কোভিড-১৯ঃ নিউইয়র্কের এক সম্মুখ যোদ্ধার আত্মহত্যা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ মে, ২০২০, মঙ্গলবার
কোভিড-১৯ এর সম্মুখ যোদ্ধা ডা. লোরনা ব্রিন আত্মহত্যা করেছেন। তিনি নিউইয়র্কে একজন শীর্ষ স্থানীয় চিকিৎসক ছিলেন। পুলিশ জানায়, গত রবিবার নিজেকে জখম করার কারণে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মৃত্যু এবং ভোগান্তির সাক্ষী হয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ডা. লোরনা ব্রিন ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান এলিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাবা ডা. ফিলিপ ব্রিন (৪৯) জানান, “লোরনা নিজের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছে, আর এই চাকরিটাই তাকে শেষ করে দিল। শেষবার যখন কথা হয়েছিল, অনেকটা বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছিল লোরনাকে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় কীভাবে এম্বুলেন্স থেকে নামানোর আগেই মারা যাচ্ছে সে ব্যাপারে বলছিল।”

ম্যানহাটনের এই ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনেক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ডজন খানেক রোগী মারাও গেছে।

তিনি আরো জানান, ডা. ব্রিনের মানসিক কোন অসুস্থতা ছিল না। তবে জরুরি বিভাগে একদম ফ্রন্টলাইনে কাজ করার কারণে বেশ মানসিক ধকল সহ্য করতে হয়েছিল।

ডা. লোরনা ব্রিন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় আক্রান্ত হন। সুস্থ হওয়ার দেড় সপ্তাহ পর আবার কাজে ফিরে যান। এরপর তার পরিবার নিজেদের উদ্বেগ জানানোর আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লোরনাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

ফিলিপ ব্রিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, “আমার মেয়ের মৃত্যু করোনাভাইরাসের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতিরই অংশ, আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মতই মর্মান্তিক এই মৃত্যু।”

জানা যায়, ডা. লোরনা ব্রিন ছিলেন খ্রীষ্টধর্মের অনুসারী। পরিবারের সাথে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে থাকতেন তিনি এবং সবার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সালসা এবং স্কি অনেক পছন্দ করতেন। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে একদিন বৃদ্ধাশ্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতেন।

নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান এলিন হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডা. ব্রিন আমাদের একজন ‘হিরো’, যিনি জরুরি বিভাগে একেবারে সামনের সারিতে থেকে মানুষকে সেবা দিয়েছেন।

ডা. লোরনা ব্রিনের মৃত্যু নিশ্চিত করার সময় শার্লটসভিলের পুলিশ বিভাগ, তাঁকে ‘হিরো’ হিসেবে সম্বোধন করে। পুলিশ বিভাগ জানায়, ২৬ এপ্রিল একটি সাহায্যের কল পেয়ে ডা. ব্রিনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, নিজেকে করা জখমের কারণে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এ মৃত্যুর ব্যাপারে সেখানকার পুলিশ প্রধান রাশাল ব্র্যার্কনি জানান, “সম্মুখ যোদ্ধারা মানসিক ও শারিরীক ভাবে এখন ঝুঁকির সম্মুখীন। প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এ সকল পেশার মানুষদের। করোনা ভাইরাস তাঁদের মানসিক চাপ আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

আমেরিকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক মিলিয়ন ব্যক্তির এক তৃতীয়াংশ শনাক্ত হয় নিউইয়র্ক শহরে। তাছাড়া দেশটির ৫৬ হাজার মৃতের মধ্যে সাড়ে ১৭ হাজার মৃত্যু এ শহরে হয়েছে।

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কোভিড-১৯ এর সামনের সারির যোদ্ধারা এখন সবচেয়ে বেশি Post Traumatic Stress Disorder এর ঝুঁকিতে আছেন।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক/সুবহে জামিল সুবাহ

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে টুয়েন্টি এইট

Tue May 5 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ মে ২০২০, রবিবার ডা. শুভদীপ চন্দ আজ সারাদিন কাটলো অলস ভাবে বাসায় বসে। বাইরে কী হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। সরকার সারাদেশেই লকডাউন যথেষ্ট শিথিল করেছে। মানুষের অনুভূতি মিশ্র। আসলে কারো কাছেই কোনো বেটার প্ল্যান নেই। বেসরকারি ডাক্তারদের ৪০% বেতন কাটা হবে ঘোষণা এসেছে। আমাদের দেশে বেতনের যে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo