মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসকসহ করোনায় আক্রান্ত ৬১ জন স্বাস্থ্যকর্মী

প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০

দিনদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন জেলায় মিলছে করোনা রোগীর সন্ধান।

তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে চিকিৎসকসহ সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এভাবে ক্রমাগত তাঁরা আক্রান্ত হতে থাকলে দেশের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে!

রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের করোনা পরিস্থিতি সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে! হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত ৩০ জন চিকিৎসকসহ সর্বমোট ৬১ জন স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। আর হাসপাতালটির মোট ৩৭০ জন চিকিৎসকের মধ্যে আরো ৬০ জন চিকিৎসক বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন। হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. অসীম চক্রবর্তী তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকাই নাম নেই মিটফোর্ড হাসপাতালের। তবে হাসপাতালটিতে ৫ শয্যার একটি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু রয়েছে।

মিটফোর্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. অসীম চক্রবর্তী বলেন,

“আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ জন চিকিৎসক, ১৬ জন নার্স এবং ১৫ জন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন চিকিৎসকসহ ছয়জন ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

কিভাবে এতজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডা. অসীম বলেন,

“চলতি মাসের শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ২ জন রোগী প্রথমে নিজেদের ভুল ঠিকানা দেন এবং করোনার উপসর্গ থাকার কথা লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। একজন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন সার্জারি বিভাগে এবং অন্যজন গাইনী ও প্রসূতি বিভাগে। সম্প্রতি আরও একজন রোগী করোনা উপসর্গ থাকার কথা লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে ৩ জন রোগীর করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তখন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়। মূলত এই ৩ জন রোগীর সংস্পর্শে যেসব চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য স্টাফরা এসেছিলেন, তাঁরাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।”

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন চিকিৎসক বলেন,

“আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকসহ অন্যদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। আমাদের কাছ থেকে আমাদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা কঠিন সময় পার করছি। আমরা যারা বাসায় অবস্থান করছি, প্রতিবেশীদের বিরূপ আচরণ সহ্য করতে হচ্ছে।”

করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকাই নাম নেই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। তবে হাসপাতালটিতে পাঁচ শয্যার একটি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু রয়েছে।

করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. অসীম চক্রবর্তী বলেন,

“আমাদের হাসপাতালটি সরকার নির্ধারিত করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। তবে আমাদের হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের কেউ যদি বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালে আগে একটি আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়।”

গত ১৯ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমন সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি ৮৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। গতকাল রোববার (২৬ এপ্রিল) থেকে হাসপাতালটিতে পিসিআর ল্যাবে RT-PCR পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

‘ফ্রন্টলাইনার’ হিসেবে কাজ করা ডাক্তার, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর পাশে দাঁড়ান। আক্রান্ত হলে তাঁদের দূরে ঠেলে না দিয়ে, তাঁদের বাসা থেকে বের করে দেয়ার মতো পাশবিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে করোনা মোকাবেলায় তাঁদের সহায়তা করুন, সাহস যোগান! দেশকে করোনামুক্ত করতে এঁদের অগ্রণী ভূমিকাই মুখ্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়

অংকন বনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ঘোষণা করলো কর্তৃপক্ষ

Mon Apr 27 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ ২৭শে এপ্রিল,২০২০ জয়পুরহাট জেলায় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে করনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।সোমবার নতুন করে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১১জনের শরীরে। এদের মধ্যে ২ জন ক্ষেতলাল উপজেলার এবং বাকী ৯ জন কলাই উপজেলার। কলাই উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে ১ জন ওয়ার্ড বয় ও ১ জন নাইট গার্ড রয়েছে। উক্ত ঘটনার জের ধরে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo