বিজ্ঞান ও বিস্ময়ঃ পর্ব-০৯ || বেশী ছবি তোলার সমস্যা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

আমরা মনে করি কোনখানে গেলে বেশি ছবি তুললে বেশি স্মৃতি জমা থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে উল্টো কথা। প্রায় ১৫ বছর আগের একটা গবেষণায় পাওয়া গিয়েছিল যারা নিজের ছবি বেশি তুলে বা তোলায় তাদের মস্তিষ্ক কিছু “মিথ্যা স্মৃতি” সৃষ্টি করে। এই মিথ্যা স্মৃতি বা ফলস মেমোরি  অর্থ হলো এমন কিছু ঘটনা আমাদের মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া যা আসলে কখনো ঘটেনি বা সত্যিকারভাবে ঘটেছিল অন্যভাবে। আমাদের অধিকাংশ মানুষের মাথায় এরকম অনেক স্মৃতি আছে যা আমরা ভুলভাবে মনে রেখেছি। ব্যাপারটা আসলে একটু জটিল।

এই মিথ্যা স্মৃতি তৈরি হওয়াটা বিভিন্ন কারণে হলেও এটার সাথে ঘন ঘন ও বেশি ছবি তোলার একটা খুব জোরালো সম্পর্ক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম গবেষণার উপরে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের ফেয়ারফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী লিন্ডা হেনকেল ২০১৪ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপরে আরো একটি পরীক্ষা করেন। সেখানে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের দুটো দল করেন। তাদের তিনি একটি জাদুঘরে নিয়ে ১৫ টি বিখ্যাত চিত্রকর্মের সামনে দাঁড় করান। একদলকে বলা হয় যে তারা ৩০ মিনিট ধরে ছবিগুলো নিজের চোখে দেখবে। আরেকদলকে বলা হয় যে ওই চিত্রকর্মগুলো তারা খুব ভালো করে ছবি তুলে সেই ছবিটাতে মনোযোগ দিয়ে ৩০ মিনিট দেখবে এবং এরপরে ছবিগুলো ডিলিট করে দিবে। দুই দলের কাজ শেষ হওয়ার পরে তাদেরকে চিত্রকর্মটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো এবং দেখা গেল যে যারা নিজের চোখে ৩০ মিনিট দেখেছিল তারা ফটো তুলে দেখা দলের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত বর্ণনা দিতে পারছে। এই পরীক্ষার ফলে মস্তিষ্কের উপরে ফটোগ্রাফির বিরূপ প্রভাবটা আরো স্পষ্ট করে বুঝা গেলো। এই বিভ্রান্তিকে গবেষক হেনকেল নাম দিলেন ফটো টেকিং ইম্পায়ারম্যান্ট ইফেক্ট।

ছবিঃ প্রতীকী

অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা বলেন যে আপনার বাস্তব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা যত কম হবে ততো আপনার মস্তিষ্ক বাস্তবতা সম্পর্কে ভুল জিনিস তৈরি করবে। যেমন আপনি কোন অনুষ্ঠানে গেলেন সেখানে আপনি একগাদা নিজের ছবি তোলালেন। এই ঘটনার অনেক বছর পরে কেউ আপনাকে এই ছবি গুলো দেখালে আপনার মস্তিষ্ক ছবি তোলার সময়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা হুবহু আর মনে করতে পারবে না, এমনকি তখন  আপনার অজান্তেই আপনার মস্তিষ্ক ওই সময়ের ক্ষুদ্র অনুভূতি গুলোকে অন্য কিছুর সাথে গুলিয়ে ফেলে অদ্ভুত কোন একটা মিশ্রিত স্মৃতি বানাবে। মুশকিল হলো সেই ভুল স্মৃতিকেই আপনি আসল স্মৃতি ভাবতে থাকবেন। এটাকেই false memory বলা হচ্ছে। যদিও এই ফলস মেমোরি আমাদের বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয় তবু বেশি ছবি তোলানোর বা ছবি থেকে পরবর্তীতে এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার মনোভাবটা তুলনামূলক বেশি ভুল স্মৃতি সৃষ্টি করে।

আমাদের চার রকমের স্মৃতি আছে টোপোগ্রাফিক মেমোরি, ফ্ল্যাশ বাল্ব মেমোরি, ডিক্লারেটিভ মেমোরি, প্রসিডুরাল মেমোরি। এগুলোর ভিতর ফ্ল্যাশ বাল্ব মেমোরি হল জীবনের কোন বিশেষ উপলক্ষ্য বা মজার বা দুঃখের ঘটনার নিঁখুত স্মৃতি। এই ধরনের স্মৃতি অবসরে বা ব্যস্ততার মাঝে হুট করে আমাদের মাথায় এসে আমাদের রোমন্থন করায়। ফটোগ্রাফি মূলত এই ফ্লাশ বাল্ব টাইপের মেমেরিকেই নষ্ট করে দেয়। তাই কোনখানে বেড়াতে গেলে ছবি তোলার চেয়ে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা অনুভবে বা বন্ধুবান্ধব-ভ্রমণসঙ্গীদের সাথে উপভোগের উপযুক্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সমস্ত অনুভূতি আহরণে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন, এতে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে অতীতের স্মৃতিমধুর।

Md. Nafiul Islam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে হান্ড্রেড ফিফটি সিক্স

Thu Sep 24 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার ডা. শুভদীপ চন্দ সক্রেটিসের মা ছিলেন ধাত্রী। তিনি প্রায়ই বলতেন তার শিক্ষাদানের কৌশল ধাত্রীর কৌশল। ধাত্রী নিজে বাচ্চা জন্ম দেয় না, বাচ্চা জন্মাতে সাহায্য করে। সক্রেটিসও তেমনি অন্তর্দৃষ্টি প্রসবে সাহায্য করেন। কিন্তু আগে উপলব্ধিটা ভিতরে আসা চাই। তিনি বলতেন ন্যায় অন্যায় বিচার মানুষ করবে, […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo