এম.ডি. রেসিডেন্সিঃ প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই

এফ.সি.পি.এস.-এ ফ্রাস্ট্রেটিং পাশের হার, বিসিএস না হলে ‘অনারারী’ নামক অনাহারী ট্রেনিং পিরিয়ডের আতংক, দেশের বাইরের অন্যান্য পরীক্ষা( এম.আর.সি.পি./ এ.এম.সি./ ইউ.এস.এম.এল.ই.)গুলোর অতিরিক্ত পরীক্ষা ফি প্রভৃতি সঙ্গত কারণে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম’ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন অপশন। বেসরকারী রেসিডেন্টদের মাস শেষে ১০,০০০ টাকা ভাতা, সরকারী রেসিডেন্টদের সহজে কোর্সে আসার সুবিধা (সরকারী চাকরিরত রেসিডেন্টরা ২ বছর উপজেলায় সার্ভিস দেয়ার পর সরাসরি কোর্সে আসার জন্য ডেপুটেশন পাবেন) এবং তুলনামূলক তাড়াতাড়ি পাশের আশ্বাস’ ও এর অন্যতম কারণ।

আমার অগ্রজদের অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ আমার বেশ কাজে এসেছিল, তাই বহুদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল আমিও আমার অভিজ্ঞতাগুলো লিখি। সময়ের অভাবে লেখা হয় নি। আশা করি কথাগুলো নেক্সট রেসিডেন্সি এক্সামিনীদের কাজে আসবে।

এম.ডি. রেসিডেন্সি মোট ২০০ মার্কসের পরীক্ষা। ২০০ টা প্রশ্নের প্রতিটিতে ১ মার্ক, প্রতিটি প্রশ্নে ৫টি স্টেম(অপশন), প্রতিটি স্টেমের জন্য মার্ক ০.২০।

আলোচনার শুরুতেই কিছু ব্যক্তিগত অভিমতঃ-

১। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন প্রিপারেশনে ‘অনেক’ পড়ার চাইতেও বেশী ইম্পরট্যান্ট ‘গুছিয়ে’ পড়া। সময় সীমিত, কিন্তু পড়া অনেক। তাই ‘সব’ পড়ার চাইতে ‘পরিকল্পিত’ পড়াটা অধিক কার্যকর। তাই, প্রথমেই কি কি পড়তে/ কোথা থেকে পড়তে হবে/ কতটুকু পড়তে হবে এই সম্পর্কে একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করুন। টপিকগুলোর একটা লিস্ট তৈরি করে মোস্ট ইম্পরট্যান্ট/ ইম্পরট্যান্ট/ লেস ইম্পরট্যান্ট মার্ক করুন।

২। যে টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন বেশী আসে/ কঠিন টপিকগুলো আলাদাভাবে মার্ক করে বারবার পড়ুন। আই রিপিট, বারবার, বারবার এবং বারবার পড়ুন।

৩। যে কোন সিস্টেম ক্রনোলজিক্যালী পড়ুন। ‘এনাটমি-ফিজিওলজি-প্যাথলজি-ডিজিজ(ডেভিডসন)’ এভাবে পড়ুন, পড়াটা ত্বরান্বিত এবং ইফেক্টিভ হবে।

৪। আনলাইক এফসিপিএস, রেসিডেন্সিতে যেহেতু সীট সীমিত, তাই এক্ষেত্রে সাবজেক্ট এবং ইন্সটিটিউট সিলেকশন খুব সচেতনভাবে করতে হবে। আমার জানা মতে কার্ডিও, গ্যাস্ট্রো, এন্ডোক্রাইন এসব ডিসিপ্লিনে সীট কম বিধায় কম্পিটিশন বেশী। তাই নিজের এবিলিটি, প্রিপারেশন এবং লিমিটেশন মাথায় রেখে বিষয় এবং ইন্সটিটিউট সিলেক্ট করুন।
• কি কি পড়বেন/ কোথা থেকে পড়বেন/ কিভাবে পড়বেন??

আমার মতে রেসিডেন্সির পড়াগুলোকে গুরুত্বের বিবেচনায় সামগ্রিকভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
১। বেসিক,
২। বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন সলভ এবং
৩। ডেভিডসন।

১। বেসিকঃ
এই অংশটুকু খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। বেসিক থেকে ২০০ টার মধ্যে গড়ে ১২০ থেকে ১৪০টি প্রশ্ন থাকে। এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি(ইনফেকশাস ডিজিজ) খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।
প্রথমে দিলিপ স্যারের নোট পরবেন, পড়ে ইম্পালস/ম্যাট্রিক্স থেকে সংশ্লিষ্ট চ্যাপ্টারের এক্সট্রা টপিকগুলো দাগিয়ে পড়ে ফেলবেন। পড়ার সাথে সাথে পড়াগুলো গুছিয়ে ফেলুন (যেমনঃ দিলিপ স্যারের নোটের বাইরে কি কি কোথা থেকে পরছেন তা স্যারের নোটে টুকে রাখুন)। খেয়াল রাখবেন পরীক্ষার আগে যেন কোন কিছু নতুন করে খুঁজতে না হয়।

২। সর্বশেষ বছরের প্রশ্নসহ বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করুন। এমডি রেসিডেন্সি গাইড কিনুন। এবার চ্যাপ্টারওয়াইজ কোয়েশ্চন সলভ শুরু করুন। প্রতিটি প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত টপিকটি রিভাইস করে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন, গাইডগুলোতে অসংখ্য ভুল থাকে! তাই প্রতিটি উত্তর নিজে বই থেকে যাচাই করে কারেক্ট করে নিন।

৩। বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করার সময় সংশ্লিষ্ট টপিকটা ডেভিডসন খুলে পড়ে ফেলুন। যেমন থ্যালাসেমিয়া থেকে প্রশ্ন আসলে পুরো টপিকটা পড়ে ফেলুন। এছাড়া, প্রতিটি চ্যাপ্টারের বক্সগুলো একটু ভালোভাবে দেখে নিন। ডেভিডসন বিস্তারিত পড়ার প্রয়োজন নাই। বরং বেসিক এবং প্রশ্ন সলভে গুরুত্ব দিন।

৪। বারবার পড়ুন। আপনি পড়বেন আর ভুলবেন। তবুও, বারবার পড়তে থাকুন।

• রিভিসন দিবেন কিভাবে??

কিছু টপিক আছে ২ বার পড়লেই পারবেন। কিছু টপিক আছে ২০ বার পড়লেও পরীক্ষার আগের দিন না দেখলে ভুলে যাবেন। এভাবে আপনার পড়াগুলো ক্যাটাগোরাইজ করুন। কঠিন টপিক যেগুলো মনে থাকে না সেগুলো আলাদাভাবে মার্ক করে বারবার বেশী বেশী পড়ুন।

গতকাল সারাদিনে যা পড়েছেন, আজকের পড়া শুরু করার আগে আধাঘন্টা আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিন। ট্রাই করে দেখুন, কাজ দিবে।

এই কথাটা খুব ইম্পরট্যান্ট। পড়ার সময় সাথে একটা প্যাড/ খাতা রাখুন। পড়ার সময় যে টপিকগুলো মনে হবে কঠিন, পরীক্ষার আগে না দেখলে পারবেন না, সেইগুলো ছোটছোট করে শর্টকাটে টুকে ফেলুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নোটটিতে চোখ বুলিয়ে নিন। পরীক্ষার আগে এই নোটটাই বেশী পড়বেন। পরীক্ষার হলে ঢুকার আগ পর্যন্ত এই নোটের ফটোকপি আপনার হাতে থাকবে। পরীক্ষার আগের দিন এবং পরীক্ষার দিন এই নোট অসম্ভব কাজ দিবে।

• এবার পরীক্ষার হলের কিছু চিটকোড!!

১। আগেই বলেছি রেসিডেন্সি মোট ২০০ মার্কসের পরীক্ষা। ২০০ টা প্রশ্নের প্রতিটিতে ১ মার্ক, প্রতিটি প্রশ্নে ৫টি স্টেম(অপশন)। সময় ৩ ঘন্টা। একটি সঠিক স্টেমের জন্য + ০.২০ মার্ক, আর ভুল স্টেমের জন্য -০.০৪। অর্থাৎ, একটি প্রশ্নের ৫টি অপশনের মধ্যে ১টা সঠিক ৪টা ভুল হলেও মার্ক আসবে ০। তাই কোন প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না। সব দাগাতে হবে।

২। ২০০ টা প্রশ্নের জন্য সময় ৩ ঘন্টা। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ সময় মাত্র ৫৪ সেকেন্ড!! সহজ হিসেবে প্রতি আধা ঘন্টায় প্রায় ৩৫টা প্রশ্নের উত্তর দাগাতে হবে তাই, কোন অবস্থাতেই সময় নষ্ট করা যাবে না।

৩। এই পরীক্ষায় চিন্তা করার সময় নাই। সাধারণ ৯০% ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে দেখা যায় হয় ৩টা ট্রু ২টা ফলস অথবা ৩টা ফলস ২টা ট্রু। তাই কোন প্রশ্নে যদি আপনি ২টি ট্রু সিউর থাকেন, চোখ বন্ধ করে বাকিগুলো ফলস দাগান। ১টি স্টেম ফলস সিউর, বাকিগুলো সিউর না, চোখ বন্ধ করে বাকি ৪টা ট্রু দাগান। কোন প্রশ্নের একটাও সিউর না, সব ট্রু অথবা সব ফলস দাগান। আবারও বলছি, পরীক্ষার হলে চাচা চৌধুরী হওয়ার চেষ্টা করলে কপালে খারাপি আছে, চিন্তা করে সময় নষ্ট করবেন না।
আর অবশ্যই বাসায় এমসিকিউ শিট এনে দ্রুত গোল্লা ভরাট প্র্যাকটিস করুন।

শুভকামনা রইল…

ডাঃ সৈয়দ হোসেইন সাইফ
রেসিডেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

Labonno Rahman

27 thoughts on “এম.ডি. রেসিডেন্সিঃ প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

প্ল্যাটফর্ম ক্যারিয়ার উইং প্রেজেন্টসঃ একনজরে GMC ও PLAB( UK) নিয়ে বিস্তারিত

Thu Apr 13 , 2017
@GMC কি? =General Medical Council ( GMC ) ব্রিটিশ মেডিকেল এডুকেশন,লাইসেন্স পরীক্ষা, ডাঃ নিয়োগ,মেম্বারশিপ এবং ফেলোশিপ বিভিন্ন পোস্ট-গ্র্যজুয়েশন ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে। প্রত্যেক ব্রিটিশ ডাঃ GMC রেজিস্টার্ড ডাঃ । যদি কোন FMG( Foreign Medical Graduate ) ইংল্যান্ড এ প্র্যাকটিস করে চান, অথবা সেখানেই ক্লিনিক্যাল মেডিকেল ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে অবশ্যই […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo