প্ল্যাটফর্ম ট্রাভেল উইং ভ্রমন গল্পঃ খুম (জলপ্রপাত) এর রাজ্যে ডুব

জীবনের রোমাঞ্চ যখন শেষ মনে হয় তখনি জীবনের প্রতি নেশা শুরু। বেচে থাকার, আবেগের, উচ্ছ্বাসের, হাসি, আনন্দের। এমনি ট্যুর ছিল থুইসাপাড়া, আমিয়াখুম, সাতভাইখুম, মেলাখুম,নাইক্ষংখুম,ভেলাখুম,নাফাখুম আর রেমাক্রির।
.২৪ তারিখ রাতে সারা রাত জার্নি করে বুঝতে পারিনি বান্দরবান এত সুন্দর লাগবে। সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত শহরটি থেকে নাস্তা করে চান্দের গাড়িতে যাত্রা থানচির পথে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলে যাওয়া একবেকে যাওয়া পথ। দূর পাহাড় মিশে আছে মেঘের সাথে। সবুজ ঘাসের উপর শিশির চমকে উঠে আমাদের ধাঁধা লাগিয়ে দিচ্ছিল। আমরা দেখছিলাম আর হয়ত হারিয়েও যাচ্ছিলাম। থানচি পৌঁছে গেলাম পথের ঘোর শেষ না হতেই। লাঞ্চ করেই আবার যাত্রা। এবার ট্রলারে করে । সাঙ্গু নদীতে ভেসে পড়া পদ্মঝিরির জন্য। নদীর পানিতে হয়ত জাদু ছিল ।স্রোতস্বিনী নদী সে, কিন্তু নিচের সচ্ছ পাথরের মুগ্ধতা সে ভোলার মত নয়।একটু পর পায়ে হেটে শুরু হল থুইসা পাড়ার যাত্রা। প্রায়ই পা পানিতে ডুবল, অনেক সময় ডুবল কোমর পর্যন্ত। পিচ্ছিল ঝিরি পথ দিয়ে হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলাম একটা পাড়ায়।তখন অলরেডী সন্ধ্যা। টর্চ বের করে আবার যাত্রা শুরু । সেই টর্চের আলয় ঝিরি পথে যাত্রা এক অনন্য আধিভৌতিক অভিজ্ঞতা । যাত্রার শেষ হল ১১ টায়। সবাই তখন ক্লান্ত , বিধ্বস্ত …কিন্তু একটা আলাদা তৃপ্তি সবার মাঝে ।
২৫ তারিখে ব্যাগ থুইসা পাড়ায় রেখে আবার যাত্রা শুরু খুমের সৌন্দর্যে হারাবার জন্য। মাথার উপর কড়া রোদ।প্রথম গন্তব্য দেবতার পাহাড়। পাহাড়টি খাড়া প্রায় ৯০ ডিগ্রী। যখন নামার পরে সবাই উপরে তাকালাম আচমকা একটা কথা মনে এল। দেবতাদের কেন আরাধ্য বলা হয়। এই পাহাড় নেমে আসতে পারব কল্পনায় ছিল না। কিভাবে আবার উঠব তা কল্পনায় আসার আগেই ভেলায় চড়ে বসলাম। পাহাড়ের মাঝে দিয়ে খুমের পানি। বাঁশের ভেলায় যাত্রা। খুম দেখতে হলে পাথরের নিচ দিয়ে যাওয়া। আশেপাশের কয়েকটা দলের মানুষ সাহস করলেন না। আমরা করলাম। জীবনের আনন্দ এর আরেক মাত্রা শুরু হল। মেলাখুম,নাইক্ষংখুম,ভেলাখুম। পাহাড়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে যাওয়া, পানি ছিটকে দেখা রংধনু আর পানির গর্জন। আর কিছুর এখানে স্থান নেই।
আমিয়াখুমের সঙ্গে ছিল অন্য মোলাকাত। আমিয়াখুমের একদম উপরে এসে দেখছিলাম তার পানি ছিটকে পড়া। পাগলের মত গর্জন করে তারপর তার শান্ত পানিতে ভিজে যাওয়া। সাতভাইখুম ছিল আবার ভেলায় চড়ে। এক ঘণ্টায় পাহাড় তার সৌন্দর্য হয়ত দেখিয়ে দিল। যে সৌন্দর্য ভাষায় বলার মত না ।
২৬ এ ছিল সহজ ট্র্যাক । উদ্দেশ্য নাফাখুম। নাফাখুমের রাস্তার চমৎকার জিনিস হল ঝিরির বিভিন্ন ধরনে আকার , সবুজ শ্যাওলা, আকাবাকা উঁচুনিচু পথ আর সবুজ প্রেইরি। নাফাখুমের রূপে মুগ্ধ হয়ে রেমাক্রি পৌছাতে সন্ধ্যা হল । বিশ্রাম নিয়ে বারবিকিউ আর ফানুস রাত সাথে সূর্য্যর খোলা গলায় ইউকেলেলে নিয়ে লোকগান ।
২৬ তারিখে, সকাল ৭ টায় কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ট্রলারের যাত্রা থানচির জন্য। ওইদিন এ ঢাকায় ফেরা ।
শেষ হয়ে গেল স্বপ্নের যাত্রা , আবারো বাস্তবতায় ফেরা। কিন্তু চোখে তো এখনো লেগে আছে সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য …।

ছবিতে ট্রাভেল উইং এর ট্যুরঃ

লেখাঃ অদিতি চৌধুরী
ছবিঃ তন্ময় সূর্য

ওয়েব টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

প্ল্যাটফর্ম ট্রাভেল উইং ভ্রমন গল্পঃ রিজুক ঝর্না, বগালেক হয়ে কেওক্রাডাং ট্রেকিং

Sat Feb 9 , 2019
#Platform_Travelling_Club দীর্ঘ সময় নিয়ে প্ল্যান করা একটি হুটহাট ট্র্যাকের গল্প বলা যায় একে। কেওক্রাডাং! বগালেক! রিজুক ঝর্না! অসম্ভব সুন্দর কিছু জায়গা,স্বল্প কিছু শব্দে বলার চেষ্টা! অপরিমেয় সৌন্দর্যকে পরিমিত ছবির মাধ্যমে তুলে ধরার প্রচেষ্টা! দল গঠিত হয়েছিল অনেককেই নিয়ে। ডাক্তারি জীবনে আর যা কিছু থাকুক নিশ্চয়তা বলে কোন শব্দ অভিধানে নেই। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo