
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নিউরোসার্জন, বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স (বিসিপিএস)-এর সভাপতি এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডীন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া (Prof. Kanak Kanti Barua)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ তাঁকে এ নিয়োগ দেন। গত ২৪ মার্চ ২০১৮ইং তারিখ, শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
গত ১৫ মার্চ ২০১৮ইং তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জনাব বদরুন নাহার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে
(নং-স্বাপকম/চিশি-১/নিয়োগ-১(১১)/৯৮(অংশ)-১১১ বলা হয়,
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮ (১৯৯৮ সনের ১নং আইন)-এর ১২ ধারার ক্ষমতাবলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) এবং চেয়ারম্যান, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়-কে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে ০৩ (তিন) বছর মেয়াদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। এ আদেশ আগামী ২৪-০৩-২০১৮ খ্রিঃ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।”
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ১৯৫৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মিরের সরাই উপজেলার হাইত কান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম প্রয়াত সুখদা বড়ুয়া এবং পিতার নাম প্রয়াত ডা. শুভংকর বড়ুয়া। পারিবারিক জীবনে তাঁর স্ত্রী ডা. শিউলি চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে অবস এন্ড গাইনী বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে ডা. সুদীপ বড়ুয়া এবং কনিষ্ঠপুত্র সৌমিক বড়ুয়া আমেরিকতাতে অধ্যয়ণরত।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। তিনি ১৯৯০ সালে এফসিপিএস, ২০০৩ সালে এমস (নিউরোসার্জারি), ২০০৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফআইসিএস (এওয়ার্ডেড ফেলোশীপ অফ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অফ সার্জন্স) এওয়ার্ডে ভূষিত হন। অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে অনারারী এফএসএলসিএস এবং কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স, পাকিস্তান থেকে অনারারী এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষকতার জীবনে তিনি সাবেক আইপিজিএমএন্ডআর এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়)-এ ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক হিসেবে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সাবেক আইপিজিএমএন্ডআর এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে ২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অধ্যাপক হিসাবে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত আছেন। উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার কারণে হাইকোর্টে রিট করেন (রিটনং ২৯১০) এবং এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তাঁকে ভূতাপেক্ষভাবে ২০০১ সাল থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৫ সালে তিনি এ বিশ^বিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্যময় শিক্ষাজীবনের অধিকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিন তিন বার ডীন নির্বাচিত হয়ে সার্জারিঅনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক বডি সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েরও সম্মানিত সিন্ডিকেট মেম্বার।
দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী এই শিক্ষকের ইতমধ্যে ৪৭টিরও বেশি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ, নিবন্ধ দেশী-বিদেশী জার্নাল ও আন্তর্জাতিক নিউরোসার্জিকাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গাইড হিসেবে তাঁর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এমএস ইন নিউরোসার্জারি বিষয়ক ১৫টি থিসিস পরিচালিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহরে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন।
তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বিএসএমএমইউ-এর প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি স্বাচিপ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন-এর বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখাসহ মানবসেবায় জীবন উৎসর্গকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিসিপিএস-এর সভাপতি ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ স্পোর্টস মেডিসিনের সভাপতি, সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন অফ নিউরোসার্জন্স-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপিত হিসেবে স্বাস্থ্যসেবাসহ চিকিৎসকদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি সাউথ এশিয়ান সার্জিক্যাল কেয়ার সোসাইটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এ্যালমুনাই এ্যাসোসিয়েশন-এর সাবেক চেয়ারম্যান, স্বাচিপ, বিএসএমএমইউ ব্রাঞ্চ-২০০০-২০০৩-এর সাবেক সভাপতি, এ্যাশিয়ান কংগ্রেস অফ নিউরোসার্জিক্যাল সার্জন্স-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক সেক্রেটারি, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স-এর সাবেক সভাপতি (২০০৮-২০০১২) ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৯৮-২০০২), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ স্পোর্টস মেডিসিনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সোসাইটি অফ সার্জন্স অফ বাংলাদেশ-এর সাবেক সভাপতি (২০১২-২০১৪) ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সার্জন্স, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি এবং স্বাধীনতা চিকিৎক পরিষদের আজীবন সদস্য।
তথ্যঃ প্রশান্ত মজুমদার ।

