সম্প্রতি বহুল আলোচিত সেই মশার আদ্যোপান্ত

এই পোকার ভয়ে বেশ কিছু চিন্তাযুক্ত লেখালেখি হয়েছে দেখে ব্যাপার টা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য লিখছি। ঢাকা শহরে হঠাৎ প্রকোপ বাড়াতে সবার ভয় লাগছে, রাজধানী বলে কথা কি না তাই!!

দুচারটা কথা বলি। প্রথম কথা হলো এটা মশা না, এরা অনেকটা মাছি বলা যায়। রক্তপায়ী পতঙ্গদের প্রানীবিজ্ঞান এ মিজ(midge) বলা হয়।

এই ‘মিজ’রা দুই রকম। কেউ কেউ অনেক উপরে উড়তে পারে এদের Highland Midge বলে, আবার কেউ কেউ কয়েক ফুটের বেশি পারেনা এদের lowland midge বলে।

পতঙ্গ জগতের শ্রেণিবিন্যাসে মিজদের পরিবারের একটা কঠিন নাম আছ “সেরাওপোগোনিডি” ceraopogonidae। এই পরিবারে ৫০০০ বর্গ আছে। আমরা এই পোকাকে যারা ভয়ানক কালাজ্বরের বাহক sand fly ভাবছি তাদের জন্য সুখবর হলো স্যান্ড ফ্লাইরা lowland midge এবং অনেকটা এন্ডেমিক। কিন্তু এই কালো পোকা আমাদের “মশা” নামক পরিচিত পোকার মতই highland midge এবং ওরিয়েন্টাল অঞ্চলে খুব বেশি দেখা গেলেও পৃথিবীর প্রায় সবখানেই আছে। হাইল্যান্ড মিজরা ল্যাম্পপোস্টের চারপাশে ঘুরতে থাকা অসংখ্য পোকার ভেতরে একদম সুলভ। কোথাও হাঁটার সময় মাথার উপরে ঝাঁক বেঁধে ঘুরতে থাকা পোকা গুলোও সেরাওপোগোনিডি পরিবারের।

সেরাওপোগোনিডি পরিবারের ৫০০০ গণের ভিতরে আমাদের এই আলোচ্য পোকা leptoconops গণের অন্তর্ভুক্ত নিরীহ মাছি।

মানুষ এদের কামড়ে বিরক্ত হয়ে নাম দিয়েছে নাট(gnat)।এই আলোচ্য কালো সদস্যকে black gnat বলে। এর খুব কাছাকাছি একটা জাতিভাই হলো fungus gnat বা winter gnat। আবার কিছু আছে যাদের চোখে দেখা যায়না কিন্তু কামড় বিষাক্ত। এদের no see ums বলে। আবার কিছু gnat আছে যাদের কামড়ে কোন অনুভুতি হয়না। এদের non biting gnats বলে। বাকিরা সবাই biting gnat।

আমরা যেই স্যান্ড ফ্লাই মনে করে এদের দোষারোপ করছি এরা তেমন কিছুই না। তেমন কোন রোগও ছড়ায় না কিন্তু কামড় খুব জ্বালাময়। এগুলা শীতকালে উষ্ণতার সন্ধানে ঘরের ভেতর বেশি আসে আবার গ্রীষ্মকালে তেমন থাকেনা। বেচারারা বাঁচার দায়ে রক্তপায়ী হলেও আজ পর্যন্ত বদমাইশি করে কোন রোগ ছড়াইসে বলে ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।

আপনারা এই পোকা থেকে বাঁচতে চাইলে সাধারণ মশার মতো ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে এর দমনের জন্য বিভিন্ন সাইটে একটা সহজ উপায় পাওয়া যায়। এটা ঠিক বেগুন ক্ষেতে পোকা দমনের মতোই। এক গামলায় পানিতে ডিশ ওয়াশিং লিকুইড ও ভিনেগার মিক্স করে তার মাঝে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর অন্ধকার করে রেখে দিলেই হলো। এরা আলো আর তাপ পছন্দ করে তাই উড়তে গিয়ে ক্ষার এসিডের মিশ্রণের পৃষ্ঠটানহীন পানিতে পড়েই ডুবে যায়। এটা আমি নিজে পরীক্ষা করিনি তবে বিভিন্ন সাইটে ইফেক্টিভ বলে লেখা আছে।

যেহেতু এরা রোগ ছড়ায় না তাই মিজ দের নিয়ে বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।

লেখক:ডাঃআসির মোসাদ্দেক সাকিব

চমেক ১১-১২

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটারঃ উর্বী সারাফ আনিকা
৫ম বর্ষ
রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শিশু গবেষনায় সুখবরঃ বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক এসোসিয়েশান এর ৫৫ লাখ টাকার গ্রান্ট

Fri Nov 30 , 2018
একটি দেশ কতো উন্নত তা কিছু সূচকের উপর নির্ভর করে, যেমন – মাথাপিছু আয়,শিশু মৃত্যু হার,বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। আরেকটি বিষয় দিয়েও উন্নত সমাজকে নির্ধারণ করা যায়, সেটি হচ্ছে রিসার্চ । সেটি কতো বেশি হচ্ছে এবং কোন পর্যায়ে হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ও অনেকগুলো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কতৃক নতুন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo