তবুও ভালো থাকি অবহেলায় বেঁচে আছি

1

(১)
আমি যখন কোন সরকারি অফিসে যাই, প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসারের রুমের দিকে তাকালেই আমি চোখটা নামিয়ে, মাথা নিচু করে চলে আসি। ওই রুম গুলোতে ঢোকার আগে এক্টিভ পিয়ন থাকে, ওইসব রুমে এটাচড বাথরুম থাকে!
আমাদের কি আর সেই কপাল আছে?
আমরা তিনচারজন মিলে একটা রুম শেয়ার করি। রাতের ডিউটিতে কোন রকমে একটা ধুলোমাখা রুমে কাজের ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেই। মশার কামড় এর কথা নতুন করে বলার কি আছে? হাসপাতালের রোগীরা যেভাবে থাকেন ডাক্তাররাও সেভাবেই থাকবেন, তাই না? কোন কোন হেলথ কমপ্লেক্সের বিল্ডিং এর দেয়াল যে খসে পড়ে সেটা বলে লিখা লম্বা করতে চাইনা।

(২)
রোগীরা ৫০ জনে একটা বাথরুম শেয়ার করলে ডাক্তার কেন আলাদা ঝকঝকে তকতকে বাথরুম পাবে? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সরকারী হাসপাতালের বাথরুমের অবস্থা আসলেই তথৈবচ।
নাইট ডিউটি করে আমাদের রাউন্ড শেষ করে রোগী ডিসচার্জ করতে করতে কখন যে দুপুর বারোটা বেজে যায় টেরই পাইনা। আমরা সবাই এই কষ্টটা হাসিমুখেই করি। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে কয়জন বলতে পারবে, সকালে ঠিক মতো বাথরুম করার সুযোগ কয়জনের কপালে জোটে? ফ্রেশনেস তো আর এমনি এমনি আসবে না, তাই না? শরীরে অস্বস্তি রেখে পোলাইট বিহেভিয়ার না আসাটাই স্বাভাবিক। ( যদিও লেইম এক্সকিউজ কারো কারো জন্য)।

(৩)
আমার মনে হয় আমি বড় ডাক্তার হতেই পারবো না, কারন নাইট ডিউটি করতে গেলে আমার বাথরুমের দরকার হয়, রেস্ট রুমের দরকার হয়! এত চুজি হলে কিন্তু মানব সেবা কিম্বা পড়াশোনার সাধনা হবে না, তাই না?
রেস্ট রুম দিলে আমি সারারাত পড়ে পড়ে ঘুমাবো এটা অথরিটি ঠিকই বুঝে তাই আলাদা কোন রেস্ট রুম নাই। তাছাড়া ডিউটির জন্য সরকার তো বেতন দেয়ই তাই না? কর্মক্ষেত্রে এক্সট্রা ফ্যাসিলিটি সবার জন্য না! আচ্ছা রেস্ট রুম না দেয়ার হয়তো ব্যাখ্যা দিতে পারি কিন্তু ওয়াশরুমের ব্যপারটা কিভাবে এক্সকিউজ দিবো?
আমি রোগী এবং ডাক্তার এর কিছু নূন্যতম চাহিদার কথা বলছি যা কোনদিন নিউজ পেপারে আসবে না। কেনই বা আসবে, এসব নিউজের যে কাটতি কম।

(৪)
যখন রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে ভোর হয়, হাসপাতালের রোগীদের দেখলে সত্যি কষ্ট হয়। বাথরুমে লম্বা সিরিয়াল, এত লম্বা সিরিয়াল পেরিয়ে যে বাথরুমটাতে তারা যান সেটা আসলেই ব্যবহার অনুপযোগী।
একটা মহিলা পেশেন্ট এর তিন দিন পায়খানা হচ্ছে না, তাকে আমি গ্লিসারিন সাপোজিটরি এডভাইস করলাম, বারবার বলার পরেও সে গ্লিসারিন ইউজ করছে না দেখে ধমক দিলাম। মহিলার সাথের ভদ্রলোক অবশেষে লজ্জার মাথা খেয়ে আমাকে বলেই ফেললেন, এই বাথরুম ইউজ করা তার পক্ষে সম্ভব না, তাই উনি সাপোজিটরি নিচ্ছেন না!
আচ্ছা মহিলার রোগীরই যদি এই অবস্থা হয় মহিলা ডাক্তার এর কি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। আফসোস, এই সামান্য বিষয়ে আমরা কত উদাসীন। অথচ, এই কাজ করাটা খুব কঠিন কিছু না।
ডাক্তারদের একটা সুন্দর ওয়াশরুম, একটা রেস্ট রুম, একটা স্টাডি রুম না থাকলে, কাজ করে আরাম নেই, শুধু এতটুকুই বললাম।
আমাদের সয়ে গেছে, ব্যপার না, কোন অভিযোগ নেই, শুধু বলার জন্যই বললাম।

লিখেছেন:
ডা. মৃণাল সাহা

One thought on “তবুও ভালো থাকি অবহেলায় বেঁচে আছি

  1. I’m so sorry, I beg apology to my son and daughter for my great mistake, I force them to study in medical college to become doctor. After leaving abroad (24 years) when I’m here in my dream land I understand how big foolish and stupid I am forced them to became doctor. What I observed in my previous life where I was a specialist in Healthcare Quality Management, the doctors were paid the highest respect/ honor and facilities specially food, accommodation, transportation and recreation. I forget totally about the circumstances of Bangladesh, where doctors are treated like anything else. One thing more I observed here senior doctors are ignoring the junior like their enemy, they (junior) are not belongs to them (senior).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

Happy Medical Life Without Frustration

Mon Mar 20 , 2017
( নতুন বছরের ১ম বর্ষের মেডিক্যাল স্টুডেন্টসদের অনেকেরই প্রথম কার্ড কমপ্লিটেশন এক্সাম হয়ে গেছে বা অনেকেরই সামনে হবে, লেখাটি তাদের জন্য উউৎসর্গীকৃত) ছোট্ট সোনামণিরা! মানে, মেডিক্যালে নতুন আসা আপু ভাইয়াদের জন্য নতুন কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্সস!! . … শুরু করি এক গবেটের গল্প দিয়ে! সেই গবেট কলেজে ভর্তি হয়েই এক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo