ইন্টার্ন ডাক্তার আন্দোলন : প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি এবং একটি ছোট্ট মূল্যায়ন

llkkkkk

 

সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া,ইন্টার্ন ডাক্তার আন্দোলন  এর  প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি  এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অধ্যাপক তাজুল ইসলামের একটি লেখা আজ  প্রকাশিত হল।

 

১। বগুড়ায় ইন্টার্ন ডাক্তারদের আক্রোশ মূলক শাস্তি প্রদান ছিল ডাক্তার সমাজের জন্য শাপে বর বা আশীর্বাদ :

 

কেননা স্বতঃস্ফূর্ত এ রকম আন্দোলন আদৌ হতো কিনা সন্দেহ, যদি না অহঙ্কারে দর্পিত মন্ত্রনালয় মৌছাকে ঢিল ( তরুন ডাক্তার) না মারতো।
ডাক্তার সমাজকে যদি একটি গাছ হিসেবে ধরি দেখা যাবে এর ছাল- বাকড়া টেনে তুলে ফেলেছে,শাখা- প্রশাখা দসুদল( প্রশাসন) কেটে ফেলেছে,বিধ্বস্ত অবস্থায় কোন রকমে ঝুলে আছে। ঐ গাছে রয়েছে একটি মৌচাক,আর তা হচ্ছে তরুন ডাক্তাররা।ডাক্তার সমাজের যে যৎসামান্য কিছু সুযোগ সুবিধা ছিল তা একে একে হরন করা হয়েছে,মান সম্মান ধূলায় লুটিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা নির্বিকার।

তাদের উপর অবিরাম আক্রমণ হচ্ছে,ফৌজদারি আইনে আসামি বানানোর আইন হচ্ছে,৩য় গ্রেডের উপরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে –

কিন্তু বিএমএ শুধু কৌশলী মৌখিক বিবৃতির মধ্যে সীমিত।নিজেদের অধিকার আদায় দূরে থাক,নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও আন্দোলন হবে, অবস্হা দেখে তেমন আশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছিল।

বাস্তবতা হচ্ছে ৯০ এর পর ক্রমশ সকল পেশাজীবী সংগঠনই, যখন যে সরকার থাকে সে সরকারের ” মনোনীত ” সংগঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাই ভয়ে থাকে ঐ উপরিমহল কখন নাকচ হয়,বিরক্ত হয় বা না জানি ক্ষেপে যায়।আর কিছু আছে যারা নানাবিধ লোভনীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লোভে চাটুকারিতার প্রতিযোগিতায় নামে।তাই সব পেশাজীবী সংগঠনই ( তা এখন বা পূর্বেকার হোক) তাদের সাধারন সদস্যদের দাবী নিয়ে তেমন জোরালো কোন আন্দোলন করছে না বা করতে চায় না।( সাগর- রুনী হত্যা আন্দোলন এক সময় কিভাবে ভেস্তে যায় তা আমরা জানি)।

 

এই তিক্ত বাস্তবতার কারনে ডাক্তারদের বর্তমান শোচনীয় অবস্হায় কেন্দ্রীয় ভাবে জোরালো আন্দোলন হবে এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।কিন্তু শাপে বর হয়ে এলো যখন অহঙ্কার দর্পিত মন্ত্রনালয় অবিবেচকের মতন ক্ষীয়মান ডাক্তার সমাজ- গাছের ” মৌছাকটিতে” ঢিল মারলো।

৫২,৬২,৬৯,৭১,৯০ তে এ দেশের তরুনরাই সামনের কাতারে ছিল।এবারো আশার আলো ছিল তরুন ডাক্তাররা।নেতাহীন,দিকনির্দেশনাবিহীন, ক্ষাপাটে আন্দোলন করতে পারে শুধু টগবগে তরুনরা।এবং তাই তাদের শাস্তির আদেশ ছিল ডাক্তার সমাজের জন্য শাপেবর।

 

 

 

২। এই শাস্তির আদেশ ছিল ইগোর অহঙ্কার ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মন্দ উদাহরন:

একটি স্হানীয়,ক্ষুদ্র ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে জাতীয় ইস্যু করা হয়েছে।অনেকটা সুয়োমোটো ভাবে অতি উচ্চ অবস্হান থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা বড়জোর ঐ হাসপাতালের পরিচালক পর্যায়ে মিমাংসা করে ফেলার কথা।

 

 

৩। জিম্মি করে আন্দোলন ও আইন নিজের হাতে তোলার অভিযোগ :

প্রথমত পৃথিবীতে এমন কোন আন্দোলন সফল হয়েছে যা কাউকে না কাউকে জিম্মি না করে হয়েছে? জিম্মি করার পরও কি দাবী আদায় সব সময় করা যায়? অন্য কি পথ খোলা? আলেচনা? মানব বন্ধন? যারা চায় এ আন্দোলন সফল না হোক তারাই এ খোড়া যুক্তি দেবে।

সবচেয়ে কম ক্ষতিকর আন্দোলন হচ্ছে নিজ দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা( মন্ত্রী শাহজান খানের ভাষায় স্বেচ্ছা অবসর)।তানা হলে রাস্তায় নেমে ভাংচুর করবে? এই কর্মবিরতি প্রত্যেক পেশাজীবীর অধিকার।কয়েক মাস আগে লন্ডনে ডাক্তাররা সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমেছিল বেতন বাড়ানোর জন্য।সেখানকার সংবাদ পত্র বা বিচার বিভাগ একে জিম্মি বা বেআইনী কিছুই বলেনি।আর আমরা বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করলে তো সংবাদ মাধ্যম একে মামা বাড়ীর আব্দার বলে উপহাস করতো।

২য়ত আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া-

সারাদেশে সবাই সুবোধ বালকের মতন আইন মেনে চলে শুধু ডাক্তাররাই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। কোন তরুন ডাক্তার কোন ভার্সিটিতে গিয়ে সেখানকার কোন তরুনীকে ইভটিজিং করলে সে ডাক্তার সেখান থেকে হাড়গোর অক্ষত অবস্হায় ফিরতে পারবে কি? সংসদে মারামারি হয় না? আদালতে বিচারকের দরজায় লাথি মারা হয় না? কারা এ সব করে? তারা কি আইনের লোক নয়? তারা কি অল্প বয়সী তরুন?

তবু এটি মেনে নেবো সরাসরি মার না দিয়ে ঐ ছেলেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলে, ঐ তরুন ডাক্তাররা বুদ্ধিমানের কাজ করতেন।কিন্তু বুদ্ধি সব সময় কাজ করে কি?

 

৪। আন্দোলন সফল না বিফল?

আগেই বলেছি দেশের সকল ডাক্তাররা বন্চনা,অপমানে অতিষ্ঠ। তারা একটি প্রবল ও সফল আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছে বহুদিন যাবৎ।কিন্তু আন্দোলন তো হয়, কোন না কোন নেতৃত্ব দিয়ে

( আমাদের মতন ছা- পোষা লোকেরা লিখতে পারি,স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে পারি, কিন্তু আন্দোলন করতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বা প্রয়োজনের তাগিদে গড়া উঠা নতুন তেজী,বেগবান কোন প্লাটফর্ম অত্যাবশ্যক)।

প্রশাসন হটকারি সিদ্ধান্ত নেওয়াতে, ইন্টার্নদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাওয়াতে আমরা একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন জেগে উঠতে দেখলাম।তাই আশাহত সকল চিকিৎসক নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো , এই আন্দোলন দিয়েই এবার অন্তত আমাদের সব দাবী আদায় করে ঘরে ফিরবো।

তবে বাস্তবতা কি?

শক্তিশালী আপোষহীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকলে, প্রচন্ড বৈরী আমলাতন্ত্র, সংবাদ মাধ্যম ও সরকারকে বাগে আনা কি এতো সহজ?

কিছুদিন আগেই কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রনালয় সহ পে- স্কেল বিরোধী আন্দোলনে বিএমএ সহ পুরো প্রকৃচি কি ঘোড়ার ডিম অর্জন করেছিল?। কেন করতে পারেনি?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মর্যাদা ঠিকই আদায় করে নিয়েছে।ডাক্তারদের কি সে রকম শক্ত মেরুদণ্ড ও মর্যাদাবোধ আছে যে তারা মর্যাদা আদায় করে নেবে?

আর ইন্টার্নদের কি দায় পড়েছে যে তারা ডাক্তার সমাজের সকল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারের রোষানলে নিজেদের সপে দিয়ে হয়রানির সম্মুখীন হবে? তখন তাদের বাচাতে কে এগিয়ে আসবে?

তার পরেও আন্দোলনে যতটুকু অর্জিত হয়েছে একে খাটো করে দেখার উপায় নেই। মনে করার কারন নেই প্রশাসন দয়া করে আপোষ করেছে। কেননা-

 

৫। ডাক্তার বনাম বিএমএ এর রয়েছে ঐতিহাসিক ও সফল আন্দোলনের ঐতিহ্য :

এরশাদ সরকার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ডাক্তারদের আন্দোলন কি? ডা. মিলনের আত্মাহুতি স্বৈরাচার পতনে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছে।অতীতে বিএমএ ছিল সকল সরকারের জন্য আতঙ্কের ব্যাপার।

যারা বলে জনগনকে জিম্মি করে আন্দোলন করা অনুচিত তারা ভালো করেই জানে, কোন পেশাজীবীদের আন্দোলনে জনজীবনে কতটুকু প্রভাব পড়বে।সরকার ও ভালো করে জানে কারা ও কোন আন্দোলন গতি পাবে,সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে।মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় জানু রাজনীতিবিদ। উনি ” হাওয়ার” গতি বুঝতে ভুল করার কথা নয়।দক্ষতার সহিতই তিনি পরিস্হিতি সামাল দেওয়ার জন্য যা কিছু করার,যে ভাবে করার তা করেছেন।তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত ধারনা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন।কেননা তিনি গন মানুষের সেন্টিমেন্ট সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারেন ও সেটিকে সম্মান করেন।

( তবে ছাত্রলীগের সহায়তা ছাড়া আমাদের নেতাদের সরব ও প্রকাশ্য তত্বাবধানে ফয়সালাটা হলে উনারা যেমন সম্মানিত হতেন,তেমনি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে ডাক্তার সমাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতো।ব্যাপারটি উইন উইন সিচুয়েশন হলে ভালো হতো।প্রশাসন ডাক্তার কমিউনিটিকে গুরুত্ব দেয়, মর্যাদা দেয়, নিচক দয়া করে না,আমরা এটি দেখতে চেযেছিলাম)।

তদুপরি আন্দোলন সফল না ব্যর্থ তা মূল্যায়নে তরুন ডাক্তার ভাইদের বলছি- সফলতা মানে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যে পৌছানো নয়,সফলতা হচ্ছে সে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য অবিরাম যাত্রা( জার্নি)।অনেকে বলবেন এ সব মনভুলানো কথা তাদের জন্য বলছি।

 

৬। ডাক্তাররা পারবে,বিশেষ করে তরুন ডাক্তাররা:

ডাক্তার সমাজ এতোদিন শুধু প্রতিক্রিয়া মূলক আন্দোলন করেছে।তাদের যৎসামান্য যতটুকু ছিল প্রশাসন বিভিন্ন সময় সে অধিকারগুলোও ছিনিয়ে নিতো।আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া করে সে ছিনিয়ে নেওয়া অধিকার বা সম্মান ফেরত পেতে চাইতাম।কখনোকখনো ছিটেফোঁটা কিছু ফেরত পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু কখনো পেশা হিসেবে ডাক্তারদের উচ্চ মর্যাদা, সুযোগ সুবিধা পাওয়ার যে কথা সেটি আদায়ে কোন ইতিবাচক, প্রো- একটিভ আন্দোলন আমরা কখনো করিনি।

স্বতন্ত্র বেতন স্কেল,ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি, কৃত্য পেশা ভিত্তিক মন্ত্রনালয়,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহ তথাকথিত ক্যাডার বাদ দিয়ে মর্যাদা সম্পন্ন স্বতন্ত্র অবস্হান,সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় রাস্ট্রীয় আইন( যেমন বিচারকরা পেয়ে থাকেন) – ইত্যাদি আদায়ে ইতিবাচক আন্দোলন আমরা কবে দেখবো?

হ্যা স্বপ্ন যদি দেখুন এরকম স্বপ্ন দেখুন,দুংসপ্ন নয়।দুঃসপ্ন হচ্ছে যা সামান্য আছে সেখান থেকেও কিছু ছিনিয়ে নিলে,হারালে বা অপমান অপদস্ত হলে তাৎক্ষনিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া করা।সেটি করতে হবে প্রানের দায়ে।কিন্তু মর্যাদা, অধিকার অর্জন করতে হবে প্রো একটিভ, লক্ষ্যাভিমুখী আন্দোলন দিয়ে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?

 

 

৭। চাই বিকল্প ” তরুন ডাক্তার পরিষদ “:

বর্তমান নতজানু,সুবিধাবাদী অবস্হার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত, এ তরুনরাই আমাদের এক মাত্র ভরসা।তোমরা ডা. মিলনের উত্তরসূরি। দল- মত- পথ নির্বিশেষে একটি কার্যকর বিকল্প প্লাটফর্ম তোমরাই তৈরী করতে পারো। যারা শুধু পেশার অধিকার,মান মর্যাদা নিয়ে কাজ করবে।

 

তার সূচনা তোমরা করে ফেলেছো।এখানেই থেমে যাবে না।এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।” আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, বঙ্গবন্ধুর সেই অবিস্মরণীয় বানী মনে রেখো “যার যা কিছু আছে” তাই নিয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।

 

 

 

 

11113936_637490839720563_7992257861849477311_n

লিখেছেন ঃ ডা. তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক-জাতীয় মানসিক হাসপাতাল ।

 

 

 

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইনফার্টিলিটি নিয়ে ওজিএসবি বরিশাল'র সিএমই অনুষ্ঠানের আয়োজন

Fri Mar 10 , 2017
গতকাল বৃহস্পতিবার, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে  ” Management of infertility” নিয়ে  OGSB Barisal আয়োজন করল একটি সিএমই অনুষ্ঠানের।   অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ক্যাপ্টেন (অব:) ডাঃ সিরাজুল ইসলাম । এছাড়া প্রফেসর ডাঃ লায়লা আরজুমান্দ বানু, প্রফেসর ডাঃ কোহিনূর বেগম, প্রফেসর ডাঃ রাশিদা বেগম, এবং প্রফেসর ডাঃ খালেদা খানম এতে প্রধান বক্তা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo