বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের সরকারি নির্দেশ কতটুকু যৌক্তিক?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ জুন, ২০২০, মঙ্গলবার

দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রবিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের (পার-১ অধিশাখা) উপসচিব শামীমা নাসরীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,

‘বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক হিসেবে কর্মরত কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

সম্ভাব্য করোনা পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের চিকিৎসায় চিকিৎসাকর্মীর সংকটের বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে মেডিকেল কলেজের সকল স্তরের বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের একই ছাতার নিচে এনে স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিকিৎসাকর্মীর সংকট কাটিয়ে উঠার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সঙ্গে জড়িত বেসিক ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষকগণ দীর্ঘ সময় রোগ এবং রোগী দেখার ক্লিনিক্যাল সায়েন্স থেকে দূরে। কোভিড-১৯ এর মত জটিল সময়ে হাসপাতাল তাদের উপযুক্ত স্থান নয়।

তাছাড়া তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁর নিজ নিজ পদের দায়িত্ব অনুসারে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার ইতিমধ্যে ২০০০ অতিরিক্ত ক্লিনিক্যাল চিকিৎসক নিয়েছেন। উপজেলাগুলোতেও পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল চিকিৎসক রয়েছেন। কোন একটি বিশেষ স্থানের সংকট মোকাবেলাতে তাঁদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

ইতিপূর্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর নির্দেশনা মতে প্রবীণ বা বয়স্ক কমকর্তাগন সরাসরি অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত এই সাম্প্রতিক নির্দেশনা তাহলে সেই সকল নির্দেশনাকে লঙ্ঘন করবে এবং মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন পদে কর্মরত প্রবীণ অধ্যাপক ও শিক্ষকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিবে।

তাঁরা তাঁদের পদের দায়িত্ব এর অতিরিক্ত এই দায়িত্ব পালন করলে সরকারি চাকরির বিধান অনুসারে অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা পাবেন, এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন এ স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। চিকিৎসকদের পরিচালনার এই নীতি দেবার আগে ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত অধিদপ্তরের সুপারিশ নেওয়া হয়েছিল কী না তাও স্পষ্ট নয়।

করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে লকডাউনে স্তিমিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তাঁরা ক্লাস নেবেন নাকি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার।

ইতিপূর্বে সরকার বেসিক সাবজেক্টের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের তীব্র ঘাটতি মাথায় রেখে সকলে যেন দ্রুত বেসিক সাবজেক্টে আগ্রহী হন সেই প্রস্তুতিকে মাথা রেখে ডেপুটেশন পলিসি সাজিয়েছিল। এই বিষয়ের দিকপালদের, চিকিৎসক গড়ার কারিগর এসকল অভিভাবক সমতুল্য গুরুজনদের এভাবে বিপদে ঠেলে দিলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা সহসাই পূরণ হবার নয়।

Ruhana Auroni

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইরানে কোভিড-১৯ এর সেকেন্ড ওয়েভ, ১দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড

Tue Jun 30 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ জুন ২০২০, মঙ্গলবার ইরানে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে করোনা ভাইরাসে একদিনেই ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ দেশটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা ছিল ১৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৩৬ জন। দ্বিতীয় ওয়েভে ইরানই একমাত্র দেশ যেখানে প্রথম ওয়েভের চেয়ে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo