“গ্রামীণ স্বাস্থ্য- ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা”

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ এপ্রিল, ২০২১, বুধবার

লেখাঃ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা
চেয়ারম্যান, হেলথক্লাউড প্রাইভেট লিমিটেড

গ্রামীণ স্বাস্থ্য- ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা”- এই লক্ষ্য নিয়ে হাসিখুশি’র জন্ম।

টেকসই উন্নয়নের জন্যে টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি অপরিহার্য উপাদান। জাতিসংঘ কর্তৃক যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য গৃহীত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি,বেসরকারি, এন.জি.ও এবং ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান সহ সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসার অপ্রতুলতা সর্বজনবিদিত। সরকারি পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে যে ইউনিয়ন সাবসেন্টার আছে তা বর্তমান ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের(চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান) গ্রামাঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখা কঠিন। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ প্রয়োজন। শিল্পায়ন, নগরায়নের ফলে জীবনমানের উন্নতির আকাঙ্ক্ষা শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও বিস্তৃত হয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে অন্যতম মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বাস্থ্যসুবিধা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন।

ইউনিয়ন পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে বর্তমানে নরসিংদীর পাঁচদোনা ইউনিয়নে “হাসিখুশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউনিয়নবাসীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে “হাসিখুশি”। এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ন্যূনতম এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকগণ রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোগী এবং তার পরিবারকে সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠানটি।

মূলত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি মেডিকেল রেফারেল সিস্টেম এর প্রাইমারি ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। সরকারি বেসরকারি রেফারেল ইউনিটে প্রয়োজনে রেফার করা এবং সেখানে চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে নিজ এলাকায় ফলোআপ সুবিধা দেয়ার কাজটি করবে এই প্রাইমারি ইউনিট।

এছাড়াও রয়েছে প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় এক প্রান্তে হাসিখুশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক (ন্যূনতম এমবিবিএস) এবং অন্য প্রান্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার ফলে চিকিৎসাসেবায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলে নিশ্চিত করছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ ন্যূনতম এমবিবিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসক কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য তুলনামূলক নিরাপদ থাকবে।

চিকিৎসা পরামর্শের পাশাপাশি সুলভে ওষুধ প্রাপ্যতা এবং কম খরচে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বিদ্যমান ওষুধের ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের মাধ্যমে একটি কার্যকরী নেটওয়ার্ক তৈরী করে হাসিখুশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মূল প্রতিষ্ঠান “হেলথক্লাউড প্রাইভেট লিমিটেড”। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা বিশ্বাস করেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মধ্যে সঠিকভাবে সমন্বয় করা গেলে খুব সহজেই গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে। বিনা প্রয়োজনে নতুন বিনোয়োগ প্রত্যাশিত রিটার্ন এর পরিমান বৃদ্ধি করে যা কিনা ভোক্তার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে অনিশ্চয়তা কমাতে সম্প্রতি হেল্থ কার্ড প্রোগ্রাম চালু করেছে।যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমান ফী পরিশোধ করে সারাবছর চিকিৎসা পরামর্শ পাওয়া যাবে এর যে কোনো কেন্দ্রে। পাশাপাশি রয়েছে দিনরাত ২৪ ঘন্টা জরুরি পরামর্শের জন্যে ডাক্তার এর সাথে কথা বলার একটি হটলাইনে নম্বর। ইতিমধ্যে হাসিখুশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ইউনিয়নের মানুষের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার কাজ করছে হেলথক্লাউড প্রাইভেট লিমিটেড। ফলে রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করা আরো সহজ ও সুলভ হবে।

প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জরিপে দেখা যায়, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণত হাসপাতাল কেন্দ্রিক অথবা এন.জি.ও অনুদান নির্ভর। একজন এমবিবিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসক দেখাতে জনসাধারণকে গড়ে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। যা কোনোভাবেই টেকসই স্বনির্ভর স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনুকূল নয়। এসব প্রতিকূলতা দূর করতে “হাসিখুশি” মডেলটি কতটুকু কার্যকর তা পর্যবেক্ষণ করছে এর মূল প্রতিষ্ঠান।

গ্রামীণ স্বাস্থ্যে জোর না দিলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। তা না হলে শিল্পায়ন ও উদীয়মান অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করে উন্নয়ন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়তে হলে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

হৃদিতা রোশনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কেন্দ্র পরিবর্তন করে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নোটিশ

Thu Apr 29 , 2021
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ এপ্রিল, ২০২১, বৃহস্পতিবার  এখন থেকে বিশেষ প্রয়োজনে কেন্দ্র পরিবর্তন করে  নির্দিষ্ট কয়েকটি কেন্দ্রে নিতে পারবেন কোভিড ১৯ এর দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন। গতকাল ২৮ এপ্রিল ২০২১ রোজ বুধবার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব, ডা. মোঃ শামসুল হক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo