রবিবার,০৪ মে ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি প্রায় দুই দশক ধরে ইনজেকশন দিয়ে নিজের শরীরে একটু একটু করে সাপের বিষ ঢুকিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ওই ব্যক্তির রক্তে ‘তুলনাহীন’ এক অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়েছে।
আলোচিত ব্যক্তির নাম টিম ফ্রিড। বিজ্ঞানীরা প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, টিমের রক্তে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি প্রাণঘাতী মাত্রায় প্রয়োগ করা বিভিন্ন প্রজাতির বিষ প্রতিরোধ করতে পারে।
বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে নির্দিষ্ট প্রজাতির বিষাক্ত সাপ কামড়েছে অ্যান্টিভেনমের সঙ্গে তার সঙ্গে মিল থাকতে হয়।কিন্তু ১৮ বছর ধরে ফ্রিড যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সব ধরনের সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে একটি সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর সাপের কামড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর তিন গুণ মানুষ সাপের কামড় খেয়ে অঙ্গচ্ছেদ করতে বাধ্য হন বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। ফ্রিড এই সময়ে মোট ২০০ বারের বেশি কামড় খেয়েছেন এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে ৭০০ বারের বেশি শরীরে বিষ ঢুকিয়েছেন। তিনি শরীরে যেসব বিষ প্রয়োগ করেছেন তার মধ্যে কেউটে, মাম্বাসহ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী কয়েকটি সাপের বিষ ছিল।সাপ ধরার সময় নিজের সুরক্ষার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ফ্রিড প্রাথমিকভাবে এ কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি নিজের এসব কার্যকলাপ ভিডিও করে তা ইউটিউবে পোস্ট করতেন।
তবে এ কাজ করতে গিয়ে শুরুতেই তাঁর প্রাণ যেতে বসেছিল বলে জানান সাবেক এই ট্রাক মেকানিক। বিবিসির বরাতে ফ্রিড বলেন, পরপর দুটি কেউটের কামড় খাওয়ার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মরে যেতে চাইনি। আমি আমার একটি আঙুল খোয়াতে চাইনি। আমি আমার কাজ হারাতে চাইনি।’ফ্রিডের লক্ষ্য ছিল বিশ্বের জন্য (সাপের কামড়ের) আরও ভালো চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন করা। কোথা থেকে এ কাজের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার ব্যাখ্যা তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার রোজকার অভ্যাস হয়ে ওঠে এবং আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করতে থাকি, চেষ্টা করতে থাকি—ওই সব মানুষের জন্য যারা আমার থেকে আট হাজার মাইল দূরে থাকে, যারা সাপের কামড়ে মারা যায়।’
বর্তমানে ঘোড়ার মতো প্রাণীর দেহে সাপের বিষ একটু একটু করে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। ওইসব প্রাণীর শরীরে থাকা প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ওই বিষের বিরুদ্ধে লড়াই করে অ্যান্টিভেনম তৈরি করে। পরে ওই সব প্রাণীর শরীর থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে তা অ্যান্টিভেনম হিসেবে ব্যবহৃত হয়
কিন্তু ভেনম (বিষ) এবং অ্যান্টিভেনম (বিষ প্রতিষেধক) খুব কাছাকাছি হতে হয়। কারণ, একটি বিষাক্ত প্রাণীর কামড় থেকে আরেকটি বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ে বিষের ধরন এবং মাত্রায় পার্থক্য রয়েছে।
এমনকি একই প্রজাতির প্রাণী থেকে তৈরি অ্যান্টিভেনমের মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য থাকে। যেমন-ভারতে সাপের বিষ থেকে তৈরি অ্যান্টিভেনম শ্রীলঙ্কায় একই প্রজাতির সাপের কামড়ের বেলায় প্রতিষেধক হিসেবে খুব একটা কার্যকর নয়।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মেহরুবা আক্তার