ডা. শুভাগত চৌধুরীর স্বাস্থ্যবার্তাঃ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কর্মস্থলে পুনঃপ্রবেশ ও প্রযুক্তি

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ জুন, ২০২০, সোমবার

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী 

আমরা কর্মস্থলে পুনঃপ্রবেশ করার ক্ষেত্রে একমাত্র কী প্রযুক্তি সহায় হতে পারে?

প্রযুক্তি আমাদের রক্ষাকর্তা, যা আমাদের সংস্কৃতিতে গভীর ভাবে প্রবেশ করছে আর সে ধারণা প্রধান হয়ে উঠছে। কর্মস্থলে, অফিসে ও বাইরে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা হবে সহায়। স্পর্শহীন ভাবে দরজা উন্মুক্ত হওয়া, লাইট টাইমার যা ২০ সেকেন্ড গুনে দেবে হাত ধোয়ার সময়। ভয়েস একটিভেটেড এলিভেটার, হাঁটু দ্বারা অপারেট করা যায় এমন বেসিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্টেশন।

এসব প্রযুক্তিই সমাধান আমাদের দৈহিক নিরাপত্তার জন্য। পরবর্তী নতুন সাধারণ অবস্থায় এই সব গ্যাজেট আর প্রযুক্তি প্রটোকল হবে সহায়ক। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এগিয়ে চলার সময় আমাদের মানসিক আর আবেগগত অবস্থা কেমন থাকে তা বিবেচনা করা। ভিন্ন এক পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে ও বেড়ে উঠতে হবে। আর সেজন্য যে মানসিক স্থিতিস্থাপকতা দরকার তা কোনও প্রযুক্তি দিতে পারবে না। আমরা পরস্পর কীভাবে কার্যকর ভাবে, সহানুভূতি নিয়ে ভাবের আদান প্রদান করব তার সমাধান কোন প্রযুক্তি দিতে পারবে না। যারা মাস্ক পরছেন না এবং আমাদের সন্নিকটে আসছেন, তাদের কীভাবে মোকাবেলা করবো? নতুন প্রবর্তিত সামাজিক স্বাস্থ্যবিধিগুলো আমাদের স্বাভাবিক আচার হচ্ছে না, আমাদের দৈহিক সুরক্ষা আর স্বাস্থ্যের কারণে হচ্ছে।

এই মহামারী সম্বন্ধে ভারতীয় ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায় বলছেন, “It is a gateway between one world and the next. We have the choice to walk through lightly, with little luggage, ready to imagine another world.”

এতে প্রবেশের আগে যা আমাদের ফেলে যেতে হবে, তা হল একটি ভ্রান্ত ধারণা- প্রযুক্তি আমাদের রক্ষা করবে আর আমরা সব সময় থাকব মেশিন নির্ভর। প্যানডেমিকের আগে আমাদের একটি অমূল প্রত্যয়ের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে আর এখন মেশিন আমাদের রক্ষাকর্তা এমন ধারণা আরো বিপদে ফেলবে। পুড়ে ধ্বংস হওয়ার এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে বেলজিয়ামের দার্শনিক প্যাস্কেল স্যাবট বলেন, “সভ্যতার রোগ, প্রযুক্তির বিকাশের চারপাশে আশাবাদের পরিবেশ।” মেশিন আমাদেরকে মুক্ত করে শ্রম থেকে। আমাদের পরিবর্তে শ্রম দেয় মেশিন। সময়কে পুনরুদ্ধার করতে আমাদের সাহায্য করে। এই প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা আমাদেরকে এক নতুন ধরনের দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে। আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, সময়ের উপর একাধিপত্ব প্রতিষ্ঠা হয়, স্ক্রিনের উপর আমাদের এক দৃষ্টে তাকানো চলে। এ যেন এক ভ্রান্ত মুক্তি! ব্যবস্থার জটিলতা আমদের করে বিহ্বল, স্খলিত। বিশ্রাম হয় এক দামী প্রমোদ!

তাই এখন সব কিছু ঠিক করার সময়। নতুন স্বাভাবিক সময়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে মেশিন আমাদের প্রভু হয়ে না বসে। আমাদের মানবিকতা, ভেতরের শক্তি আর বোধ যেন প্রকাশ পায়। আমরা হই প্রযুক্তির প্রভু, প্রযুক্তি যেন না হয় আমাদের নিয়ন্ত্রক। প্রযুক্তির নানা বিস্ময়ের ফসল আমরা তুলেছি ও সুফল লাভ করেছি। নতুন স্বাভাবিকতায় আমাদের মানবিক গুনাবলি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।

Subha Jamil Subah

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে উদ্বিগ্ন না হয়ে পরামর্শ নিন

Mon Jun 1 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩১ মে ২০২০, রবিবার ডা. কাওসার উদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কে-৬৫ কোভিড-১৯ পজিটিভ! অবশ্যই চিন্তার বিষয়, কিন্তু এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সেলফ কাউন্সেলিং বা স্ব-পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি যারা কাছাকাছি আছেন এমন চিকিৎসক বা আত্মীয়, বন্ধু দ্বারা পরামর্শ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo