কোন জিনিসের উপর কত সময় বাঁচে করোনা ভাইরাস?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০
লকডাউন শেষে গন-পরিবহন চালু হয়েছে। অফিস আদালত খুলতে শুরু করেছে। তাই বলে করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মত স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন শুরু করলে ভবিষ্যতে আমরা হয়ত বড়সড় দুর্যোগেরই মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরী। নিজের এবং নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাদের জানতে হবে করোনা কিভাবে ছড়ায়। অন্যান্য ভাইরাসের মতই করোনা ভাইরাস জীবিত মানবদেহের বাইরে খুব বেশি সময় বাঁঁচতে পারেনা। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সাথে বের হওয়া করোনা ভাইরাস এক মিটারের দূরত্বের বেশি বাতাসে ভেসে থাকতে পারেনা। এই দূরত্বের ভিতরে থাকা বিভিন্ন কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠতলে করোনা ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। এইসব পদার্থ হাত দিয়ে ধরলে এবং সেই হাত দিয়ে নাক বা মুখে স্পর্শ করলে এই ভাইরাস দিয়ে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন।

নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিস যেন সংক্রমণের ভয়ংকর উৎস যেন না হয়ে ওঠে এজন্য আমাদের প্রয়োজন বিভিন্ন পৃষ্ঠতলে করোনা ভাইরাসের স্থায়িত্বকাল সম্পর্কে জেনে রাখা।

কঠিন বস্তু

নিউ ইংল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল এ প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে , স্টেইনলেস স্টিল এবং প্লাস্টিকের উপর ৭২ ঘণ্টা পরেও ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল। যদিও ৬.৮ ঘণ্টা পর প্লাস্টিকের উপর ভাইরাসের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। অপরদিকে কার্ড-বোর্ড এবং তামার উপর ভাইরাসটিকে ২৪ ঘণ্টার পর আর জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। অন্য একটি গবেষণা মতে তামার উপর ভাইরাসটি ৪ ঘন্টার বেশি বাঁচতে পারেনা। বেইজিং এর একটি গবেষণা দাবি করে স্টিল ,প্লাস্টিকের উপর ভাইরাস ৭ দিন পরেও বেঁচে থাকতে পারে যদিও তখন এর সংক্রমণের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

নিত্যব্যবহার্য স্টেইনলেস স্টিল বা ধাতব জিনিসপত্র যেমন দরজার নব- ছিটকিনি, প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস যেমন জগ বা মগ, রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত কাচের তৈরি আসবাবপত্র নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাসে বা গণ-পরিবহণে চলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন দরজার হ্যান্ডল বা সিটের ধাতব অংশ ধরার পর সেই হাত দিয়ে যেন নাক বা মুখ স্পর্শ করা না হয়। এছাড়া বাস মালিকদের খেয়াল রাখতে হবে যেন নিয়মিত বাসে জীবাণুনাশক ছিটানো হয় এবং নিরাপদ দূরত্বে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রীদেরকে অবশ্যই বাস থেকে নেমে হাত ভালভাবে সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

কাপড় এবং জুতা
কাপড় বা জুতার উপর করোনা ভাইরাসের জীবনকাল নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউথাম্পটনের প্রফেসর উইলিয়াম কেভিল বলেন,

“শোষক মাধ্যমের উপর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার বেশি কোন ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। তাই আমরা ধারণা করছি কাপড়ের উপরেও করোনা ভাইরাস প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেচে থাকতে পারে। যদিও এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।”

বেইজিং এর সেই গবেষণা অনুসারে

“চারদিন পর কাপড়ের উপর আর কোন ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যদিও ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার এক ঘণ্টার ভিতরে কাপড়ের উপর ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ করা যায়”

এ থেকে আমরা বলতে পারি প্রতিবার বাড়ির বাইরে থেকে আসার পর সবার আগে পোশাক খুলে ডিটারজেন্টে ধোয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। সেইসাথে বারবার কাপড় ধরে সেই হাত দিয়ে নাক বা মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কাগজ, সংবাদপত্র
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা মতে ছাপা কাগজের উপর তিন ঘণ্টা পর আর কোন ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি। যদিও কাগজের টাকার উপর ৪ দিন পর্যন্ত ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। সে হিসেবে বলা যায় কাগজের সংবাদপত্র বাসায় সরবরাহের পর তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা আলাদা রেখে দিয়ে তারপর পড়া নিরাপদ। কিন্তু টাকার নোট প্রতিবার ধরার পর হাত সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

ভাইরাসটির জীবনকাল এবং একে প্রতিহত করার পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত গবেষণা করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য আসছে। জীবন যেহেতু থেমে থাকার নয়, নিজের এবং নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে সবসময় মাস্ক পরিধান করা, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।

Md. Shawon Ahmed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব দুইদিনের জন্য বন্ধ

Fri Jun 5 , 2020
প্ল্যাটফর্ম  নিউজ, ৫ জুন ২০২০, শুক্রবার ল্যাবের অভ্যন্তর জীবাণুমুক্ত করতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (৪ এবং ৫ জুন) কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর ল্যাব বন্ধ রাখা হচ্ছে। এর ফলে এই দু’দিনে বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার একাংশের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষাও বন্ধ থাকছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, পিসিআর […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo