‘আম্পান’কে জয় করা একটি মেয়ে

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ মে, ২০২০, শুক্রবার

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বেশ কিছু অঞ্চল। বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২৯ জন প্রাণ হারায়। এ সকল খবর আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি টেলিভিশনে, ইন্টারনেটে।

‘INTERNATIONAL FEDERATION OF RED CROSS AND RED CRESCENT SOCIETY’ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি মানবিক সহায়তামূলক সংগঠন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে প্রায় ১৯২ জন সাংগঠনিক সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে ‘রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’ র যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সন হতে। আজ জানব ‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’ র সাথে কাজ করা একটি ছোট্ট মেয়ের গল্প, তার সাহসিকতার কথা।

ফারহানা হায়দার, গ্রীনলাইফ মেডিকেল কলেজের ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। সেই সাথে সে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, নোয়াখালী ইউনিট এর একজন রেড ক্রিসেন্ট যুব সদস্য। অদম্য সাহসী এই মেয়েটি  ঘূর্নিঝড় ‘আম্পান’ এর মত শক্তিশালী দূর্যোগ সম্পর্কে উপকূলবর্তী সাধারণ মানুষকে সতর্কতা করতে কোনরকম দ্বিধা না করে মাঠে নেমে পড়ে।

তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানব। সে জানায়, “রেড ক্রিসেন্ট এর সদস্য হওয়ার সুবাদে আগেও বেশ কিছু ফিল্ড ওয়ার্ক করি কিন্তু ‘আম্পান’ এর দুর্যোগকালীন সময়টা ছিল যেমন থ্রিলের তেমনই ভয়ের। বাসা থেকে অনেক কষ্টে অনুমতি পেয়েছি এবং আমি কৃতজ্ঞ এ ধরনের কাজের সুযোগ পেয়ে। ২০ মে সকাল ৭ টায় আমাদের কার্যালয়ে যাই। সেখানে অন্যান্য সেচ্ছাসেবকদের সাথে মিলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া অসহায় মানুষের জন্য প্রায় ৩৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করি। এক একটা প্যাকেটে ছিল চিড়া, চিনি, বিস্কুট, স্যালাইন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, টিস্যু এবং ২ লিটার করে বিশুদ্ধ পানি।  এরই মাঝে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। ৯ নম্বর বিপদ সংকেত জানাতে আমাদের মুভ করতে বলা হয়। আমাদের কাজ ছিল মূলত সুবর্নচর এলাকার ৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র কভার করা। যুবপ্রধান আব্দুল আজিজ পুলক এর নেতৃত্বে আমরা ৭ টি গ্রুপে ভাগ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মোটামুটি সুরক্ষিত পোশাক পড়েই তৌহিদ ভাইয়ের টিমের সাথে আমিও বের হলাম। প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের শেল্টার আকরাম বাজার, ৮ নং সুবর্নচরে পৌঁছে দেখি মানুষজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি। সময় নষ্ট না করে মাইকিং এ বেড়িয়ে পড়লাম। সেই মুহূর্তে ঝড় আর বাতাসের বেগ তীব্রতর হতে থাকায় গাড়ি চলাচলের সুযোগ হলোনা। প্রায় ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে যখন নদীর ধারে পৌঁছাই তখন ভয় হতে শুরু করে। প্রচন্ড বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে, চোখ খুলতে পারছিলাম না। ভয়ের মাঝে তৌহিদ ভাই আমাকে সাহস দিলেন, একবার ভেবে দেখ এই অল্প সময়ে আমাদের এত কষ্ট হচ্ছে, যারা আটকা পড়ে থাকবে তাদের কেমন হবে? আমাদের একটুখানি এনাউন্সমেন্টে কেউ যদি এগিয়ে এসে প্রাণে বেঁচে যেতে পারে! আর কোন চিন্তা না করে যথাসম্ভব এনাউন্সমেন্ট করে চলে এলাম আশ্রয়কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে অনেক মানুষ এসে পৌঁছেছে এখানে। এরপর রিলিফ দিতে এসে দেখা যায় রোজা রেখে, অনাহারে, অসহায় মানুষগুলোর আহাজারি। সারাদিন পর ইফতারের সময়ে এসে দেখি পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। ক্লান্তি নিয়ে পানি মুখে দিতে দিতে একটি ছোট্ট মেয়ে এসে তাকে রিলিফে দেওয়া স্যালাইনের প্যাকেটটি আমার দিকে এগিয়ে দেয়। খুব ভাল লাগে সেই সাথে অবাকও হই, জানিনা এই দুর্যোগ শেষে এই ছোট্ট মেয়েটি তার ঘর তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবে কিনা, কিন্তু তাও ভবিষ্যতের মায়া ত্যাগ করে সেও ভাবছে আমাদের নিয়ে, সত্যিই মানুষ অসাধারণ। চোখ বন্ধ করে ওখানে বসেই মানুষগুলোর হেফাজতের জন্য দোয়া করলাম। একসময় ঝড়ের তান্ডব থেমে যায়। আমরা ফিরে যাই আমাদের নীড়ে, ফিরতে ফিরতে ভাবনায় কেবল সেই অসহায় মানুষ আর ছোট্ট মেয়েটির মুখটি ভেসে উঠে।”

প্রতিটা সেচ্ছাসেবীর একটি গল্প আছে। দুর্যোগে মানুষের ঘর হারানো, স্বজন হারানো খবরগুলো আমাদের চোখ ভিজিয়ে দেয়, কিন্তু কিছু মানবিক চিত্র হয়তো কোন পত্রিকায় আমরা পাইনা যাদের কারণে কেউ হয়তো তার জীবন ফিরে পেয়েছে, তার স্বজনকে ফিরে পেয়েছে। এই গল্পগুলো আমাদের দেশের সাফল্যগাঁথা হোক।

সবশেষে কবি নজরুল এর ভাষায় বলতে হয়,

“আমি চির-বিদ্রোহী বীর,   
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!”

জয় হোক তারুণ্যের, জয় হোক মানবতার।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ তাসনিম সানজানা কবির খান

Sarif Sahriar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইদ উপলক্ষে শতাধিক পরিবারকে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের সহায়তা

Fri May 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ মে ২০২০, শুক্রবার: কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকেই অসহায় কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। পবিত্র রমজানের শুরুতেই মাসব্যাপী কর্মহীন নির্মাণ শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তার ঘোষণা দেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান। তারই প্রেক্ষিতে পবিত্র ইদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে কর্মহীন অসহায় ও দরিদ্র শতাধিক […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo