ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিটো ডায়েটের ভূমিকা

৭ ডিসেম্বর,২০১৯  

কিটো ডায়েট কি?

আমাদের স্বাভাবিক এবং আদর্শ ডায়েটে দৈনিক ক্যালরির চাহিদার একটি বড় অংশ আসে কার্বোহাইড্রেট (শর্করা জাতীয়) খাবার থেকে। পরিমাণটি গড়ে প্রায় ৪৫ – ৫০ শতাংশ। বাদবাকি ২০ – ৩৫ শতাংশ আসে ফ্যাট (চর্বি) এবং ১৫ – ২০ শতাংশ আসে প্রোটিন (আমিষ) জাতীয় খাবার থেকে। সাধারণ ডায়াবেটিক পেশেন্টের খাদ্যতালিকা এই নিয়ম মেনেই সাধারণত করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কে সীমিত করা হয়, তবে উপরিউক্ত পরিমাণের চেয়ে অধিক পরিমাণে নয়। জোর দেয়া হয়, প্লেইন কার্বনকে (যেমন: চিনি মিষ্টি, মধু ইত্যাদি সমৃদ্ধ এমন সকল কার্ব, যা শরীরে দ্রুত ভেঙ্গে গিয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়) কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট (যে শর্করা খাবার দ্রুত না ভেঙ্গে ধীর গতিতে ভেঙ্গে শরীরে গ্লুকোজের যোগান দেয়) জাতীয় খাবারের রূপান্তরের প্রতি। সামগ্রিক বিষয়টা যখন ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসা কার্যে ব্যবহার করা হয়, তখন এর নাম দাড়ায় “মেডিকেল নিউট্রিশন থেরাপি (MNT)”

এবার বর্তমানে বহুল আলোচিত কিটো ডায়েট প্রসঙ্গে আসি।

বিভিন্ন ভেরিয়েশন থাকলেও এই ডায়েটের মূলনীতিতে শর্করা জাতীয় খাবারকে খুবই সীমিত (দৈনিক ক্যালরির শতকরা ৫ – ১০ ভাগ) করে দিয়ে এর বদলে দৈনিক ক্যালরির বাকি চাহিদা পূরণ করতে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাট (৬৫ – ৮০ ভাগ) এবং প্রোটিন (২৫ – ৩৫ ভাগ) দিয়ে। এতে করে এই ডায়েট গ্রহীতাদের কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। শরীরে গ্লুকোজ লোড কমে যাওয়ায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে, ইনসুলিন সহ অন্য ডায়াবেটিক ড্রাগ এর পরিমাণ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। গ্লুকোজের বদলে শরীরের ক্যালরির চাহিদা ফ্যাট এবং প্রোটিন (বিশেষ করে কিটোন) দিয়ে পূর্ণ হওয়ার কারণে এই ডায়েটের নাম “কিটো ডায়েট”।

•কিটো ডায়েট এর অনেকগুলো “Medical Indication” থাকলেও কোনো ডায়াবেটিস গাইডলাইনে এর ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত নেই। তথাপি, এই ডায়েট ব্যবহার কালীন সময়ে ডায়াবেটিসের উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণের কারণে অনেক টা অফ-লেভেল হিসাবেই এই ডায়েট সাম্প্রতিক সময়ে বহুল জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে।

বর্তমানে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ হয়, এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনের (কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে রিসার্চ/স্টাডি করে পাওয়া তথ্য অবলম্বনে) মাধ্যমে, যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কিটো ডায়েট ব্যবহার করতে গিয়ে শারীরিক ঝুঁকি নির্ধারণের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই এতোদিন ছিল সীমিত। তাই, কিটো ডায়েট ব্যবহার নিয়ে রোগীদের নির্দেশনা দিতে গিয়ে “হা অথবা না” সরাসরি বলে দেবার কোন সুযোগ ছিল না। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া, যেখানে কিটো ডায়েটের প্রচলন আরো বেশি, সেখানের Endocrinologist দের মুখেও একই সীমাবদ্ধতার কথা শোনা যায়। ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসায় কিটো ডায়েট কোনো রেডিক্যাল পরিবর্তন নিয়ে আসছে না, রিস্ক বেনিফিট চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তেই আসার সময় হয়েছে এখন।

কিটো ডায়েট প্ল্যান করতে গিয়ে দৈনিক চাহিদার থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন ব্যবহৃত ব্যবহৃত হচ্ছে। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির (সেটা সুস্থ মানুষ থেকে শুরু করে CKD/Diabetic Nephropathy) উপর বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, যা এই সংক্রান্ত কিছু স্টাডিতে অতি সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। মোটকথা খাদ্য তালিকায় ০.৮-১.২ গ্রাম/কেজি এর অধিক প্রোটিন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কিডনির কার্য ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই এই ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য না হলেও, যারা কিটো ডায়েট কে ব্যবহার করে ডায়াবেটিসের মিরাকল ট্রিটমেন্ট আশা করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই ঝুঁকি অত্যধিক।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় শারীরিক রোগ, বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ে যা শোনা যায় তার মাঝে অনেক অপচিকিৎসা এবং ভুল তথ্য লুকিয়ে আছে। তাই চিকিৎসকের সুস্পষ্ট পরামর্শ ছাড়া কোনো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ অথবা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা পক্ষান্তরে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

লেখক:লালা সৌরভ দাশ
স্টাফ রিপোর্টার/তামান্না ইসলাম

Fahmida Hoque Miti

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ডা. শফিউল মুজনাবীন তনু আর নেই

Sat Dec 7 , 2019
৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ডা.শফিউল মুজনাবীন তনু গতকাল ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ শুক্রবার দুপুরে মালদ্বীপে ইন্তেকাল করেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি র’জিউন)। ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। ডা. শফিউল মুজনাবীন তনু ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ৩য় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি গত তিনমাস আগে মালদ্বীপে যান। রবি/ সোমবারের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo