ডা. শুভাগত চৌধুরীর স্বাস্থ্যবার্তা: কী বাড়ায় ইমুউনিটি?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ ই আগস্ট, ২০২০, শনিবার

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোয়া, শারীরিক বিচ্ছিন্নতা আর সুষম খাদ্য খেয়ে শরীর সুস্থ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

ছবিঃ ডা. শুভাগত চৌধুরী

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইমিউনিটি বাড়াতে ব্যায়াম করাও প্রয়োজন। কিন্তু তখনি সবাই বলবে, জিম বন্ধ, ঘরের বাহিরে খেলা বন্ধ, ব্যায়াম করা যাবে না, তাহলে উপায়?সেক্ষেত্রে আপনার শরীর নাড়ালে, সচল রাখলেই যথেষ্ট। আর সব ব্যায়াম ইমিউন সিস্টেম চাঙ্গা করতে প্রয়োজন তাও কিন্তু নয়। ঘরে থেকেও, বাহিরে এত না বেরিয়ে ব্যায়াম নিয়মিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ‘সিডিসি আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’। ব্যায়াম করলে মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়। ‘জারনাল অব স্পোর্টস মেডিসিন এন্ড হেলথ্ সাইন্স’-এর এক প্রবন্ধে দেখা যায়, নিয়মিত ব্যায়াম উজ্জীবিত করে ইমিউনিটি। এছাড়া সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ও অসুখের প্রবণতা কমায়।

আপ্পালাচিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড নিমেন বলেন,

“আসলে মানব শরীরের রক্তে অল্প ইমিউন কোষ সঞ্চরণশীল থাকে। বেশির ভাগ ইমিউন কোষ পছন্দ করে লিম্ফয়েড টিস্যু আর প্লিহার মত অঙ্গ, যেখানে শরীর বধ করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আর অন্যান্য রোগ জীবাণু। ব্যায়ামের ফলে পেশীরা সংকুচিত হয়, রক্ত আর লসিকা সঞ্চালন বাড়ে, বাড়ে ইমিউন কোষদের সঞ্চালন। অধিক হারে, অধিক সংখ্যায় এরা প্রবহমান থাকে।”

ব্যায়ামে বিশেষ ইমিউন কোষ হলো নেচারেল কিলার কোষ। আর এই কোষগুলো বেশি প্রবাহিত হয়। এরা বাহিরের প্যাথজেন পেলে তা দূর করে দেয়। নিমেন ২০১৯ সালে গবেষণায় দেখেছেন, রেসে যে অংশগ্রহণকারীরা ৪৫ মিনিট দ্রুত হেঁটেছেন, তাদের রক্তে ইমিউন কোষ বেড়ে হাঁটার পর আরও ৩ ঘণ্টা রক্তে প্রবাহমান ছিল।

তবে নিয়মিত ৪৫ মিনিট হাঁটবেন। তাহলে ইমিউন কোষ এভাবেই রক্তে আবার প্রবাহিত হবে। ব্রিটিশ ‘জরনাল অব স্পোর্টস মেডিসিন’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে (২০১১ সাল) দেখানো হয়েছে, এ্যারোবিক ব্যায়াম এক্ষত্রে অনেক উপকারী। দ্রুত হাঁটা হলো এ্যারোবিক ব্যায়াম। সপ্তাহে যারা ৫ দিন বা এর বেশি এ্যারোবিক ব্যায়াম করেছেন, এদের শ্বাসযন্ত্রের অসুখ, ঠাণ্ডা লাগা, ফ্লু এসব রোগ অনেক কম হয়েছে।

নিমেন বলেন,

“ইমিউন সিস্টেম দীর্ঘকাল সচল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে আর নিয়মিত করলে এর সম্মিলিত প্রভাব পড়ে ইমিউন সিস্টেমের উপর। ব্যায়ামের আর এক সুফল হল, এটি প্রদাহ হ্রাস করে আর এতে ইমিউনিটি বাড়ে।

‘আমেরিকান জেরিয়াট্রিক্স সোসাইটি জারনাল’-এ ২০০৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, ফিটনেস যাদের ভাল, তাদের ইনফ্লামেটারি মার্কার কম। প্রদাহ থাকলে জীবাণুর সাথে যুদ্ধে ইমিউন কোষদের অনেক অসুবিধা হয়। তাই ব্যায়াম করে প্রদাহ কমিয়ে রাখলে লড়াই হয় জুতসই।

কোন ধরনের ব্যায়াম ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক?

বিজ্ঞানীরা বলেন, এ্যারোবিক ব্যায়াম অর্থাৎ দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো (১৫ মিনিটে এক মাইল দ্রুত হাঁটা) ইত্যাদির কারণে রক্তের ইমিউন কোষ আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে আসবে এবং উদ্দীপ্ত হবে। তবে সাবধানে ব্যায়াম করুন। অতি উৎসাহী হয়ে কঠোর ব্যায়াম অনেকক্ষণ বেশ জোরে করলে লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি হবে।

নিমেন আরও বলেন,

“বাড়িতেই রয়েছে ওয়াকিং প্রোগ্রাম শুরু করার সুবর্ণ সুযোগ। ঘরের ভেতরে, করিডোরে, বারান্দায়, নিচে লনে বা উপযুক্ত স্থানে করতে পারেন ব্যায়াম। মাঝারী মানের ব্যায়াম, কঠোর যেন না হয়। সে সঙ্গে ফল সবজি খাওয়া, স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা, সুনিদ্রা প্রয়োজন। ব্যায়াম হলো এই করোনাকালীন সময়ের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী আর সম্ভাবনাময় শরীরচর্চা। সে সঙ্গে শারীরিক বিচ্ছিন্নতা আর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি পালনের কথা ভোলা যাবে না।”

Sadia Kabir

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজবাড়ী জেলার বিএমএ সভাপতির মৃত্যু

Sun Aug 9 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ আগস্ট, ২০২০, রবিবার প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসে এবার শহীদ হয়ে চিকিৎসকদের মিছিলে যুক্ত হলেন শ্রদ্ধেয় ডা. গোলাম মোস্তফা (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র’জিউন)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় গত ৮ই আগস্ট শনিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। […]

ব্রেকিং নিউজ

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo