কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প  || পর্ব : ১৬

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর,
সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ।

আজকের মানুষটি মধ্যবিত্ত জীবনের ঘোর টোপে আজন্ম আবর্তিত। ছোট ছোট আশা আনন্দেই জীবনের সুখ খুঁজে নিতে জানেন তিলে তিলে পাওয়া না পাওয়ার খেরো খাতার হিসেব বন্দি জীবনে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন নিজেকে। আদর্শ জীবন সঙ্গী, সন্তান, সামাজিক সম্মানের পালক সবই তার মুকুটে।

এই মানুষটিই আমাকে বললেন,

“আমাদের স্বামী-স্ত্রীর আন্তঃসম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি নেই কিন্তু সব কিছুতেই বড় একঘেয়ে লাগে আজকাল। আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয় না। শারীরিক সংযোগও আছে কিন্তু মনের সংযোগটাই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।”

এর পর সেই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-

ছবি : কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প

আমাদের আন্তঃসম্পর্কগুলির প্রতিনিয়ত যত্ন প্রয়োজন। ঠিক যেমন আমরা টবের গাছে নিয়ম মেনে পানি দেই তেমন। শারীরিক ইন্টিমেসি থাকলেই যে মানসিক ইন্টিমেসি থাকবে এটা কিন্তু একান্তই প্রচলিত ভুল ভাবনা। পাশাপাশি শুয়েও দুটি মানুষ লক্ষ যোজন দূরে দুটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী হতে পারেন। মনস্তাত্ত্বিক ইন্টিমেসি মানে দু’জনের মধ্যে কোন সিক্রেট মেসেজ থাকবে না। তাদের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও উভয়েই খোলাখুলি নিজের দুঃখ, কষ্ট, রাগ, আনন্দগুলি একে অন্যকে বলতে পারার বন্ধুত্বের একটা ওপেন স্পেস তৈরী করবেন। এটা কিন্তু একদিনে হবে না। তাই বলেছি গাছে পানি দেয়ার মতো প্রতিদিনের সম্পর্কের যত্ন প্রয়োজন হয়। যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলিত। এই পারস্পরিক ওপেন স্পেসের নৈকট্য যদি আন্তঃসম্পর্কে না থাকে তবে সেই সম্পর্কে মানসিক ইন্টিমেসি নেই। ইন্টিমেসিতে প্রত্যেক পার্টনার নিজের ইমোশনাল রেসপনসিবিলিটি নিয়েই স্বতঃস্ফূর্ত অকপটে সঙ্গীকে বলতে পারে যে, “হ্যাঁ আমি রেগে গেছি/ দুঃখ পাচ্ছি/ ভয় পাচ্ছি/ খুশি হচ্ছি।”

ইন্টিমেসি থাকলে দুজনের চাহিদা না মিললেও কেউ কাউকে তার ইচ্ছাগুলির জন্যে অসম্মান করে না। এখানে উভয়েই পারস্পরিক যত্ন নেয়। নিজেদের সামনে সঙ্গীকে প্রকৃত চেহারা দেখাতে ভয় পায় না, মুখোশ পরে না, নিজের ঘাটতি খামতিতে লজ্জা পায় না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হানিমুন পিরিয়ডের উন্মাতাল আবেগ কাটতে কাটতে ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে আমরা সহবাস করি কিন্তু সহ বাস (একত্রে বসবাস) করি না। ফলে আমরা দিনে দিনে মানসিক অবসাদ ক্লান্তি একঘেমিতে আটকে যাই।

সেই গানটির মতো-

“তোমাকে বুঝি না, প্রিয়
বোঝো না তুমি আমায়
দুরত্ব বাড়ে, যোগাযোগ নিভে যায়

তোমাকে জানি না, প্রিয়
জানো না তুমি আমায়
শীতের বেড়াল খেলে ঘাসের ছায়ায়

তোমাকে ডাকি না, প্রিয়
ডাকো না তুমি আমায়
জলপ্রপাত মাতে রূপোর মায়ায়”

এখন প্রশ্ন হল এই ইন্টিমেসি বাড়াবার উপায় কি? সহজ উপায় হল আপনার সঙ্গীর সদগুণের অকুন্ঠ প্রশংসা করুন। মনে রাখবেন এটা কিন্তু তেল মারা না। তাহলে দ্বিতীয় প্রশ্ন হল কেন প্রশংসা করবেন? কারণ এটাতে আপনার সঙ্গী (নারী- পুরুষ নির্বিশেষে) নিজেকে গ্রহনযোগ্য ফিল করবে। আর বেলাশেষে আমার ভালো ফিলিংগুলিই আমার জীবনের পজিটিভ চালিকা শক্তি।

যারা পার্টনারকে কোনো সেন্সরশিপ ছাড়াই নিজের মনের অনুভূতিগুলি বলবার সম্মাজনক সুযোগ দেন তাদের জন্য অনেক ভালোবাসা।

Firdaus Alam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

পেশাভিত্তিক প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি নিয়ে প্রকৃচি’র সংবাদ সম্মেলন

Tue Dec 8 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার আজ ৮ ডিসেম্বর ( মঙ্গলবার) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ”প্রকৃচি কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির” আয়োজনে “বিদ্যমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন ও কৃত্যপেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে” এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। “পেশাভিত্তিক প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় গঠন” করার দাবি জানিয়েছে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo