আল্ট্রাসনোগ্রাফির ডাক্তার ও রোগীদের উদ্দেশ্যে

১৩ এপ্রিল, ২০২০:

ডা. শাহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি

করোনা যেহেতু এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে এবং শতকরা ৮০ ভাগ রোগীই উপসর্গ প্রকাশ করে না, সেহেতু -কোন রোগী, এই ভাইরাসের বাহক, কেউই তা হলফ করে বলতে পারবেন না। সুতরাং একদম ইমার্জেন্সি ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হবে- ডাক্তার, ডাক্তারের সহকারী, রোগী, এমনকি ঐ হাসপাতালের সমস্ত লোকের জন্য- জেনে-শুনে ও বুঝে আত্নহত্যা করার সামিল।

কেনো?
তা একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে- রোগী, ডাক্তার, রোগীর এটেন্টডেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য।

১) আল্ট্রাসনোগ্রাফির ক্ষেত্রে, রোগী ও ডাক্তারকে অত্যন্ত কাছাকাছি থাকতে হয়, কারণ রোগীর পেটে প্রোবটি বসাতে হয়। এতে করোনা মোকাবিলায় যে শারীরিক দুরত্ব প্রয়োজন, তা কোনোভাবেই রাখা সম্ভব হয় না।

২) কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর মাস্ক থাকলেও, বেশিরভাগ রোগীরই মাস্ক থাকে না।

৩) রোগীর হাত অরক্ষিত থাকে, সাথে শরীরও।

৪) যে প্রোবটি দিয়ে আল্ট্রা করা হয়, সেটা পরবর্তী রোগীর জন্য অনিরাপদ হতে পারে।

৫) রোগীকে যে সহকারী রেডি করেন তিনিও পরবর্তী রোগীর জন্য অনিরাপদ হয়ে যান।

৬) রোগী যে বেডে শোয়, সেই বেডও, পরবর্তী রোগীর জন্য অনিরাপদ হয়ে যায়।

৭) রোগী উঠা-নামায়, আসা যাওয়ায়, যতজনের এবং যতকিছুর সংস্পর্শে আসে সবই তখন অনিরাপদ হয়ে যায়।

৮) এরপরেও রোগীর হাঁচি, কাশি, জ্বর বা করোনার যে কোনো উপসর্গ থাকলেতো আর কোনো কথাই নাই, তখন সবই অনিরাপদ।

৯) কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রোগী আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য তথ্য গোপন করবে। ভেবে দেখুন, তথ্য গোপনের জন্যই নারায়নগঞ্জে, আজকে এই ভয়াবহ অবস্থা, যা সারাদেশেই বর্তমানে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কি ভয়ংকর ভেবে দেখেছেন?

এখন করনীয়ঃ

১) উপদেশকারী ডাক্তারের ক্ষেত্রেঃ
কোনো ইমার্জেন্সি প্রয়োজন ছাড়া রোগীকে আল্ট্রাসনোগ্রাফির উপদেশ লিখবেন না (প্লিজ)।

২) রোগীর ক্ষেত্রেঃ একদম ইমার্জেন্সি ছাড়া এবং নিজের ইচ্ছায় কখনো আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে যাবেন না।

৩) হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রেঃ

  • রোগীসহ সকলকে যতটুকু সম্ভব, জীবানুনাশক দিয়ে হাত, পা ধোয়ার ব্যবস্থা, সম্ভব হলে শরীরে স্প্রে করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • কোনো রোগী/লোককেই মুখের মাস্ক ছাড়া প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
  • অবশ্যই, অবশ্যই এবং অবশ্যই প্রতিবার, আল্টাসনোগ্রাফির বেড, রোগীকে
    শোয়ানোর আগে ও পরে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে দিতে হবে/নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিতে হবে।

৪) ডাক্তার এবং সহকারীকে অবশ্যই ওয়ান টাইম ব্যবহারযোগ্য গ্লোবস ব্যবহার করতে হবে এবং প্রতি রোগীর পরে সেটা ফেলে দেয়াই শ্রেয় (যেহেতু দাম বেশি না)

৫) প্রোব প্রতি রোগীর পরে নিরাপদ ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।

এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকলে রোগী এবং ডাক্তার উভয়ই ভয়ংকর বিপদে পরে যেতে পারেন। এবং উভয় পক্ষকেই প্রতিষ্ঠানের অপারগতায় কিংবা অব্যবস্থাপনায়, আল্ট্রাসনোগ্রাফি না করাই উত্তম।

বিশ্লেষণঃ
করোনা ভাইরাস, কোনো উপসর্গ ছাড়াই শতকরা ৮০ ভাগ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ১৪ কিংবা তার বেশিদিনও আপনার শরীরে বাসা বেধে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি সম্পুর্ন সুস্থ থাকবেন। সুতরাং আপনি হাসপাতালে করোনা উপসর্গ ছাড়া, সুস্থ শরীরে আসার অর্থ এই নয় যে, আপনি করোনা ভাইরাস মুক্ত।
এমতাবস্থায় আপনি অরক্ষিত আল্ট্রাসনোগ্রাফির বেডে শুয়ে, আপনি (রোগী) সুস্থ হলেও পূর্ববর্তী রোগী থেকে ভাইরাস নিয়ে যেতে পারেন কিংবা আপনি ভাইরাস বহনকারী হলে, পরবর্তী রোগীর জন্য সেই ভাইরাসটি রেখে যেতে পারেন। একই রকম ঘটনা, ঘটতে পারে ডাক্তার ও তাঁর সহকারীর ক্ষেত্রে। এমতাবস্থায়, আপনি ডাক্তারের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভয়ংকর বিপদে ফেলে দিতে পারেন। যেহেতু ডাক্তারের/সহকারীর ক্ষেত্রে কোনোভাবেই শারীরিক দুরত্ব রাখা সম্ভব নয়।
সেহেতু শুরুতেই বড় ধাক্কাটা উনারাই খাবেন। এবং উনারা হয়ে যাবেন সুপারস্প্রেডার।

উপসংহারঃ
হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উপোরোক্ত অব্যবস্থাপনায় আপনি অপারগতা প্রকাশ করলে আপনার চাকুরীটা (স্থায়ী/অস্থায়ী) চলেও যেতে পারে।

শেষ কথাঃ
ইমার্জেন্সি না হলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি না করাই ভালো। ডাক্তার এবং রোগী উভয়ের জন্যই।

রেজাল্টঃ
আক্রান্ত হলে লকডাউন।

Publisher

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাংলাদেশে চালু হলো ৪৪টি করোনা টেস্টিং বুথ

Mon Apr 13 , 2020
১৩ এপ্রিল, ২০২০ বেসরকারী সংস্থার সহায়তায় সারা দেশে কোভিড -১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশেও দক্ষিণ কোরিয়ার “কিয়স্ক” মডেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা অন্যান্য ব্যক্তিগত অথবা বেসরকারী সংস্থাগুলিকে এ জাতীয় ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি। অবশ্যই, এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের পরীক্ষার সুবিধার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo