জোহরা বেগম কাজী: ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল অফ ঢাকা

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০;

গুগল বরাবরের মত আজকেও ডুডলের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিল কিংবদন্তি চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর কথা।
তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম বাঙ্গালী মুসলিম নারী চিকিৎসক। সম্মানার্থে তাঁকে “Florence Nightingale of Dhaka” বলা হয়। আজ তাঁর ১০৮ তম জন্মবার্ষিকী।

জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পিতার নাম ডাক্তার কাজী আব্দুস সাত্তার ও মায়ের নাম মোসাম্মদ আঞ্জুমান নেসা। তার আদি পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে।

শিক্ষা ও কর্মজীবন:

তিনি ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম আলিগড়িয়ান হিসাবে এসএসসি পাশ করেন।
জোহরা বেগম তাঁর এমবিবিএস ডিগ্রি “Lady Hardinge Medical College ” থেকে ১৯৩৫ সালে লাভ করেন। সেসময় তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট স্থান অর্জন করেন এবং “Viceroy of India” পদক অর্জন করেন। ১৯৩৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর জোহরা বেগম কাজী কর্মজীবনে প্রবেশ করেন৷ তিনি প্রথমে “ইয়োথমাল ওয়েমেন্স(পাবলিক)” হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন৷ এরপর “বিলাসপুর সরকারি হসপিটালে” যোগ দেন৷ পরবর্তীকালে মানুষের সেবার জন্য মহাত্মা গান্ধী নির্মাণ করেন “সেবাগ্রাম”৷ এই “সেবাগ্রামে” অবৈতনিকভাবে কাজ করেন জোহরা বেগম কাজী৷ এছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন বেসরকারী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন৷ অতঃপর তিনি তাঁর এফসিপিএস ডিগ্রি এবং বৃত্তি লাভ করেন “Royal college of Obstetricians and Gynaecologists”, লন্ডন থেকে। তিনি লন্ডনেই তার পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং DRCOG, FRCOG, MRCOG ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে যোগ দেন৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অনারারি কর্ণেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ(গাইনোকোলজি) বিভাগের প্রধান ও অনারারি প্রফেসর ছিলেন৷ বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সেবাপ্রদানে অটল থাকেন। ১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বেশকিছু বছর হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে চিকিৎ‍সা সেবা প্রদান করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেলে অনারারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন৷

ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্ব পালন করার সময় নারী রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার তাকে আহত করে। তিনি তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের ভুল ধারণা দূর করতেন। তার কারণে পরবর্তীতে চিকিৎসা শাস্ত্রে এদেশে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। ডাঃ জোহরা কাজীর একান্ত চেষ্টার ফলে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলা হয়।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি সম্পাদনা:

(১) তিনি ১৯৬৪ সালে “তখমা-ই-পাকিস্তানি” পদক অর্জন করেন।
(২)২০০২ সালে অর্জন করেন “বেগম রোকেয়া পদক”।
(৩) ২০০৮ সালে অর্জন করেন “একুশে পদক”।

তিনি নভেম্বর ৭, ২০০৭ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন। তিনি পুরো বিশ্ববাসীর নিকট সম্মানের যোগ্য এবং প্রত্যেক বাঙালির গর্বের বিষয়।

 

Tanjim Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করলো প্ল্যাটফর্ম সিলেট জোন

Thu Oct 15 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার আজ বৃহস্পতিবার ‘প্ল্যাটফর্ম অফ মেডিকেল ও ডেন্টাল সোসাইটি সিলেট জোন’ কর্তৃক ১৫ অক্টোবর “বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস” উপলক্ষে সিলেটের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। উক্ত কর্মসূচিতে সম্মানিত শিক্ষকগন, শিক্ষার্থী, প্ল্যাটফর্ম এক্টিভিস্ট ও সমাজের সচেতন নাগরিকগন উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের নর্থ ইষ্ট মেডিকেল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo