢুকে গেলেন- কেউ খোঁজ রাখে নি! টিভি ইন্টারনেটের ‘থ্যাংক ইউ এপ্লোজ’ তারা পান নি। ডোনিং ডোফিং পিপিই-র কিছুই জানেন না। তলোয়ার ঠিক করে না ধরেই তারা যুদ্ধ করছেন। কোভিড মানে কী, পজিটিভ নিগেটিভ মানে কী- সব ভাসা ভাসা। ছ’ফুট ডিসটেন্স তাদের কাজের জন্য বিলাসিতা। অনেকেই অসুস্থ, বার্ধক্য হাঁপানি প্রেশার ডায়েবেটিসে বাতের ব্যথায় ভুগছেন। অথচ আমাদের গল্পে তারা অনুপস্থিত।

সত্যি সেইন্টস ডোন্ট অলওয়েজ হ্যাভ এ হ্যলো। নট অল ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র্স ওয়্যার ইউনিফর্ম!

সময়টা এমন যার টাকা আছে তার একটু বেশি কম হলেও পরিচয় বদলাবে না। যার নেই তার অস্তিত্বই থাকবে না। এ কোভিড আক্রান্ত খালার জন্য ঔষধ গুরুত্বপূর্ণ। এসিম্পটোম্যাটিকদের এখন বাড়িতেই আইসোলেশন হচ্ছে। মোট আট-দশপদের ঔষধ। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ক্লোপিড এজিথ্রোমাইসিনের দাম অনেক।
মায়েদের যেন আমাদের আগে কিছু না হয়!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আইসিইউ ডায়েরি - ৪

Mon May 11 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ মে ২০২০, সোমবার ডা. মেহেদী হাসান এই করোনাকালে লকডাউনের বদৌলতে মানুষ পরিবারকে আরো বেশি সময় দিতে পেরেছে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। আমি আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বাবা মাকে দেখতে যাবার কথা থাকলেও এই মহামারী আমাকে ঢাকা ছাড়তে দিল না। ভিডিও কলে অশ্রুসজল বাবা মাকে দেখি আর […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo